পবিত্র কোরআনের সূরা লুকমানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
তিনি (আল্লাহ) মহাকাশসমূহ সৃষ্টি করেছেন কোন রকম স্তম্ভ ছাড়াই, যা তোমরা দেখতে পাও। তিনিই (আল্লাহ) পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে সর্বপ্রকার জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রকার উত্তম জোড়া উৎপাদন করেন। এ আল্লাহর সৃষ্টি, তিনি ব্যতীত অন্যরা কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও। বরং সীমালঙ্ঘনকারীরা তো সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা এই বিশাল আকাশটি সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ছাড়াই। একটি প্যান্ডেল তৈরি করতে হলে শত শত খুঁটির প্রয়োজন দেখা দেয়; কিন্তু এই বিশাল আকাশটি খুঁটি ছাড়াই আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন। بِغَيْرِ عَمَد تَرُونَها লুকমানের এই আয়াতের দু'টি অর্থ হতে পারে। একটি অর্থ হচ্ছে তোমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছো যে, কোন স্তম্ভ ছাড়াই আল্লাহ তায়ালা আকাশটাকে ঝুলিয়ে রেখেছেন। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, এমন স্তম্ভ আছে, যা তোমরা দেখতে পাওনা। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু বর্তমান যুগের পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে যদি আলোচনা করা হয় তাহলে এভাবে বলা যেতে পারে যে, সমগ্রবিশ্ব, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, এগুলোর একটি থেকে আরেকটি যেন ছিটকে না পড়ে সে জন্য একটি পদ্ধতি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা স্তম্ভ ছাড়াই কুদরতের ওপর রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يُمْسِكُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ أَنْ تَزُولا
নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা নভোমণ্ডল এবং ভূ-মণ্ডলকে এমনভাবে ধারণ করে রেখেছেন, যেন একটি থেকে আরেকটি বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়। (সূরা ফাত্বির-৪১)
এ পৃথিবী থেকে সূর্য অনেক বড়। সে সূর্যের চেয়ে তারকাগুলো আরো বড়। আবার তারকাগুলোর চেয়ে ছায়াপথ আরো অনেক বড়। এই বিশাল বিশাল গ্রহ- উপগ্রহগুলো আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে একটিকে আরেকটির সাথে আটকিয়ে রেখেছেন মধ্যাকর্ষণ শক্তি দিয়ে। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্যার আইজ্যাক নিউটন সর্বপ্রথম মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্মের অন্তত হাজার বছর পূর্বে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি কোন বিজ্ঞানাগারে লেখাপড়া করেননি, রিসার্চ করেননি, তাঁর মুখ থেকে মধ্যাকর্ষণের কথা আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে ঘোষণা করেছেন।
এই মধ্যাকর্ষণ দিয়েই চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র, সৌররাজি একটির সাথে আরেকটিকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে, যেন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে না যায়। আল্লাহ তায়ালা মহাশূন্যে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে যদি সূর্যের কথাই বলা যায়, তাহলে সূর্য এত বিশাল যে, পৃথিবীর চেয়ে তের লক্ষ গুণ বড়। এ রকমের তিন কোটি সূর্যকে খেয়ে হজম করতে পারবে এমন আরো রয়েছে গ্যালাক্সির ভেতরে একটি দুটি নয়, হাজার হাজার সূর্য। এই সূর্য হচ্ছে সে সূর্য যা পৃথিবীর মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য আজ পর্যন্ত মানবগোষ্ঠী যত শক্তি ব্যর করছে, সূর্য তার চারদিকে ঘুরতে প্রতি সেকেন্ডে সে পরিমাণ শক্তি খরচ করছে। শুধু তাই নয়, এই জ্বলন্ত সূর্যের সম্মুখ ভাগ থেকে এক প্রকার জ্বালানি গ্যাস নির্গত হয়। এগুলো প্রতি সেকেন্ডে ষাট হাজার মাইল বেগে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এই গ্যাস যদি পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করতো, তবে গোটা পৃথিবী জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যেত। কিন্তু প্রতি সেকেন্ডে ষাট হাজার। মাইল বেগে যে গ্যাস বের হচ্ছে- কোন্ এক অদৃশ্য শক্তি ষাট হাজার মাইল বেগে সে গ্যাসকে আবার সূর্যের দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। যেন সৃষ্টিজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْق غافلين
আমি আমার সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে অমনোযোগী নই। এ পৃথিবীতে চন্দ্র এবং সূর্যকে পরিমাপ অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন। বিজ্ঞানীরা বলেছে সূর্য যেখানে দাঁড়িয়ে আছে এর থেকে যদি কয়েক ডিগ্রী ওপরে উঠে যায় তাহলে গোটা পৃথিবী বরফে পরিণত হয়ে যাবে। সমস্ত প্রাণীজগৎ বরফ হয়ে যাবে। আর যদি কয়েক ডিগ্রী নিচে নেমে আসে তাহলে গোটা পৃথিবী জ্বলে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যাবে।
চাঁদ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে যদি কিছু অংশ ওপরে উঠে যায় তাহলে গোটা পৃথিবী মরুভূমি হয়ে যাবে। আবার যদি কিছু অংশ নিচে নেমে আসে তাহলে গোটা পৃথিবী পানিতে তলিয়ে যাবে। هَذَا خَلْقُ الله এটাই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি যেন পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করতে না পারে, সে জন্য ওজোন স্তরে লেয়ার দিয়েছেন। এই লেয়ার আছে বলেই আলট্রাভায়োলেট-রে পৃথিবীর মাটিতে পৌঁছতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা গোটা সৃষ্টি জগতকে রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন; কিন্তু ওজোন স্তরে ফাটল ধরেছে। কারণ হচ্ছে আমরা পরিবেশ দূষিত করেছি, পাহাড়গুলো কেটে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি পাহাড়গুলোকে গেড়ে দিয়েছি যেন যমীন নড়া-চড়া করতে না পারে। আর মানুষ পাহাড় গাছ-গাছালি কেটে নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ সে পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গাছ লাগালে সদকার মত সওয়াব মিলে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَمَا أَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيبَةٍ فِيْمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ
তোমাদের ওপরে যত বিপদ আসে সমস্ত বিপদ তোমাদের দু হাতের উপার্জন করা, তোমরা যা উপার্জন করো সেটাই তোমাদের কাছে ফিরে আসে। আল্লাহর নবী বলেছেন, গাছ কাটাতো দূরের কথা, গাছের পাতাটিও ছিঁড়বে না। প্রয়োজনে গাছ কাটতে পার বিনা প্রয়োজনে গাছের পাতাটিও ছিঁড়বে না। কারণ গাছের পাতাগুলো আল্লাহর তাসবীহ পড়ছে। মহান আল্লাহ বলেন-
يُسَبِّحُ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
আকাশে এবং যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পাঠ করছে।
গাছ হলো মানুষের প্রাণ। গাছ অক্সিজেন ছাড়ে আর আমরা সে অক্সিজেন গ্রহণ করি। আর আমরা যেটা ছাড়ি সেটা হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড। আমরা কার্বন ডাইঅক্সাইড ছেড়ে দিয়ে গোটা পরিবেশকে দূষিত করে ফেলছি। দুনিয়ার কোন বিজ্ঞানী বা সরকার নেই যে, এ দূষিত কাবর্ন ডাইঅক্সাইডকে রিফাইন করে দূষণ মুক্ত করবে। গাছগুলোকে আল্লাহ তায়ালা এমন বন্ধু বানিয়ে দিয়েছেন। আমাদের জন্য যেটা বিষ গাছের জন্য সেটা খাদ্য। আমরা গাছ হতে অক্সিজেন গ্রহণ করে আমাদের বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড ছেড়ে দেই, গাছ ঐ বিষাক্ত অক্সিজেনকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। গাছের পাতার সবুজ রং আর সূর্যের তাপ দুটি মিলে এক প্রকারের রন্ধন ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গাছ ঐ কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে প্রতি মুহূর্তে অক্সিজেন তৈরি করে ছেড়ে দিচ্ছে। এগুলোকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করে গোটা মানব জাতির কল্যাণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে-
فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ
তিনি ব্যতীত অন্যরা কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও।
বিজ্ঞানীরা কয়েকটি জিনিস একত্র করে একটি জিনিস তৈরি করেছেন। কিন্তু মূল জিনিস হল আল্লাহ তায়ালার। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা একত্রিত হয়েও একটি চাল বানাতে পারবে না। একটি মুরগীর ডিম বানাতে পারবে না। বিজ্ঞানীরা যা কিছু তৈরি করে তার পেছনে মহান আল্লাহর তৈরি করা জিনিস না হলে বানাতে পারবে না। তওহীদের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ তাঁর নিজের সৃষ্টির উপমা দিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-- وَمَا اللَّهُ بِظَلَامٍ لِلْعَبِيْدٍ তিনি বান্দার ওপরে কখনো জুলুম করেন না। তিনি মানুষের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
أمَّنْ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَأَنْزَلَ لَكُمْ مِّنَ السَّمَاءِ مَاءًا فَأَنْبَتْنَا بِهِ حَدَائِقَ ذَاتَ بَهْجَةٍ مَا كَانَ لَكُمْ أَنْ تُنْبِتُوا شَجَرَهَا
কে সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও যমীন? কে আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন? অতঃপর তা দিয়ে মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করেন? তাঁর বৃক্ষাদি উদ্গত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। এ সকল কাজে আল্লাহ তায়ালার সাথে কি কোন অংশীদার আছে? বরং এরা সঠিক পথ থেকে সরে যাচ্ছে।
(সূরা নমল-৬০)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা নমল-এর ৬১ নং আয়াতে বলেন-
أَمَّنْ جَعَلَ الْأَرْضَ قَرَارًا وَجَعَلَ خَلَلَهَا أَنْهُرًا وَجَعَلَ لَهَا رَوَاسِيَ وَجَعَلَ بَيْنَ الْبَحْرَيْنِ حَاجِزًا -
কে এ যমীনকে বসবাসের উপযোগী করেছেন? কে এর মাঝে নদী-নালা প্রবাহিত করেছেন? কে তাতে সুদৃঢ় পর্বত ও দু'সাগরের মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন?
মহান আল্লাহ যমীনকে বসবাসের উপযোগী করেছেন। জমি এভাবে শক্ত করলেন না, যেন কোদাল দিয়ে খনন করে পিলার উঠাতে না পারে। আবার এমন নরমও করলেন না, যাতে কোন গাছ রোপণ করা না যায়। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-তোমরা কি দেখ না? তোমরা কি চিন্তা কর না? বীচি মাটির ভেতরে দিয়ে দিলে আর মাটি ফেটে গিয়ে নরম পাতা উদাত হয়ে গেল। মাটি থেকে কে এই পাতা উদ্গত করল? মাটি এমনভাবে সৃষ্টি করলেন যে, ছোট দু'টি পাতা মাটি ফেড়ে উপরে চলে আসতে পারে। আবার একশ' চল্লিশ তলা বিল্ডিং বানাচ্ছেন মাটি ধসে বিল্ডিং মাটির নিচে চলে যাচ্ছে না। এভাবে মাটিকে বসবাসের উপযোগী করে কে বানালেন? আল্লাহ বলেছেন আমি বানিয়েছি।
পানিকে আল্লাহ তায়ালা দু'ভাগে ভাগ করে দিলেন। একদিকে লোনা পানি, অন্যদিকে মিষ্টি পানি। তাও কি চোখে দেখো না? চোখে দেখে না নাস্তিক এবং মুরতাদরা, ওদের চোখে ধরা পড়ে না? কিন্তু ঈমানদারদের চোখে ঠিকই ধরা পড়ে। পৃথিবীর সমস্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় রেকর্ড করা হয় যে বইতে তার নাম গ্রীনিজ বুক। সে বইতে লেখা আছে যে, প্রশান্ত মহাসাগরের ভেতরে একটি নদী আবিষ্কার হয়েছে। সে নদীটি আড়াইশ' মাইল প্রস্থ চার হাজার মাইল দীর্ঘ। তার পানি মিষ্টি। চতুর্দিকের লোনা পানির সমুদ্রের মাঝখানে এই বিরাট নদী। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
مَرَجَ الْبَحْرَيْنِ يَلْتَقِيَانِ بَيْنَهُمَا بَرْزَخٌ لا يَبْغِيَانِ
তিনি প্রবাহিত করেন দু'টি সমুদ্র যারা পরস্পর মিলিত; কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রাহমান)
মাঝখানে কোন বাধা নেই। অথচ লোনা পানির কোন ক্ষমতা নেই মিষ্টি পানিকে লোনা বানায়। এগুলো চোখে দেখো না? মহান আল্লাহ বলছেন-
الَهُ مَعَ اللهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ
এই যে নদীর পানিকে আল্লাহ তায়ালা ভাগ করে দিলেন এগুলোর ব্যাপারে আল্লাহর সাথে কেউ শরীক ছিল? বরং তোমরা এ ব্যাপারটি অনুধাবন করো না, বুঝতে চেষ্টা কর না। (সূরা নমল)
মহান আল্লাহ বলেছেন-
أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ وَيَجْعَلُكُمْ خُلَفَاءَ الْأَرْضِ
এমন কে আছে যিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন যখন সে তাকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন। আর তোমাদেরকে দুনিয়ার খলীফা বানিয়ে দিয়েছেন। (সূরা নমল-৬২)
তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা। গভীর রাতে আপনি যে ক্রন্দন করেন, মামলা- মোকদ্দমায় পড়ে, ঋণগ্রস্ত হয়ে, রোগাক্রান্ত হয়ে, ব্যথা-বেদনা নিয়ে, অস্থির মন নিয়ে আপনি যে দোয়া করেন সে দোয়া তো আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কেউ শ্রবণ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, আমি সব দেখতে পাই, শ্রবণ করতে পারি। এমন কিছু নেই যা আমি দেখি না, শ্রবণ করি না। সমুদ্রের অতল তলদেশে শৈবালের সাথে লাগানো ছোট্ট একটি পোকা যা মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না, তাও আমি দেখি। আটলান্টিক মহাসাগরের অতল তলদেশে যদি ছোট একটি পোকা ক্ষুধার জ্বালায় চিৎকার করে, তাহলে পৃথিবীর কেউ সে চিৎকার শুনতে পায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আরশের মালিক আমি আল্লাহ সে পোকার চিৎকার শ্রবণ করি। পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে-
الهُ مَّعَ اللَّهِ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُونَ
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সাথে কি কোন অংশীদার আছে? তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। (সূরা নমল)
আজ মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছে কিন্তু উপকার কতটুকু তা আমাদেরকে দেখতে হবে। পৃথিবীর মানুষ যেখানে না খেয়ে মারা যাচ্ছে, যে অর্থ ব্যয় করা হলো মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য, সে অর্থ দিয়ে যদি বিদ্যুৎ তৈরি করা হতো তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া যেত। যে অর্থ দিয়ে মারণাস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে মানুষ মারার জন্য, সে অর্থগুলো যদি একত্রিত করা হত, তাহলে প্রতিটি বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেয়া যেত। মানুষ মারার জন্য যে সব অস্ত্র তৈরি করা হয়, সে অর্থ দিয়ে যদি পৃথিবীতে হাসপাতাল তৈরি করা হত তাহলে মানুষ আর বিনা চিকিৎসায় মারা যেত না। আজ অনর্থক অর্থ খরচ করা হয়। এই খরচ করার কি মূল্য?
হিমালয় পর্বতের ওজন কত তা বের করার জন্য অর্থ খরচ করার কোন যুক্তি নেই। আবার আটলান্টিক মহাসাগরে কত কোটি গ্যালন পানি আছে তা বের করার জন্য অর্থ ব্যয় করার কোনো যুক্তি নেই। এ ব্যাপারে লক্ষ কোটি ডলার খরচ করার কি মূল্য আছে? মানুষ মঙ্গল গ্রহে যায়, চাঁদে যায়। যাক্ না, কোন ক্ষতি নেই। যে গবেষণায় মানবতার কল্যাণ হয়, পৃথিবীর কল্যাণ হয়, অর্থ সেখানে খরচ করুক; কিন্তু পৃথিবীর একশ্রেণীর মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ যে, মানবতার কল্যাণে অর্থ খরচ করা হবে না। মহান আল্লাহ বলেন
- أَمَّنْ يَهْدِيكُمْ فِي ظُلُمَتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَنْ يُرْسِلُ الريح بشرًا بَيْنَ يَدَى رَحْمَتِهِ
আর কে জল-স্থলের অন্ধকারে তোমাদের পথ দেখান এবং কে নিজের অনুগ্রহের পূর্বাহ্নে বাতাসকে সুসংবাদ দিয়ে পাঠান? (সূরা নমল-৬৩)
কে তিনি? যিনি জলে, স্থলে, অন্ধকারে তোমাদেরকে পথ দেখান। সমুদ্রের ভেতরে নাবিকেরা যখন পথ চলে, দিনের বেলায় সূর্য দেখে নাবিকেরা পথ নির্ণয় করে; কিন্তু রাতের বেলায় অন্ধকারে নাবিকেরা যেন পথ হারিয়ে না ফেলে সে জন্য আমি আকাশকে তারকাখচিত করে রেখেছি। তারকা দেখে নাবিকেরা পথ নির্ণয় করে গন্তব্যে পৌঁছে যায়, পথ হারিয়ে যায় না। অন্ধকারের ভেতর আমিই তাদের পথ নির্ণয় করে দেই। পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে-
الهُ مَّعَ اللَّهِ تَعْلَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
ঐ আল্লাহর সাথে কি কোন শরীক আছে যে আল্লাহর সাথে উক্ত কাজে সহযোগিতা করেছে। যারা শিরক করছে তা থেকে আল্লাহ মুক্ত। (আন্ নামল-৬৫)
অর্থাৎ তিনি বৃষ্টি বর্ষণে বৃষ্টির আগে ঠাণ্ডা বাতাস দিয়ে বৃষ্টি আসছে এ সুসংবাদ প্রদান করেন। এ কাজের মধ্যে কি কেউ আল্লাহর শরীক আছে? মহান আল্লাহ বলেন-
الَهُ مَّعَ اللهِ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَدِقِينَ
আল্লাহর সাথে কি কোন অংশীদার আছে? যদি তোমাদের কাছে কোন দলীল থাকে তাহলে তা পেশ কর। (সূরা নমল)
আকাশ, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, গ্রহ, সৌর জগত, নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ইত্যাদি যা কিছু আমি বানিয়েছি এতে আমার সাথে কে শরীক আছে? যদি তোমাদের কাছে যুক্তি থাকে তাহলে তা পেশ কর। এদের কাছে যুক্তি হল আকাশ বলতে কিছুই নেই, স্রষ্টা বলতে কেউ নেই। (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
خَلَقَ اللَّهُ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ
আল্লাহই তো আসমান এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তায়ালার পুত্র-কন্যা কি করে হতে পারে? ইহুদী-খৃষ্টানরা দাবী করেছে আল্লাহ তায়ালার ছেলে আছে। খৃষ্টানরা আল্লাহর স্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) মহান আল্লাহ ছোট্ট একটি সূরার ভেতরে তাওহীদের কথা এমনভাবে পেশ করেছেন যে, গোটা পৃথিবীর মানুষ যদি হেদায়েত পেতে চায় তবে এ ছোট্ট সূরাই তাদের জন্য যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন-
قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ - اللهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
হে নবী আপনি বলে দিন! আল্লাহ এক এবং একক। তিনি অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তাঁকেও কেউ জন্ম, দেয়নি। আকাশ এবং যমীনে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। (সূরা ইখলাছ)
আল্লাহ তায়ালা এক এবং একক, তাঁর এ একত্বের দাওয়াত দেয়ার জন্য তিনি অসংখ্য পয়গাম্বর এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সমস্ত পয়গাম্বর দাওয়াত দিয়েছেন الا الله আল্লাহ তা'য়ালা ব্যতীত কোন পালনকর্তা নেই, কোন আইনদাতা নেই, কোন বিধানদাতা নেই, কোন শাসনকর্তা নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشَاء السَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًالُكُمْ
আল্লাহ হচ্ছেন তিনি, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করে দিয়েছেন। (সূরা বাকারা)
এই পানি হচ্ছে মানুষের জন্য জীবন। এ জন্যই পানির অপর নাম জীবন বলা হয়। এই পানিকে নিয়ন্ত্রণ করেন মহান আল্লাহ তায়ালা। এই পানি যদি কয়েক ফুট উঁচু হয়ে আসে তাহলে আল্লাহ এর মাধ্যমে মানুষকে শেষ করে দিতে পারেন। আবার আল্লাহ ইচ্ছা করলে পানির ভেতরেই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। সমস্ত কর্তৃত্ব হচ্ছে মহান আল্লাহর। আবার আল্লাহ তায়ালা আগুনের ভেতর থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারেন। সব ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালার। সব কিছুই আল্লাহর নিয়ামত। আল্লাহ তা'য়ালা সূরা নহল-এর ১৮ নং আয়াতে বলেন-
وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا
তোমরা আল্লাহর নিয়ামত গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।
মহামহিমাময় পরম ক্ষমতাশালী মহাবিশ্বের স্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী, অতীন্দ্রিয় লা-শারীক মহান আল্লাহ ব্যতীত আল-কোরআন অবতীর্ণ করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন, আল কোরআন তাঁরই অবিনশ্বর অলৌকিক নিদর্শন। চৌদ্দশ' বছর পূর্বে অবতীর্ণ পবিত্র কোরআনের দু'টি আয়াতের বক্তব্য এবং বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নের যন্ত্র কম্পিউটারের রায় যখন এক হয়ে যায়, তখন বিস্ময় জাগে। মনে হয় আজকের কম্পিউটার শুধু এই সত্যই আবিষ্কার করেছে যা পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الانْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بمثلِ هُذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا
হে রাসূল আপনি বলে দিন! যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআন মাজীদের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়, তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না। (বনি ইসরাঈল)
মাত্র কয়েক দশক আগে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা গ্রহ এবং সমগ্র সৌরজগতের উৎপত্তি মহাবিশ্বের গঠন-প্রকৃতি নিয়ে তাদের সকল গবেষণার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সর্বজন স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক সত্য এই যে, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর পূর্বে মহাবিশ্ব ছিল একটি বিশাল বস্তুপিণ্ড মাত্র। পরে ঐ বস্তুপিণ্ডের অভ্যন্তরে ঘটলো এক বিস্ফোরণ, ফলে বিশাল বস্তুটি খণ্ড খণ্ড বস্তুতে বিভক্ত হয়ে একটি আদি ভরবেগে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো। এভাবে সৃষ্টি হলো চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র। অর্থাৎ মহাবিশ্বের যাবতীয় বস্তু। আজ অবধি তারা তেমনি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বৃত্তাকারে ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে দিনের পর দিন। এক সময় বিজ্ঞান সিদ্ধান্ত দিল যে, পৃথিবী স্থির, সূর্য তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে; কিন্তু পরে আবার সিদ্ধান্ত দিল সূর্য স্থির পৃথিবী ঘুরছে। এ মতবাদগুলো ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক সত্য হচ্ছে মহাবিশ্বের সকল বস্তুই বৃত্তাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞানী সমাজ মাত্র কয়েক দশক আগে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আজ হতে প্রায় চৌদ্দশত বছর পূর্বে এ কথাই বলেছেন-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَوتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَهُمَا
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম। (সূরা আম্বিয়া- ৩০)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিন-রাত এবং চন্দ্র-সূর্য সম্পর্কে বলেন-
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ الَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلُّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চন্দ্র ও সূর্য। সব আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। (সূরা আম্বিয়া: ৩৩)
এমনিভাবে যদি বিজ্ঞানীদেরকে পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে তারা বলবেন, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পূর্বে সমুদ্রের বুকে প্রাচীন বস্তুকণা থেকে প্লাটোপ্লাজম-এর উৎপত্তি হয়। এই প্লাটোপ্লাজম থেকেই জন্ম নেয় এমিবা নামের ক্ষুদ্রতম এককোষী প্রাণী। এভাবে সমুদ্রের উৎস থেকে পৃথিবীর বুকে প্রাণীর জন্ম হয়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সমুদ্র থেকেই সকল প্রাণীর জন্ম। অর্থাৎ সমুদ্র বা পানিই হচ্ছে সকল প্রাণের উৎস। এই তথ্য বিজ্ঞানীরা আমাদের জানিয়েছেন মাত্র কিছুদিন পূর্বে। পৃথিবীর বয়সের তুলনায় কয়েক দশক, মাত্র কয়েকদিন বটে। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে চৌদ্দশত বছর আগে ঘোষণা করেছেন-
وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
আর প্রাণবন্ত সব কিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। এর পরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (আম্বিয়া: ৩০)
প্রত্যেক প্রাণী সৃজনে অবশ্যই পানির প্রভাব আছে। চিন্তাবিদদের মতে শুধু মানুষ ও জীবজন্তুই প্রাণী ও আত্মাযুক্ত নয়; বরং উদ্ভিদ এমন কি জড় পদার্থের মধ্যেও আত্মা ও জীবন প্রমাণিত হয়েছে।
ইমাম ইবনে কাছীর ইমাম আহমাদের সনদে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর উক্তি বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিবেদন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যখন আপনার সাথে সাক্ষাৎ করি, তখন আমার অন্তর প্রফুল্ল এবং চক্ষু শীতল হয়। আপনি আমাকে প্রত্যেক বস্তু সৃজন সম্পর্কে তথ্য বলে দিন। উত্তরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক বস্তু পানি থেকে সৃজিত হয়েছে।
পৃথিবী ব্যতীত আরো পাঁচটি গ্রহের অস্তিত্বের কথা প্রাচীন কাল থেকে মানুষ জানতো। আধুনিক কালে আরো তিনটি গ্রহের অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম স্বপ্নে এগারটি গ্রহ দেখেছিলেন। সে স্বপ্নের কথা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে কারীমে বর্ণনা করেছেন-
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَابَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَجِدِينَ
যখন ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর পিতাকে বললেন, হে আব্বাজান, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্র এবং চন্দ্র ও সূর্য আমার উদ্দেশ্যে সিজদা করছে।
উপরোক্ত আয়াতে কার্যত হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের এগার ভাই (এগারটি গ্রহরূপে) এবং তাঁর পিতা ও মাতা (চন্দ্র ও সূর্যরূপে) তাঁকে সিজদা করেছিলেন। মিশরে উপস্থিতির পর প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম এ ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন, একথা পবিত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
সূর্যের গতিপথ সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে চৌদ্দশত বছর পূর্বে পবিত্র কোরআনই প্রথমবারের মত মানুষকে এ তথ্য দিয়েছে যে, সূর্যের একটি কক্ষপথ বা গতিপথ রয়েছে। মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
لا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تَدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ
সূর্য কখনও ধরতে পারবে না চন্দ্রকে, কিংবা রাত্রি অতিক্রম করতে পারবে না দিবসকে, প্রত্যেকেই পরিভ্রমণ করে নিজ নিজ কক্ষপথে। (সূরা ইয়াছিন)
১৯১৭ খৃষ্টাব্দের দিকে আধুনিক বিজ্ঞান জানতে পেরেছে যে, আমাদের ছায়াপথ এবং সূর্যেরও একটি গতিপথ আছে এবং তাদের নিজ নিজ মেরুদণ্ডের ওপরে ঘুরপাক খেতে খেতে তাদের কেন্দ্রকে আবর্তন করে আসতে মোট সময় লাগবে পঁচিশ কোটি বছর। একথা মাত্র এই শতাব্দীতে জানা গেছে যে, কোপার্নিকাসের থিওরী মতে সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ না করলেও সূর্য স্থির বসে নেই, আর পবিত্র কোরআনে কারীম চৌদ্দশত বছর পূর্বে এই তথ্য প্রদান করেছে যখন এ সম্পর্কে মানুষের কোন কিছুই জানা সম্ভব ছিল না।
ছায়াপথের আলোক-রশ্মির বহু বর্ণ-বিভা সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষায়রত পদার্থ বিজ্ঞানীগণ লক্ষ্য করেন যে, বিভিন্ন ছায়াপথের বর্ণালী বিভা ক্রমান্বয়ে লালচে হয়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য থেকে তাদের এই ধারণা জন্মে যে, ছায়াপথগুলো ক্রমশ পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্বের পরিমণ্ডল ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে; কিন্তু মহান আল্লাহ এই তথ্য দিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে কারীমে বলেছেন-
وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ
আমি আমার নিজস্ব ক্ষমতা বলেই এই আকাশ সৃষ্টি করেছি, অবশ্যই আমি মহান ক্ষমতাশালী।
(সূরা যারিয়াত-৪৭)
এই আয়াতে ব্যবহৃত 'মুছিউন' শব্দের অর্থ, বিশালতা ও বিস্তৃতি দানকারী, ধনীগণ, বিত্তশালীগণ, প্রচন্ড ক্ষমতাধর, শক্তির নিরিখে কোন কিছুর সম্প্রসারণ বা বৃদ্ধি ঘটানো ইত্যাদি হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে এখানে আকাশমন্ডলের প্রসঙ্গে উক্ত শব্দের অর্থ দাঁড়াবে বিস্তৃতি ও বিশালতা দানকারী। সুতরাং এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুর থেকেই সম্প্রসারিত হচ্ছে বর্তমানেও সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং অনন্তকাল ধরে সম্প্রসারিত হতেই থাকবে। যখন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে, তখনই ঘটবে মহাপ্রলয়। মহাবিশ্বে যদি সম্প্রসারণ গতি না থাকতো, তাহলে মহাবিশ্বের কোন বস্তুরই বিকাশ ঘটতো না। যে গতিতে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে, সে গতি সামান্য কম বা বেশী হলে মহাবিপর্যয় ঘটতো, মহাবিশ্বের কোন অস্তিত্বই থাকতো না।
0 Comments