
মদীনায় ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের বনী কুরাইজা, বনী কাইনুকা ও বনী নজীর, এ গোত্রের বসবাস ছিলো এবং মদীনার শাসন দণ্ড ছিলো তাদেরই আয়ত্বে। মদীনার আনসাররা এক সময় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে তাদের শক্তি এমনভাবে ক্ষয় করেছিল যে, ইয়াহুদীদের কাছে তারা বাধ্য হয়ে মাথানত করে থাকতো। মদীনার ইয়াহুদীরা ছিল ধনিক শ্রেণী। কৃষিকাজের জমি ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। ব্যবসাও ছিল তাদেরই অধীনে। নানা ধরনের শিল্পে তারা ছিল অগ্রগামী। বীরত্ব এবং যুদ্ধ বিদ্যাতেও তারা ছিল আনসারদের তুলনায় দক্ষ। এ কারণে তাদের কাছে সামরিক কাজে ব্যবহার করার মতো অস্ত্র বিপুল পরিমাণে মওজুদ থাকতো। স্বর্ণ শিল্প ছিলো ইয়াহুদী সম্প্রদায় বনী কাইনুকার নিয়ন্ত্রণে। স্বর্ণের অলংকার নির্মাণে মদীনায় তাদের সমকক্ষ কেউ ছিল না।
মদীনার সকল বিষয়ে নেতৃত্বের আসন ইয়াহুদীরাই নিয়ন্ত্রণ করতো। ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের ইতিহাস এ কথাই সাক্ষ্য দেয় যে, তারা চিরদিনই কুচক্রি এবং চরিত্রহারা নিষ্ঠুর প্রকৃতির। নগদ অর্থ মানুষকে ঋণ দিয়ে চারদিকে তারা মাকড়সার জালের মতই ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে রাখতো। কৌশলে তারা বিত্তের অধিকারী হয়ে সমাজের গরীব শ্রেণীকে পদানত করে রেখেছিল। নগদ অর্থের বিনিময়ে চড়া সুদে তারা মানুষের সহায় সম্পদের সাথে সাথে সন্তান-সন্ততি এমন কি তৎকালীন সমাজের নারীকেও বন্ধক রাখতো। ঋণ গ্রহীতাগণ ঋণ আদায়ে অক্ষম হলে বা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলে ঋণ গ্রহীতার অবোধ শিশুকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করতো।
ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের নৈতিক চরিত্র বলতে কিছুই ছিল না। তারা তাদের ধনিক শ্রেণীর জন্য এক ধরনের আইন প্রয়োগ করতো এবং বিত্তহীনদের জন্য আরেক ধরনের আইন প্রয়োগ করতো। বিশেষ করে তাদের নেতাদের কোনো অপরাধের বিচার তারা করতো না। নবী করীম (সা:) এক ইয়াহুদীকে প্রশ্ন করেছিলেন, 'তোমাদের আইনে ব্যভিচারের শাস্তি কি শুধু দোররা দিয়ে আঘাত করা?'
ইয়াহুদী জবাব দিয়েছিল, 'না, আমাদের আইনে ব্যভিচারের শাস্তি পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। কিন্তু আমাদের নেতৃবৃন্দের ক্ষেত্রে এ শাস্তি প্রযোজ্য নয়। সাধারণ মানুষের জন্য আমরা এই শাস্তি দিয়ে থাকি। নেতৃবৃন্দের কারো ব্যভিচার ধরা পড়লে তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হন না'।
মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ইয়াহুদী সম্প্রদায় নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখিন হয়েছিল। তাদের পাপাচারের পথ রুদ্ধ হওয়া পড়েছিলো। বিকৃত ধর্মীয় প্রভাব ও নেতৃত্বের আসন ম্লান হয়ে গিয়েছিলো। মদীনার আনসারদের ঋণের জালে বন্দী করে সর্বগ্রাসী শোষণের পথও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। মক্কার মুসলমানদের পরামর্শে আনসাররা পরিকল্পিত উপায়ে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে নিজেদেরকে ইয়াহুদীদের কাছ থেকে ঋণ মুক্ত করেছিল। ইসলাম মদীনায় প্রতিষ্ঠিত হবার পরপরই ইয়াহুদীরা উপলব্ধি করেছিলো, তাদের নির্যাতনমূলক অর্থ লিন্সার ব্যবসা চলবে না।
মদীনা সনদে তাদের যাবতীয় মানবিক ও ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু তারা ধর্মের নামে যে অনাচার করতো, নবী করীম (সা:) এ সম্পর্কে সঠিক পথ অবলম্বনের নির্দেশনা দিতেন। তাদের দাবী ছিলো তারা হযরত মূসা (আ:) কর্তৃক প্রবর্তিত আইন-কানুন অনুসরণ করে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের মনগড়া বিধান অনুসরণ করতো। বিষয়টি ওহী মারফত অবগত হয়ে রাসূল (সা:) তাদেরকে সংশোধন হওয়ার আহ্বান জানাতেন, এ কারণে তারা নবী করীম (সা:) ও ইসলামের কঠিন শত্রু হয়ে দাঁড়ালো। তাদের রক্তে ছিল মহাসত্যের বাহকদেরকে হত্যা করা এবং নিষ্ঠুরতা ও পাপাচারের প্রবণতা বিদ্যমান। বিশ্বাসঘাতকতা ছিল তাদের মজ্জাগত ব্যাপার। বিশ্বনবীর সাথে তারা মদীনা সনদে স্বাক্ষর করলেও গোপনে তারা মক্কার ইসলাম বিরোধী কুরাইশদের সাথে মিলিত হয়ে মদীনা থেকে ইসলাম উৎখাতের ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে ছিলো।
প্রকাশ্যে নবী করীম (সা:) সম্পর্কে কটুক্তি না করলেও রাসূল (সা:) এর শিখানো পদ্ধতিতে সালাম না দিয়ে বলতো, 'আসসামু আলায়কুম'। অর্থাৎ তোমার ওপরে মৃত্যু পতিত হোক।
হযরত আয়িশা (রা:) এর উপস্থিতিতে একবার এক ইয়াহুদী নবী করীম (সা:) কে ঐ কথা বললে তিনি ইয়াহুদীকে বললেন, 'অসভ্যের দল! তোদের ধবংস হোক'।
নবী করীম (সা:) এ কথা শুনে তাঁকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়ে বললেন, 'আয়িশা, মধ্যম পথ গ্রহণ করো'।
হযরত আয়িশা (রা:) বললেন, 'ওরা কি বলে আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন?'
তিনি বললেন, 'আমি শুনেছি। তারা যখন ঐ কথা বলে আমিও তাদের কথার উত্তরে বলি, আলায়কুম। অর্থাৎ তোমাদের ওপরেও'।
ইয়াহুদীরা পূর্ববর্তী নবীর অনুসারী হবার দাবীদার ছিল, এ কারণে নবী করীম (সা:) পৌত্তলিকদের তুলনায় ইয়াহুদীদেরকে সম্মান করতেন। তাদের কোনো লাশ দেখলে তিনি দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। তাদের অনাচার নবী করীম (সা:) নীরবে সহ্য করছিলেন। কারণ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তখন পর্যন্ত আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশ অবতীর্ণ হয়নি। নবীর এই নীরবতাকে তারা দুর্বলতা ভেবে চরম পথ অবলম্বন করেছিল।
বনী কাইনুকা গোত্রের ইয়াহুদীদের মধ্যে কা'ব ইবেন আশরাফ নামক লোকটি ছিল উঁচুস্তরের একজন কবি এবং বিত্তবান। মদীনার আনসারদের সে সুদের ব্যবসায় জড়িত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ব্যক্তি বদর যুদ্ধে কুরাইশদের পরাজয়ের ওপরে নানা ধরণের কবিতা রচনা করে মক্কায় পাঠিয়ে তাদের উত্তেজিত করতো। ইয়াহুদীদের একটি প্রতিনিধি দল গোপনে মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের সাথে বৈঠক করে সার্বিক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছিল। তাদের অঙ্গীকারের কারণে মক্কার কুরাইশরা নব উদ্যোমে ইসলামের বিরোধিতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো। ইয়াহুদী কা'ব ইবনে আশরাফ নবী করীম (সা:) কে কৌশলে হত্যা করার জন্য তার বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছিল।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা নবীকে তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে তাদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করতে বললেন এবং নবী করীম (সা:) দাওয়াতে গেলেন না। কা'ব ইবনে আশরাফ ক্ষুব্ধ হয়ে নবী করীম (সা:) এর নামে বিদ্রূপাত্মক কবিতা রচনা করে মদীনার লোকদের মধ্যে প্রচার করতে থাকলো। এতে মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষোভে উত্তেজিত হলেও রাসূল (সা:) তাদেরকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিলেন।
ইয়াহুদীরা ধারণা করেছিলো মদীনায় ইসলামের মূল শক্তি আউস ও খাজরাজ গোত্র। অতএব এই দুই গোত্রকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারলে ইসলাম বিকশিত হতে পারবে না। সে লক্ষ্যে মদীনার আনসারদের মধ্যে তারা তাদের চিরাচরিত ঘৃণ্য প্রথানুযায়ী বিভেদের বীজ তারা বপনের সূচনা করলো। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আউস গোত্র খাজরাজ গোত্রের কার কি ক্ষতি করেছিল এবং খাজরাজ গোত্র আউস গোত্রের কি ক্ষতি করেছিল, এসব পুরনো প্রসঙ্গ এই দুই গোত্রের মধ্যে ইয়াহূদীরা জাগিয়ে দিল। অবস্থা এমন এক পর্যায়ে উপনীত হলো যে, দুই গোত্রের আনসারদের মধ্যে দাঙ্গায় দুইজন আহত হলো এবং উভয় গোত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলো।
নবী করীম (সা:) যথা সময় সংবাদ পেয়ে উভয় গোত্রে উপস্থিত হয়ে এই দাঙ্গার পরিণতি আদালতে আখিরাতে কি হবে, তা বর্ণনা করে উভয় দলকে শান্ত করে তাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করলেন। ইয়াহুদীরা ঘৃণ্য মানসিকতা নিয়ে সাময়িক ইসলাম গ্রহণ করতো। দিন কয়েক পরেই তারা ইসলাম ত্যাগ করে মানুষের মধ্যে প্রচার করতো, 'ভালো মনে করেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু ভালোভাবে অনুসন্ধান করে দেখলাম ইসলামে খারাপ ছাড়া ভালো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এ কারণে আবার ইসলাম ত্যাগ করে বাপ-দাদার আদর্শেই ফিরে এলাম'।
এভাবে ইয়াহুদীরা নবী করীম (সা:) ও ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াতে থাকলো। মদীনায় রাসূল (সা:) এর সাথে শান্তি চুক্তি করার পরেও তারা পদে পদে সেই চুক্তির ধারা লংঘন করতে থাকে। তাদের এসব জঘন্য আচরণের কথা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বহুস্থানে উল্লেখ করেছেন। মুসলমানদের ধৈর্যের সুযোগে তারা চরম হঠকারিতার পরিচয় দেয়া শুরু করেছিল। ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় তারা এমন এক ঘটনার জন্ম দিল যে, মুসলমানদের পক্ষে আর নীরবে দর্শকের ভূমিকা পালন করা সম্ভব হলো না।
নিরপেক্ষ সকল ঐতিহাসিকই সে জঘন্য ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম পরিবারের এক সম্ভ্রান্ত নারী তাঁর প্রয়োজনে একান্ত বাধ্য হয়েই ইয়াহুদী অধ্যুষিত বনী কাইনুকার বাজারে গিয়েছিলেন। মুসলিম নারীকে দেখে ইয়াহুদীরা তাঁকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা মুসলিম নারীকে পোষাক পরিত্যাগ করার আদেশ করে। মহিলা নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য এক ইয়াহূদী স্বর্ণকারের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিল। একজন ইয়াহুদী ঐ মুসলিম মহিলার পরণের কাপড় তাঁর অলক্ষে এমনভাবে একটা কিছুর সাথে বেঁধে দেয় যে, মহিলা উঠতে গেলেই যেন তাঁর কাপড়ে টান লেগে মহিলা পৰ্দ্দাহীন হয়ে পড়ে।
মহিলা যখন উঠতে গেল ইয়াহুদীদের পরিকল্পনা অনুসারে যা হবার তাই হলো। একজন মুসলিম নারীকে পরিকল্পিত উপায়ে ইয়াহুদীরা বে-ইজ্জতি করলো এবং মহিলার আর্তচিৎকার শুনে ইয়াহুদী হায়েনার দল অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল। মহিলা তখন বাধ্য হয়ে চিৎকার করে বলেছিল, 'কে আছো মুসলিম বীর সৈনিক! তোমাদের বোনের সম্মান রক্ষা করো!'
তাঁর আর্তনাদ শুনে একজন মুসলিম নওজোয়ান ছুটে এসে অপরাধী এক ইয়াহুদীকে হত্যা করলো। ইয়াহুদীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমন করে মুসলিম বীরকে হত্যা করলো। এ সংবাদ নবী করীম (সা:) শোনার পরে তিনি ঘটনা স্থলে গিয়ে ইয়াহুদীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, 'ওহে ইয়াহুদী সমাজ! তোমরা যে অপরাধ করেছো তার প্রতিকার করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব নয়। কিন্তু তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ, তোমরা মহান আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করো। তোমরা চুক্তি অনুসরণ করো। আর তা যদি না করো তাহলে তোমাদের ওপরেও বদরের মতই আযাব অবতীর্ণ হবে'।
যা ঘটেছিলো তা ছিল ইয়াহুদীদের পরিকল্পিত। তারা মক্কার কুরাইশদের সাথে পূর্বেই গোপন চুক্তি করে এসেছিল, কোনো উপলক্ষ্যে তারা মুহাম্মাদ (সা:) এর সাথে যুদ্ধ শুরু করবে। আর এই সুযোগে মক্কার কুরাইশরা মদীনা আক্রমন করে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দিবে। সুতরাং রাসুলের কথায় তারা নমনীয়তা প্রদর্শন না করে নবী করীম (সা:) এর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ঘোষণা করলো, 'হে মুহাম্মাদ (সা:)! বদরের প্রান্তরে গোটা কতক কুরাইশদের হত্যা করে বেশি অহংকার দেখিয়ো না। আমাদের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে দেখো, যুদ্ধ কাকে বলে আমরা তা দেখিয়ে দিবো'। (সীরাতে ইবনে হিশাম, আত্ তাবারী, তাবাকাতে ইবনে সায়াদ)
ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্র এবার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। নবী করীম (সা:) বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। বনী কাইনুকা গোত্র রাসূল (সা:) এর যুদ্ধ প্রস্তুতির সংবাদ পেয়ে তারা দ্রুত তাদের নির্মিত দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। এ সকল দূর্গ ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত। ফলে তারা নিরাপদেই দূর্গের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ রক্ষা করলো এবং তাদের আশা ছিল এ সময়ের মধ্যে মক্কা থেকে কুরাইশরা মদীনা আক্রমন করবে। তখন তারা দূর্গ থেকে বের হয়ে মক্কার কুরাইশদের সাথে একত্রিত হয়ে মুসলিম নিধনযজ্ঞ অনুষ্ঠিত করবে।
কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হলো না। মক্কার কুরাইশরা মদীনা আক্রমনের কল্পনাও করতে পারলো না। কারণ তখন পর্যন্ত তারা বদরের ক্ষয়-ক্ষতিই সামলিয়ে উঠতে পারেনি। নবী করীম (সা:) মুসলিম বাহিনী নিয়ে বনী কুরাইজার দূর্গ অবরোধ করলেন। এভাবে পনের দিন পর্যন্ত অবরোধ করে রাখলেন। ইয়াহুদীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে এলে তারা তাদের মুক্তির জন্য মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে তাদের হয়ে সুপারিশ করার জন্য নবীর কাছে প্রেরণ করেছিল।
মদীনার মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এসে নবী করীম (সা:) এর কাছে ইয়াহূদীদের পক্ষ থেকে সুপারিশ করতে থাকলো। রাসূল (সা:) প্রথমে তার কথায় কর্ণপাত করেননি। পরে এই মুনাফিক নেতা তাঁকে এমনভাবে ধরলেন যে, সীরাতে ইবনে হিশামে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসূরে কাছে অনুনয় করতে করতে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই একরকম জাপটে ধরে বলেছিল, 'আপনি তাদের ব্যাপারে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত না করলে আপনাকে আমি ছাড়বো না'।
হাদীস শরীফে এসেছে, এ সময় নবী করীম (সা:) এতটা রাগান্বিত হয়েছিলেন যে, তাঁর পবিত্র চেহারা ভিন্ন আকার ধারণ করেছিল। অবশেষে রাসূল (সা:) অনুনয় রক্ষা করে কতকগুলো শর্তের অধীনে অবরোধ উঠিয়ে নিলেন। ইয়াহুদীরা নবী করীম (সা:) এর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) এর সাথে ইয়াহুদীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে চুক্তি ছিল। ইয়াহুদীরা যখন রাসূল (সা:) এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল, তখন হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) এসে রাসূল (সা:) এর সামনে ঘোষণা দিয়েছিলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার মিত্র এবং বন্ধু হলেন একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালা এবং তাঁর রাসূল ও মুসলমানগণ। আমি ইসলামের শত্রুদের মৈত্রী চুক্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাদের সাথে আমার এখন থেকে আর কোনো ধরনের চুক্তি বলবৎ থাকলো না'।
রাসূল (সা:) এর এই সাহাবীর প্রশংসামূলক কাজের জন্য মহান আল্লাহ তা'য়ালা সূরা মায়িদার আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেন। নবী করীম (সা:) বনী কাইনুকার সকল ইয়াহুদীদের গ্রেফতার করার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সুপারিশের কারণে নবী (সা:) তাদেরকে গ্রেফতার না করে মদীনা থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। মদীনার আশেপাশেও তারা থাকতে পারবে না এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
ইয়াহুদী সম্প্রদায় সিরিয়ার দিকে চলে গিয়েছিল। এই ঘটনা ছিল হিজরী দ্বিতীয় সনের শাওয়াল মাসের। তাদের ধন-সম্পদ নবী করীম (সা:) বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি গণীমতের সম্পদ থেকে পঞ্চমাংশ গ্রহণ এবং তিনটি তীর, দুটো বর্ম, তিনটি তরবারী ও তিনটি ধনুক গ্রহণ করেছিলেন। (যাদুল মায়াদ, পৃষ্ঠা নং-১৩৭, ১৩৮)
সে সময় ইয়াহুদীরা যে অপরাধ সংঘটিত করেছিল পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্র প্রধান হলে তাদের একটি প্রাণীকেও জীবিত ছেড়ে দিত না। কিন্তু নবী করীম (সা:) তাদের একজনের গায়েও হাত উঠাতে দেননি। এমনকি তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে মদীনা থেকে বের হয়ে যাবার সুব্যবস্থা করে দেন। মদীনা থেকে তাদের বিদায়ের জন্যে তিন দিন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য তিনি তাদের সাথে হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
ইসলামের যে যুদ্ধনীতি রয়েছে, নবী করীম (সা:) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের কিছু ঘটনা সম্পর্কে ইউরোপিয় কতিপয় লেখক মন্তব্য করেছে, মুহাম্মাদ (সা:) মদীনার ইয়াহুদীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। খ্রিষ্টান লেখকগণ ইয়াহুদী প্রেমে অন্ধ হয়ে বিশ্বনবীকে প্রতারক বলতেও দ্বিধা করেনি। ইয়াহুদীরা খ্রিষ্টানদের সাথে এবং খ্রিষ্টানরা ইয়াহুদীদের সাথে কি জঘন্য আচরণ করেছে, ইতিহাসের পাতায় সেসব ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তারা প্রকৃত সত্য উল্লেখ না করে মদীনার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে এভাবে যে, নবী করীম (সা:) হিজরত করে তাঁর প্রয়োজনে ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি করেছিলেন। তারপর তিনি যখন একটু শক্তিশালী হলেন, তখনই তিনি ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে তাদেরকে মদীনা থেকে নির্বাসিত করলেন।
ইয়াহুদীরা যে কি ধরনের মন-মাসিকতা সম্পন্ন এবং কতটা কুটিল জাতি, বিশ্বের কোথাও যে তাদের স্থান হয়নি এবং কেনো হয়নি তা ইতিহাসের পাঠক মাত্রই অবগত রয়েছেন, এ সম্পর্কে আমি আমার লেখা সূরা ফাতিহার তাফসীরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ইউরোপিয় কতিপয় লেখক ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পেশ না করেই পাঠককে বিভ্রান্ত করার জন্য বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে থাকে। প্রকৃত ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করলে, দেখা যাবে নবী করীম (সা:) যে ব্যবস্থা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছিলেন, তা ছিল সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত এবং আইনের দৃষ্টিতে বৈধ।
তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করে যে চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন, সে চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ আমরা উল্লেখ করেছি। সে চুক্তির মূল কথা ছিল, উভয় পক্ষের কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক বা শত্রুতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। একে অপরের শত্রুদেরকেও কেউ সাহায্য করবে না। এ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার (রাহ:) লিখেছেন, 'তিনি তাদের সাথে এই শর্তে মৈত্রী স্থাপন করেছিলেন যে, তারা তাঁর সাথে যুদ্ধও করবে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর শত্রুদেরকেও সাহায্য সহযোগীতা করবে না'। (ফতহুল বারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৩১)
মুসলমানদের সাথে ইয়াহুদীরা এই চুক্তি করার পরে স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানরা তাদের সাথে বন্ধুর অনুরূপ আচরণ করতে থাকে। কিন্তু ইয়াহুদীরা বিশ্বাসঘাতকতা করে চুক্তি বিরোধী কার্যকলাপ করতে থাকে। তারা গোপনে মক্কার কুরাইশদের কাছে মুসলমানদের গোপন তথ্য পাচার করতে থাকে। মুসা ইবনে উকবা তাঁর মাগাজীতে উল্লেখ করেছেন, 'বনী নজীর গোত্র মক্কার কুরাইশদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উস্কানী দিতো এবং ইসলামী রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার করতো'। (ফতহুল বারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩৩)
ইয়াহূদীরা এখানেই তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করেনি। বিশ্বনবী (সা:) কে তারা কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করে। তারা ঈমান আনবে, এ সংবাদ দিয়ে আল্লাহর রাসূল (সা:) কে তাদের আওতায় নিয়ে হত্যা করার লক্ষ্যে কয়েকবার প্রস্তুত হয়েছিল। ছাদ থেকে পাথর নিক্ষেপ করে নবীকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। (আত্ তাবারী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৭, আবু দাউদ, ফতহুল বারী, সপ্তম খন্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩৩, ফতহুল বুলদান, পৃষ্ঠা নং-২৪)
এখানেই ঘটনা শেষ নয়, তাদের উদ্ধত্য এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, প্রকাশ্যে তারা মুসলমানদেরকে হুমকি প্রদর্শন করতো। নবী করীম (সা:) এর ধৈর্যকে তারা দুর্বলতা ভেবেছিল। বাইরের কোনো শত্রু মদীনা আক্রমন করলে ইয়াহুদী আর মুনাফিকরা মুসলমানদেরকে অস্তিত্বহীন করে দিবে, এ আশঙ্কা তীব্র হয়ে দেখা দিল। গোপনে আল্লাহর রাসূল (সা:) কে হত্যা করতে পারে এ আশঙ্কাও মুসলমানদের মধ্যে বিরাজ করছিল। মদীনার মুসলমানদের ইয়াহুদীদের সম্পর্কে আশঙ্কা এতটা তীব্র হয়েছিল যে, একজন সাহাবী মৃত্যুর সময় বলে গেলেন, আমার ইন্তেকালের সংবাদ আল্লাহর রাসূল (সা:) কে রাতে দিও না। কারণ তিনি রাতে আমার জানাযায় অংশগ্রহণ করার জন্যে আসবেন আর সেই সুযোগে ইয়াহুদীরা তাঁকে হত্যা করতে পারে। (উসুদুল গাবা, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৫৭)
ইয়াহুদীদের এই উৎপাতের পরেও ইয়াহুদী প্রেমিকরা কি বলতে চান নবী করীম (সা:) এর জন্য নীরবতা পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল? কিন্তু এরপরেও রাসূল (সা:) তাদের ওপরে হঠাৎ আক্রমন না করে দূত মারফত তাদেরকে জানিয়ে দিলেন, 'আমার সাথে তোমরা চুক্তি ভঙ্গ করে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছো। সুতরাং তোমরা দশদিনের মধ্যে মদীনা ত্যাগ করবে, যদি না করো তাহলে আমি তোমাদের সাথে। যুদ্ধ করতে বাধ্য হবো'।
নবী করীম (সা:) এর পক্ষ থেকে তারা এই সংবাদ পেয়ে মদীনার মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলো। মুনাফিক নেতা তাদেরকে অভয় দিয়ে বললো, তোমরা কিছুতেই মদীনা ত্যাগ করবে না। তোমাদের যা সাহায্য সহযোগীতা প্রয়োজন আমরা করবো। ইয়াহুদীরা এটা তলিয়ে দেখলো না যে, মুনাফিকরা সত্যই তাদেরকে সাহায্য করতে পারবে কিনা। তারা কঠিন ভাষায় নবী করীম (সা:) কে জানিয়ে দিল, 'আমরা মদীনা ত্যাগ করবো না, তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করতে পারো'। (আত্ তাবারী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৮, ফতহুল বারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩৩, ফতহুল বুলদান, পৃষ্ঠা নং-২৪)
নবী করীম (সা:) তাদেরকে শেষ সুযোগ দিয়েছিলেন এবং তাদের অসহ্য উস্কানী ও চুক্তি ভঙ্গের পরেও উদারতার শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। একান্ত বাধ্য হয়ে তিনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে অবরোধ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়নি। অবরোধের কারণেই ইয়াহুদীরা বলতে বাধ্য হয়েছিল, 'আপনি আমাদেরকে প্রাণে মারবেন না। আমরা মদীনা থেকে বের হয়ে সিরিয়ার দিকে চলে যাবো এবং আমাদের উটের পিটে যা নিতে পারি তাই নিয়ে যাবো। আর যা কিছু থাকে আমরা এখানে রেখে যাবো'।
এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক বালাজুরী ও হাফেজ ইবনে হাজার লিখেছেন, 'ইয়াহুদীরা আবেদন করেছিল, আমাদের উট যতটা মালপত্র বহন করতে পারে আমরা ততটা নিয়ে যাবে, নবী করীম (সা:) তাদের এই আবেদন মঞ্জুর করলেন এবং তাদের সাথে সন্ধি করলেন। এখানে ইয়াহুদীদের সামান্য পরিমাণ ক্ষতি করা হয়নি। (আত্ তাবারী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৩৮, ফতহুল বুলদান- পৃষ্ঠা নং-২৪, ফতহুল বারী- সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩২)
বিশ্বনবী (সা:) অস্থাবর সম্পদসহ তাদেরকে মদীনা ত্যাগের সুযোগ দিলেন। সুযোগ থাকার পরও তিনি শত্রুদের একান্ত অনুগ্রহে মদীনা ত্যাগের অনুমতি দিলেন কিন্তু তাঁর উদারতা এবং মহত্ত্বের প্রতিদান ইয়াহুদীরা যেভাবে দিয়েছিল, সে অভিজ্ঞতা মুসলমানদের জন্য খুবই তিক্ত। ইয়াহুদীরা যে সময় মদীনা ছেড়ে যাচ্ছিল, তাদের যাওয়ার অবস্থাও ছিল মুসলমানদের প্রতি উপহাসমূলক। তাদের কয়েকজন নেতা খয়বরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। সেখানেও তারা ষড়যন্ত্র করে নেতৃত্বের পদ দখল করেছিল। মদীনা ত্যাগের সময় তারা বিভিন্ন ধরনের বাদ্য বাজিয়ে, গায়িকাদের মাধ্যমে গান পরিবেশন ও নর্তন-কুর্দন করতে করতে মদীনা ত্যাগ করেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন, 'ইয়াহুদীরা সম্পদসহ যে বিশাল জনবলসহ মদীনা ত্যাগ করেছিল, স্থানীয় অধিবাসীরা ইতোপূর্বে এ অবস্থা কখনো দেখেনি'। মদীনার আনসারদের মধ্যে যারা ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করেছিল ইয়াহুদীরা তাদেরকেও নিয়ে যেতে চাইলে আনসাররা বাধা দিয়েছিল। এ সময় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ অবতীর্ণ করা হলো-
لا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قف قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ جِ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنُم بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى ق لا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ اللهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ طَ وَالَّذِينَ كَفَرُوا. أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوْتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِّنَ النُّوْرِ إِلَى الظُّلُمَاتِ طَ أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَعِ
(আল্লাহর) দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই, (কারণ) সত্য (এখানে) মিথ্যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, তোমাদের মধ্যে যদি কোনো ব্যক্তি বাতিল (মতাদর্শ) কে অস্বীকার করে, আল্লাহর (দেয়া জীবনাদর্শের) ওপর ঈমান আনে, সে যেন এর মাধ্যমে এমন এক শক্তিশালী রশি ধরলো, যা কোনোদিনই ছিঁড়ে যাবার নয়; আল্লাহ তা'য়ালা (সব কিছুই শোনেন) এবং (সবকিছুই) জানেন, যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে, আল্লাহ তা'য়ালাই হচ্ছেন তাদের সাহায্যকারী (বন্ধু), তিনি (মূর্খতার) অন্ধকার থেকে তাদের (ঈমানের) আলোতে বের করে নিয়ে আসেন, (অপরদিকে) যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, বাতিল (শক্তিসমূহ-ই) হয়ে থাকে তাদের সাহায্যকারী, তা তাদের (দ্বীনের) আলোক থেকে (কুফুরীর) অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়; এরাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। (সূরা আল বাকারা-২৫৬-২৫৭)
খায়বরে যে সকল ইয়াহুদী গিয়েছিল তারাই পরবর্তীতে খায়বর যুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। এই ইয়াহুদী জাতি পৃথিবীর যেখানেই গিয়েছে সেখানেই তারা অশান্তির আগুন প্রজ্জলিত করেছে। মদীনা থেকে তারা বের হয়ে সমগ্র আরবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল। মাত্র দু'বছরের ব্যবধানে তারা ২৪ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মদীনা আক্রমন করেছিল। সে সময়ই যদি ইয়াহুদী নামক বিষাক্ত সর্পসমূহের মস্তক চূর্ণ করা হতো তাহলে পরবর্তীতে ইয়াহূদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র ও খায়বর যুদ্ধের মুকাবিলা করতে হতো না। পক্ষান্তরে নবী করীম (সা:) ছিলেন করুণার সিন্ধু। পরাজিত শত্রুর করুণা ভিক্ষামূলক মিনতি তাঁর পক্ষে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানতেন, এই ইয়াহুদীরা তাঁর জন্য প্রতি পদে পদে সমস্যা সৃষ্টি করবে। ইসলামী রাষ্ট্র উৎখাতের জন্য তারা সর্বত্র ষড়যন্তের জাল বিস্তার করবে। সুযোগ পেলে আল্লাহর রাসূল (সা:) কে এবং মুসলমানদের হত্যা করবে। তবুও নবী করীম (সা:) তাদের ক্ষমা করে নিরাপদে মদীনা ত্যাগ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। মদীনা ত্যাগের সময় তারা যে গর্ব-অহঙ্কারের প্রদর্শনী করেছিলো তা কোনো করুণা ভিখারী ও পরাজিত জাতির নিদর্শন ছিল না।
0 Comments