নামাযে দাঁড়ানো হলো মুখে আল্লাহু আকবার তথা আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ- এ কথা মুখে উচ্চারণ করে। কিন্তু নামাযে কিভাবে দন্ডায়মান হতে হবে, এ সময় দেহ ও মনের অবস্থা কেমন হবে? এই প্রশ্নের জবাবও সেই আল্লাহ তা'য়ালাই দিয়েছেন, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি নামায বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
حفِظُوا عَلَى الصَّلوت والصلوة الوسطى وَقُومُوا لِلَّهِ قَنتين
নিজেদের নামাযসমূহের পূর্ণ হিফাজত করো। বিশেষত এমন নামায যা নামাযের যাবতীয় সৌন্দর্যের সমন্বয়। আল্লাহর সম্মুখে এমনভাবে দাঁড়াও যেমন অনুগত ভৃত্য দন্ডায়মান হয়ে থাকে।
(সূরা আল বাকারা-২৩৮)
মুখে উচ্চারণ করা হলো, আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ কথাটি যদি কেউ বুঝে উচ্চারণ করে, তাহলে নামাযে দন্ডায়মান হওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই তার বুকের ভেতর থরথর করে কাঁপতে থাকবে যে, সে কোন্ সত্বার সম্মুখে দাঁড়িয়েছে। আর এই কম্পনই বাহ্যিকভাবে তার গোটা দেহের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। প্রবল প্রতাবশালী শাসকের সম্মুখে সাধারণ প্রজা যেমন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে, নড়াচড়া করে এবং কম্পিত কন্ঠে কথা বলে, অনুরূপ হবে নামাযীর অবস্থা। যে আল্লাহর সম্মুখে সে দাঁড়িয়েছে, সেই আল্লাহর অসীম রহমতেই সে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেছে, সেই আল্লাহর রহমত তাকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে এবং তিনিই তাকে প্রতিপালন করছেন। এসব বিষয় নামাযীর স্মরণে থাকলে, সেই নামাযীর নামাযে দাঁড়ানো, রুকু করা, সিজদা দেয়া ও বসার ভঙ্গিতেই প্রকাশ পাবে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আর এই ধরনের নামাযই মহান আল্লাহ তা'য়ালা পছন্দ করেন এবং কবুল করবেন।
তাকবীরে তাহরীমা উচ্চারণ করার সাথে সাথেই নামাযের বাইরের হালাল কাজগুলো সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গেলো। অর্থাৎ নামাযের বাইরে আল্লাহ তা'য়ালা যেসব কাজ তাঁর বান্দার জন্য হালাল করেছেন, সেই কাজগুলোই নামায আদায়রত অবস্থায় বান্দার জন্য হারাম করেছেন। সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করার সাথে সাথেই আবার নামাযের বাইরের হালাল কাজগুলো হালাল হয়ে যায়। এরপর নামাযীকে প্রথমেই ছানা পাঠ করতে হয়। ছানা অর্থ হলো, মহান আল্লাহর প্রশংসা, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণ বর্ণনা করা। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা বলার পর সূরা ফাতিহা পাঠ করার পূর্বে কিছুক্ষণ নীরব থাকতেন। আমি আল্লাহর রাসূলকে বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কোরআন হোক। আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মাঝখানে নীরব থাকেন কেনো? তখন আপনি কি পাঠ করেন তা আমাকে বলুন। আল্লাহর রাসূল বললেন, আমি পাঠ করি-
اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَاطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ أَللَّهُمَّ نَقْنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنْقَى التَّوْب الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ
হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গোনাহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গোনাহসমূহ থেকে পবিত্র করুন, যেমন ময়লা থেকে শুভ্র বস্ত্র পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোনাহসমূহ শীতল পানি দিয়ে ধৌত করে দিন। (আবু দাউদ)
হাদীসে এ ধরনের অনেক দোয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের ক্বিরাআতের পূর্বে পাঠ করতেন। যেমন-
إِنِّي وَجَهْتُ وَجْهِي لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ حَنِيفًا وَمَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالِمِينَ لَاشَرِيكَ لَهُ وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
আমি সেই মহান সত্তার দিকে একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরাচ্ছি যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও পৃথিবী এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবাণী, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু একমাত্র আল্লাহ তা'য়ালার জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই, আর এই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত।
হে আল্লাহ তা'য়ালা। তুমি সেই বাদশাহ যিনি ব্যতীত দাসত্ব লাভের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার বান্দা, আমি আমার নিজের ওপর অত্যাচার করেছি এবং আমি আমার গোনাহের ব্যাপারে স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমার সমূদয় গোনাহ মাফ করে দাও। নিশ্চয় তুমি ভিন্ন আর কেউ গোনাহসমূহ মাফ করতে পারেনা। তুমি আমাকে উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করো, তুমি ছাড়া আর কেউ উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করতে পারেনা, আমার দোষসমূহ তুমি আমার ভেতর থেকে দূরীভূত করো, তুমি ভিন্ন অন্য কেউ চারিত্রিক-দোষ অপসারিত করতে পারে না।
প্রভু হে! আমি তোমার আদেশ মানার জন্য উপস্থিত সদা প্রস্তুত, সামগ্রিক কল্যাণ তোমার হস্তে নিহিত। অকল্যাণ তোমার দিকে সম্পৃক্ত নয় অর্থাৎ মন্দ তোমার কাম্য নয়। আমি তোমারই এবং তোমারই দিকে আমার সকল প্রবণতা, তুমি কল্যাণময় এবং তুমি মহিমান্বিত আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হচ্ছি। (মুসলিম)
اللَّهُمَّ رَبِّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَائِيلَ فَاطِرِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ - أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
হে আল্লাহ তা'য়ালা! জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা অদৃশ্য এবং দৃশ্য সব বিষয়েই তুমি সুবিদিত। তোমার বান্দাগণ যেসব বিষয়ে পারস্পরিক মতভেদে লিপ্ত, তুমিই তার উত্তম ফয়সালা করে দাও। যেসব বিষয়ে তারা মতভেদ করেছে তন্মধ্যে তুমি তোমার অনুমতিক্রমে আমাকে যা সত্য সেদিকে পথ প্রদর্শন করো। নিশ্চয় তুমি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথপ্রদর্শন করে থাকো।
للهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا - اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا - اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللَّهِ بُكْرَةً وَأَصِيلاً أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ مِنْ نَفْخَهِ وَنَفْثِهِ، وَهَمْزِ
আল্লাহ তা'য়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ তা'য়ালা, সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ তা'য়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ তা'য়ালার জন্যই সকল প্রশংসা, অসংখ্য প্রশংসা, আল্লাহ তা'য়ালার জন্যই সকল প্রশংসা, আল্লাহ তা'য়ালার জন্যই সকল প্রশংসা। আল্লাহ তা'য়ালা সকালে ও সন্ধ্যায়, দিনে ও রাতে তথা সর্বক্ষণ পাক-পবিত্র (তিনবার)। অভিশপ্ত বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে আশ্রয় কামনা করছি, আশ্রয় কামনা করছি তার দম্ভ হতে, তার কুহকজাল ও তার কুমন্ত্রণা হতে। (আবু দাউদ)
আবু দাউদ হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করে অর্থাৎ ক্বিরাআতের পূর্বে বলতেন-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ ولا اله غَيْرُكَ
তুমি. পবিত্র, যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত হে আল্লাহ! তুমিই প্রশংসার উপযুক্ত, তুমি বরকত দানকারী এবং মহান, তোমার নাম ও মর্যাদা সর্বোচ্চে। তুমি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ্ নেই।
এই দোয়ার বাক্যগুলো ছোট হওয়ার কারণে এই দোয়াটিই সাধারণত অধিকাংশ লোকজন পাঠ করে থাকে। এই দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা'য়ালাকে লক্ষ্য করে নামায আদায়কারী বলছে, তুমি পবিত্র এবং যে কোনো ধরনের ভুল-ভ্রান্তি বা দোষ থেকে তুমি মুক্ত। একমাত্র তুমিই প্রশংসা লাভের অধিকারী। শুধুমাত্র তুমিই পারো বরকত দিতে এবং তোমারই নামই সর্বোচ্চে। তুমি ব্যতীত ইবাদাত, বন্দেগী, আরাধনা-উপাসনা লাভের অধিকারী কেউ নয়। তুমি ব্যতীত আইন-কানুন ও বিধান দানকারী আর কেউ নেই।
নামাযে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো আল্লাহর সম্মুখে উচ্চারণ করা হলো, আর নামায শেষ করেই প্রশংসা করা হচ্ছে অন্যের। বরকতের জন্য ধর্ণা দেয়া হচ্ছে মৃত মানুষের কবরে বা পীরের দরবারে। আইন-কানুন মেনে নেয়া হচ্ছে পৃথিবীর দার্শনিক বা চিন্তাবিদদের। এরপর তা'উজ ও তাসমিয়া পাঠ করেই সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা হয় এবং সূরা ফাতিহা ব্যতীত নামাযই হয় না।
সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করার পর মহাগ্রন্থ আল কোরআন থেকে নিজের জন্য যতটুকু সহজ ততটুকু আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে। নামাযে কোরআন থেকে তিলাওয়াত করা ফরজ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
فَاقِرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلوةَ
কোরআন থেকে যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ ততটুকু পাঠ করো। আর নামায প্রতিষ্ঠা করো। (সূরা মুয্যাম্মিল-২০)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, আমাদেরকে সূরা ফাতিহা এবং কোরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পাঠ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (আবু দাউদ)
নামাযের প্রত্যেক রাকাআতে সূরা ফাতিহার পরেই কোরআন থেকে পাঠ করার পরই রুকু সিজদায় যেতে হবে। তবে ব্যতিক্রম হলো, যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার ফরজ নামাযে। এসব নামাযের প্রথম দুই রাকাআতে সূরা ফাতিহার পরে কোরআন থেকে পাঠ করতে হবে এবং শেষের দুই বা এক রাকাআতে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করে রুকু সিজদায় যেতে হবে। বোখারী, মুসলিম ও আবু দাউদের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবেই নামায আদায় করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুবিধার কারণে মানুষ সাধারণত কোরআনের ত্রিশ পারার ছোট ছোট সূরাসমূহ নামাযে পাঠ করে।
এসব সূরায় কি বলা হয়েছে, তা নামায আদায়কারীকে কোরআনের তাফসীর থেকে জেনে নিতে হবে। যেসব সূরা নামাযে পাঠ করা হয়, তার অর্থ ও তাফসীর জানা থাকলে তা পাঠ করার সময় নিজের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে এবং নামায সুন্দর হবে। আর আল্লাহ তা'য়ালা সুন্দর নামাযই কবুল করবেন এবং বিনিময় দিবেন। সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করেই রুকু সিজদায় যথাযথভাবে যেতে হবে এবং রুকুর তাস্বীহ পাঠ করতে হবে-
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
সমস্ত দোষ-ত্রুটি থেকে আমার মহান রব মুক্ত।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বলতেন-'
سُبْحَانَ رَبِّي الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ
সমস্ত দোষ-ত্রুটি থেকে আমার মহান রব মুক্ত ও সপ্রশংসিত।
একথাগুলো স্পষ্ট উচ্চারণে সহীহভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধাভরে সমস্ত অন্তর দিয়ে মুখে উচ্চারণ করতে হবে। হাদীসের বর্ণনা অনুসারে এ কথাগুলো ন্যূনতম তিনবার উচ্চারণ করতে হবে। এরপর রুকু থেকে সোজা হওয়ার সময় বলতে হবে-
سمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
আল্লাহ তা'য়ালা তার কথা শুনেছেন, যে তাঁর প্রশংসা করেছে।
এরপর সোজা দাঁড়িয়ে বলতে হবে-
رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْدُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
হে আমাদের রব! সমস্ত প্রশংসা তোমারই।
নামাযের জামাআত হচ্ছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করাচ্ছেন। তিনি যখন রুকু থেকে ওঠার সময় বললেন-
سمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামায আদায়কারী একজন সাহাবী উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন-
رَبَّنَا وَ لَكَ الْحَمْدُ حَمْداً كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ
হে আমাদের রক্! তোমার জন্যই প্রশংসা, সর্বাধিক পবিত্র ও মোবারক প্রশংসা। নামায শেষ করে নবীজী পিছন ফিরে জানতে চাইলেন, তোমাদের মধ্যে কে এভাবে বললো? একজন সাহাবী জানালেন, তিনি এ কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তেত্রিশেরও অধিক ফেরেস্তাকে প্রতিযোগিতা করতে দেখেছি, কে সর্বাগ্রে এই কথাগুলো লিখবে। (বোখারী, আবু দাউদ)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু সিজদায় এবং রুকু থেকে সোজা হয়ে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তেন, যা নামায বিষয়ক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় এমনভাবে যেতে হবে যে, নিজের সমগ্র সত্বাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কুদরতী পায়ের ওপরে সোপর্দ করতে হবে। নিজেকে নিঃশেষে উজাড় করে বিলিয়ে দিতে হবে মহান আল্লাহ তা'য়ালার কুদরতি পদপ্রান্তে। মনের মধ্যে এ কথা জাগ্রত রাখতে হবে যে, আমি আমার মাথা আমার মহান রব-এর পায়ের ওপর রাখলাম। হাদীসের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বান্দাহ্ যখন আল্লাহ তা'য়ালাকে সিজদা দেয়, তখন আল্লাহ তা'য়ালা ও সেই বান্দার মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু করো এবং সিজদা করো আর তোমাদের রব-এর দাসত্ব করো। (সূরা হজ্জ-৭৭)
সিজদার সময় বান্দা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে পৌঁছে যায়। এরপর সিজদার তাসবীহ্ পাঠ করতে হয়-
سُبْحَانَ رَبِّي الأَعْلى
সমস্ত দোষ-ত্রুটি থেকে আমার মহান রব পবিত্র।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বলতেন-
سُبْحَانَ رَبِّي الأَعْلَى وَبِحَمْدِهِ
সমস্ত দোষ-ত্রুটি থেকে আমার মহান রব মুক্ত ও সপ্রশংসিত। নামাযে সিজদার মাধ্যমে এ কথারই স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে যে, হে আল্লাহ! তোমার সম্মুখে মাথানত করে দিলাম, তুমি যে বিধান অবতীর্ণ করেছো, সেই বিধানের সম্মুখেও মাথানত করে ঘোষণা করছি, তুমি যেমন মহান, পূত-পবিত্র তেমনি তোমার বিধানও পূত-পবিত্র ও কল্যাণকর। একমাত্র তোমার বিধানের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে, তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্যেই রয়েছে সর্বাঙ্গিন মঙ্গল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং সিজদায় বিভিন্ন ধরনের দোয়া করেছেন। এসব দোয়া হাদীসের কিতাবসমূহে সংরক্ষিত রয়েছে। সিজদায় গিয়ে যেসব দোয়া করা হয়, তা কবুলের নিশ্চয়তা রয়েছে। এক সিজদা দিয়ে প্রশান্তির সাথে বসতে হবে, তাড়াহুড়া করে দ্বিতীয় সিজদা দেয়া যাবে না। এক সিজদা দিয়ে সোজা হয়ে বসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ধরনের দোয়া পাঠ করেছেন। এর মধ্যে একটি দোয়া হলো-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاجْبُرْنِي وَارْفَعْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার রহম করো, আমাকে বলবান করো, আমার সম্মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করো, আমাকে সুস্থ রাখো এবং আমাকে জীবিকা দান করো। (আবু দাউদ) এভাবে দুই রাকাআত, তিন রাকাআত বা চার রাকাআত নামায আদায় করতে হবে, হাদীসে যেসব তাশাহুদ ও দরুদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা পাঠ করে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করতে হবে। ফজর থেকে শুরু করে ইশার নামায শেষে বিতরের নামায আদায় করতে হবে। যারা তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেন, তারা এই নামায শেষে বিতিরের নামায আদায় করবেন। বিতিরের নামাযে দোয়া কুনুত পাঠ করতে হয়। এক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুম বর্ণনা করেছেন, আমাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে নামাযে কুনূত পড়ার জন্য শিখিয়েছেন-
اللهم اهدني فيمَنْ هَدَيْت وعافني فيمَنْ عَافَيْت وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِني شَرِّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضَى وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ إِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছো, আমাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। যাদেরকে তুমি ক্ষমা ও সুস্থতা দান করেছো, আমাকেও ক্ষমা ও সুস্থতা দান করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছো, আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করো। তুমি যা কিছু প্রদান করেছো, আমার জন্য তাতে বরকত দান করো। তোমার মন্দ ফয়সালা থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমিই প্রকৃত ফায়সালাকারী আর তোমার ওপর কোনো ফায়সালাকারী নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো, তাকে কেউ অপদস্থ করতে পারে না। যে তোমার শত্রু হয়েছে, তাকে সম্মান দান করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আমারে রব, অসীম প্রাচুর্যশীল তুমি, অতিশয় মহান।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম উল্লেখিত দোয়া কুনূতটিই সর্বোত্তম বলে অভিহিত করেছেন। আবার অনেকে নিম্নের কুনুতটিও উত্তম বলেছেন-
اللَّهُمَّ إِنَّ نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَا تَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوا رَحْمَتَكَ وَخْشَى عَذَابَكَ إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِق
হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, তোমারই প্রতি ঈমান পোষণ করি, তোমারই উপর ভরসা করি এবং সর্বপ্রকার মহোত্তম গুণাবলী তোমারই প্রতি আরোপ করি। আমরা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে জীবন-যাপন করি, তোমার অকৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন করি না। আমরা তোমার অবাধ্য লোকদের ত্যাগ করি এবং তাদের সাথে সম্পর্ক রাখিনা। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায আদায় করি এবং তোমাকেই সিজদা করি। আমরা তোমারই পথে অগ্রসর হই, তোমারই পথে এগিয়ে চলি। তোমার রহমতের আমরা আকাঙ্খী, তোমার আযাবকে আমরা ভয় করি আর তোমার আযাব শুধুমাত্র কাফিরদের জন্যেই।
দোয়া কুনুতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলা হচ্ছে, একমাত্র তোমাকে ব্যতীত আর কারো ওপর আমরা ভরসা করি না, সর্বাবস্থায় আমরা তোমারই প্রতি ভরসা করি। আমরা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে পৃথিবীতে জীবন-যাপন করছি, কখনো আমরা অকৃতজ্ঞতার পথে অগ্রসর হই না। যারা তোমার প্রতি অকৃতজ্ঞ, তোমার বিধান মানে না, তোমার বিধানের সাথে বিরোধিতা করে, তোমার দেয়া জীবন বিধান ত্যাগ করে অন্য কোনো বিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করে, আমরা তাদের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখি না। এ ধরনের নানা কথা মহান আল্লাহর সম্মুখে বলা হয়। নামায শেষ করেই ঐ সবলোকদের সাথেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলা হয়, তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়, তাদেরকেই সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়, যারা ইসলামের পরিবর্তে মানুষের বানানো মতবাদ-মতাদর্শ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালায়। এভাবে যারা নামাযে বলা কথাগুলোর সাথে নিজেরাই বাস্তব কর্মের মাধ্যমে স্ববিরোধিতা করে থাকে, তাদের নামাষ অবশ্যই মহান আল্লাহ কবুল করবেন না এবং এই নামায কোনোক্রমেই ব্যক্তিকে অপরাধ থেকে বিরত রাখবে না। আখিরাতের ময়দানে এসব নামাযীর দিকে মহান আল্লাহ্ তা'য়ালা দৃষ্টি দিবেন না এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদেরকে নিজের উম্মত হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন না।
আরবী ইবাদাত শব্দের ভুল অর্থ গ্রহণ করার কারণেই একশ্রেণীর নামাযীর 'বাস্তব জীবনধারায় বৈপরিত্য দেখা যায়। ইবাদাতের যে ভুল অর্থ গ্রহণ করেছে তাহলো-তারা মনে করেছে, নামায-রোজা, হজ্জ আদায় করা, কোরআন তিলাওয়াত করা, যিকির করা, তস্বীহ জপা ইত্যাদি হলো ইবাদাত। এসব পালন করার অনুষ্ঠান যখন শেষ হয়, তখন তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন মনে করে। এই স্বাধীন জীবনে তারা আল্লাহর বিধানের প্রতিটি ধারাকে নিষ্ঠুরভাবে লংঘন করে। যারা রোজা পালন করে তারা বছরে একটি মাস রোজা পালন করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায যারা পড়ে তারা নামাযের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মনে করে, ইবাদাতের যাবতীয় হক আদায় হয়ে গেল।
এটাই যদি ইবাদাত হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতে কতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয়? খুব বেশী হলে দেড় ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এই নামায আদায়ের নামই যদি ইবাদাত হয়, তাহলে এ কথাই প্রমাণিত হলো যে, একজন মানুষ ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র দেড় ঘন্টার জন্য আল্লাহর গোলাম। অবশিষ্ট সাড়ে ২২ ঘন্টার জন্য সে শয়তানের গোলাম।
এভাবে যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র দেড় ঘন্টার জন্য আল্লাহর গোলামী যে করলো তাহলে সে ব্যক্তি প্রতিমাসে মাত্র ৪৫ ঘন্টা আল্লাহর গোলামী করলো। এক বছরে সে ৫৪০ ঘণ্টা গোলামী করলো আল্লাহর। মানুষ যদি গড় আয়ু লাভ করে ৬০ বছর, তাহলে সে গোটা জীবনকালে ৩২৪০০ ঘন্টা গোলামী করলো। ২৪ ঘন্টায় একদিন অনুসারে মানুষ ৬০ বছরের জীবনকালে মাত্র ১৩৫০ দিন অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরের সামান্য কিছু বেশী সময় আল্লাহর গোলামী করলো আর বাকি সাড়ে ৫৬ বছর শয়তানের গোলামী করলো।
একমাস রোজা পালন করার নামই যদি ইবাদাত হয়, তাহলে বছরের অবশিষ্ট ১১ মাসের জন্য সে শয়তানের গোলাম। ৬০ বছরের জীবনকালে নিয়মিতভাবে প্রতি রমজান মাসে রোজা আদায় যদি করা হয়, তাহলে প্রতি বছরে ১ মাস হিসাবে মাত্র ৬০ মাস অর্থাৎ ৫ বছর হয়। মানুষ তার ৬০ বছরের জীবনকালে মাত্র ৫ বছরের জন্য আল্লাহর গোলাম হবে আর অবশিষ্ট ৫৫ বছর শয়তানের গোলামী করবে?
কোন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আপনি শয়তানের গোলাম বা চাকর হতে প্রস্তুত রয়েছেন কি না? এই প্রশ্নের উত্তরে একজন মুসলমানও স্বীকৃতি দিবে না যে, সে শয়তানের গোলামী করবে। সুতরাং ইবাদাতের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, শুধুমাত্র নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত আদায় করার নামই ইবাদাত নয়। এগুলো অবশ্য করণীয় আনুষ্ঠানিক ইবাদাত, এগুলো তো অবশ্যই আদায় করতে হবে। নামায-রোজা, হজ্জ-যাকাত হলো ইবাদাতের একটি অংশ। ইবাদাতের যে বিশাল পরিধি রয়েছে, তার কিছু মাত্র অংশ হলো নামায-রোজা। এগুলো একমাত্র ইবাদাত নয়। এই নামায-রোজা, হজ্জ, যাকাত মানুষকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে ইবাদাতের যোগ্য করে গড়ে তোলে। এগুলো যারা আদায় করে না, তারা ইবাদাতের যোগ্য কোনক্রমেই হতে পারে না।
সৈনিক জীবেন যেমন কুচকাওয়াজ করাই একমাত্র কাজ নয়, যুদ্ধের যোগ্য সৈনিক হিসাবে গড়ার লক্ষ্যেই তাদেরকে নানা ধরনের ট্রেনিং দেয়া হয়, কুচকাওয়াজ করানো হয়। তেমনি নামায-রোজা নিষ্ঠার সাথে আদায় করার নির্দেশ এ জন্য দেয়া হয়েছে যে, মুসলমানদের বৃহত্তর ইবাদাতের ক্ষেত্রে যে দায়িত্ব পালন করতে হবে, সেই দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে যোগ্যতার সাথে যেন পালন করতে সক্ষম হয়, সেই যোগ্যতা যেন মুসলমান অর্জন করতে পারে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমান যেন আল্লাহর বিধান অনুসরণের অভ্যাস সৃষ্টি করতে পারে, এ জন্যই নামায-রোজা আদায় করা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে।
সুতরাং ইবাদাত বলতে কি বুঝায়, পবিত্র কোরআন কোন ধরনের কর্মকান্ডকে ইবাদাত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, কোন ইবাদাত প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে পৃথিবীতে নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছিল, এসব দিক বুঝতে হবে। ইবাদাত সম্পর্কে যদি ধারণা অর্জন করা না যায়, তাহলে মানুষ হিসাবে আমাদের পরিচয় দেয়াই বৃথা। কারণ মানুষকে আল্লাহ তা'য়ালা সৃষ্টিই করেছেন, তাঁর ইবাদাত করার জন্য, আল্লাহর গোলামী করার জন্য।
0 Comments