নবী করীম (সা:) কে আল্লাহ তা'য়ালা যেসকল মু'জিযা দান করে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন তার মধ্যে পবিত্র কুরআন মাজীদ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিযা। তিনি প্রায় চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তাঁর আনীত কুরআন অবিকৃতই রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত অবিকৃতই থাকবে ইনশাআল্লাহ। কুরআন নামক যে শ্রেষ্ঠ মু'জিযা আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে দান করেছিলেন, সে কুরআন পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকবে। কুরআনের পূর্বে যে সকল কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছিলো, যেসব ভাষায় তা অবতীর্ণ করা হয়েছিলো সেসব ভাষার অস্তিত্বও পৃথিবী থেকে বহু পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ধর্মগ্রন্থের নামে যেসব কিতাব বর্তমান পৃথিবীতে প্রদর্শন করা হয়, এসব গ্রন্থের মধ্যে স্রষ্টার অবতীর্ণ করা শব্দ কোল্টি তা নির্ণয় করতে সক্ষম এমন কেউ ঐসব ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও নেই। বিকৃতি ঘটিয়ে এসব গ্রন্থের বিষয়বস্তু এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যে, প্রকৃত সত্য জানার কোনো উপায়ই নেই।
পৃথিবীতে এমন একটি গ্রন্থেরও অস্তিত্ব নেই, যে গ্রন্থের দাড়ি, কমা, সেমিক্লোন মুখস্থ করে রাখা যেতে পারে। ব্যতিক্রম শুধু পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রে। কুরআন নামক সুবিশাল এ অলৌকিক গ্রন্থটি যাঁর ওপর অবতীর্ণ করা হলো, তাঁকে বলা হয়েছিলো, 'আপনি শুধু শুনুন, আপনার হৃদয়পটে এ কুরআন অঙ্কিত করার দায়িত্ব আমার এবং এর ব্যাখ্যা জানিয়ে দেয়ার দায়িত্বও আমার'।
নবী করীম (সা:) শুধু কুরআন শুনলেন, মাত্র একবার শোনার সাথে সাথেই তিনি তা হুবহু তিলাওয়াত করার মর্যাদা অর্জন করলেন এবং উপস্থিত লোকদেরকে তা তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দিলেন। আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ মু'জিযা মহাগ্রন্থ আল কুরআন। তাঁর মুখ থেকে সমকালীন নারী-পুরুষ যাঁরাই এ কুরআন শুনলেন তাঁরাই এ গ্রন্থটি হুবহু মুখস্থ করলেন।
সেই ধারাবাহিকতায় বিগত চৌদ্দশত বছরব্যাপী অসংখ্য অগণিত নারী-পুরুষ এ কুরআন স্মৃতিতে ধারণ করেছে, বর্তমানেও করছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত করতে থাকবে। এ কুরআন এক জীবন্ত মু'জিযা এবং এই বিস্ময়কর কিতাব যাঁর প্রতি অবতীর্ণ করা হলো, তিনিই এ কিতাব সম্পর্কে মন্তব্য করলেন-
لاتُحْصَى عَجَائِبُه وَلَا تُبْلَى غَرَائِبُه فِيهِ مُصَابِيحُ الْهُدَى وَمَنَارِ الْحِكْمَةِ -
'এ কুরআন কখনো পুরাতন বা জীর্ণ হবে না, এর আশ্চর্য ধরনের বিস্ময়কারিতা কখনো শেষ হবে না, কুরআন হচ্ছে হিদায়াতের মশাল এবং এই কিতাব জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সুউচ্চ মিনার যেনো কূল-কিনারাহীন এক অগাধ জলধী। এর ভেতরে রয়েছে অফুরন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের তত্ত্ব ও অনায়ত্ব অসংখ্য দিক-দিগন্ত। মানবীয় অনুসন্ধিৎসা অফুরন্ত এই জ্ঞান-ভাণ্ডার থেকে নিত্য-নতুন তত্ত্ব উদ্ধার করতে সক্ষম। প্রত্যেক অনুসন্ধানেই প্রতিটি যুগের সুক্ষ্ম চিন্তাবিদ ও গবেষকগণ মানব জীবনের জন্য যুগোপযোগী আইন-বিধান ও তত্ত্ব উদ্ধার করতে সক্ষম হবেন, যদি তাঁরা প্রতিটি পর্যায়ে অভ্রান্ত পথে দৃঢ় থাকেন'।
এটা সেই বিস্ময়কর কিতাব যা নিজেই নিজের ব্যাখ্যা প্রদান করে। এই কুরআন নামক জীবন্ত মু'জিযা থেকে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তা অবশ্যই সত্য সঠিক এবং বক্রতামুক্ত। নবী করীম (সা:) বলেছেন-
مَنْ قَلَ بِهِ صَدَقَ وَ مَنْ عَمِلَ بِهِ أُجِرَ وَ مَنْ حَكَمَ بِهِ عَدَلَ وَ مَنْ دَعَا إِلَيْهِ هُدَى إِلَى صِرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
'এই কুরআন থেকে যে লোক কথা বলে সে সত্য কথা বলে। যে এর ওপর আমল করবে সে প্রতিদান লাভ করবে। যে এর সাহায্যে বিচার-মীমাংসা করবে সে ন্যায় বিচার করবে। যে এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সে সহজ সরল পথের দিকে আহ্বান জানিয়েছে'।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা এ কুরআন তাঁর রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন এবং এ কুরআন সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন-
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍع
আমি এ কুরআন উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ মাধ্যম বানিয়েছি। এখন উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সূরা ক্বামার-৪০)
মানুষের জন্য এ কুরআন হৃদয়ঙ্গম করা সহজ করা হয়েছে এবং পবিত্র কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হলেও তার বর্ণনাশৈলী, বাচনভঙ্গী পৃথিবীতে প্রচলিত আরবী ভাষার অনুরূপ নয়। এই কিতাবের ভাষা প্রচলিত আরবী ভাষা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং কুরআনের ভাষা নির্ধারণ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। এই কুরআনের ভাষা যেমন আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে এসেছে তেমনি কুরআন যে ভাব প্রকাশ করে, সে ভাবও এসেছে আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকেই। পবিত্র কুরআন তার বিবৃত বিষয়, তথ্য ও তত্ত্ব সম্পর্কে সকল সন্দেহ ও সংশয়মুক্ত বলে স্পষ্ট ঘোষণাই শুধু দেয়নি, এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে-
وَإِنْ كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّنْ مِّثْلِهِ ص
আমার বান্দার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি, তা আমার প্রেরিত কি-না, সে বিষয়ে তোমাদের মনে যদি কোনো প্রকার সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে এর অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে আন।
(সূরা বাকারা-২৩)
কোনো কোনো মানুষ এ ধারণা পোষণ করে যে কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহ তা'য়ালা যে চ্যালেঞ্জ প্রদান করেছেন, সে চ্যালেঞ্জ শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনের আঙ্গিক বৈশিষ্ট, সাহিত্যিক মান ও সৌন্দর্য এবং উচ্চাঙ্গের ভাষার ব্যাপারে প্রযোজ্য। এ ধরনের ভুল ধারণা যারা পোষণ করে, তারা মূলতঃ কুরআনের গভীরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই বিভ্রান্তিকর চিন্তাধারায় আবর্তিত হয়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর কুরআনের মর্যাদা এসব ক্ষুদ্র চিন্তা-চেতনা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে। কুরআনের শব্দ, ভাষা এবং সাহিত্যিক মান, বর্ণনাশৈলীর দিক দিয়ে যে অনবদ্য, অতুলনীয় এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। পক্ষান্তরে যে কারণে এ কথা বলা হয়েছে যে, 'মানবীয় চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে এ ধরনের কিতাব রচনা করা সম্ভব নয়' সে কারণগুলো পবিত্র কুরআনে আলোচিত বিষয়াদি, কুরআন কর্তৃক উপস্থাপিত জীবনাদর্শ, জ্ঞান- বিজ্ঞান, তথ্য ও তত্ত্বসমূহ। কুরআন যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছে, যে শিক্ষা মানব জাতির সম্মুখে পেশ করেছে, যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বার মানব সভ্যতার সামনে উন্মোচন করেছে, যে আদর্শের দিকে মানব জাতিকে আহ্বান জানাচ্ছে, তা কোনো মানবীয় মন- মস্তিষ্ক কল্পনাও করতে পারে না।
শুধু মানব জাতিই নয়, জ্বিন ও মানব জাতি সম্মিলিতভাবে কিয়ামত পর্যন্তও যদি চেষ্টা- সাধনা করতে থাকে, তবুও আল্লাহ তা'য়ালার নাযিলকৃত কুরআনের অনুরূপ কোনো কিতাব রচনা করতে সক্ষম হবে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُوْنَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا -
আপনি বলে দিন, মানব ও জ্বিন জাতি সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে কুরআনের মতো একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তবুও তারা আনতে সক্ষম হবে না, তারা পরস্পরের সহযোগী হয়ে গেলেও। (সূরা বনী ইসরাঈল-৮৮)
মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে এমন একটি বিস্ময়কর কিতাব দান করলেন, যে কিতাবের সামনে পৃথিবীর সকল কবি-সাহিত্যিকদের কাব্য ও সাহিত্য প্রতিভা চিরদিনের জন্য ম্লান হয়ে গেল। আল্লাহ পবিত্র কুরআন সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করলেন-
أَمْ يَقُولُوْنَ افْتَرَاهُ ط قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِّنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ ط
অথবা এরা কি এ কথা বলে, (মুহাম্মাদ স. নামের ব্যক্তি) কুরআন নিজে নিজে রচনা করে নিয়েছে! (হে নবী) আপনি তাদেরকে বলুন, তোমরা যদি তাই মনে করো তাহলে নিয়ে এসো এর অনুরূপ মাত্র দশটি স্বরচিত সূরা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদের তোমরা সাহায্যের জন্য ডাকতে পারো তাদের ডেকে নাও, যদি তোমরা তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও। (সূরা হুদ-১৩)
فَلْيَا تُوا بحديث مثله إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
তারা নিজেদের কথায় যদি সত্যবাদী হয় তাহলে তারাও এ কুরআনের মতো কিছু একটা রচনা করে নিয়ে আসুক না! (সূরা আত্ তুর- ৩৪)
মানুষ যে জ্ঞান, বিবেক-বুদ্ধি ও প্রতিভার অধিকারী তা প্রয়োগ করে এ ধরনের মর্যাদাপূর্ণ ও বিস্ময়কর একটি কিতাব প্রণয়ন করা আদৌ সম্ভব নয়। এ ধরনের একটি কালাম রচনা করা মানুষের শক্তি ও প্রতিভা সীমার বাইরের বিষয়। আল্লাহর এই চ্যালেঞ্জ কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা কোনো দেশের জনগণের জন্যই শুধু নয়- নয় তা কালের গণ্ডীতে আবদ্ধ। আল্লাহর চ্যালেঞ্জ সারা পৃথিবীবাসীর জন্য এবং অনন্তকালব্যাপী। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মতো সাহস সেই অতীতকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্তও কেউ প্রদর্শন করেনি, অনাগত কালেও কেউ প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে না। মহান আল্লাহ যে শব্দ, অক্ষর, বর্ণনাশৈলী, রচনারীতি, বাচনভঙ্গী সহযোগে যখন অবতীর্ণ করেছিলেন, বর্তমান কাল পর্যন্তও তার একটি অক্ষরও পরিত্যক্ত হয়নি, কিয়ামত পর্যন্তও হবে না।
এই পৃথিবীতে আল কুরআনই হলো একমাত্র গ্রন্থ যা মানব জাতির সমুদয় চিন্তা-চেতনা, চরিত্র-নৈতিকতা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এক কথায় মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর যে ব্যাপকতর, সুগভীর ও বিপ্লবাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছে, এ ধরনের সর্বব্যাপক ও সর্বাত্মক প্রভাব বিস্তারকারী গ্রন্থের অস্তিত্ব পৃথিবীতে আর একটিও নেই। প্রথম পর্যায়ে এই কুরআন পৃথিবীর একটি জাতির ওপরে প্রভাব বিস্তার করে তাদের জীবন ধারার আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে। তারপর কুরআনের রঙে রঙিন সেই জাতি গোটা পৃথিবীর একটি বিরাট অংশের মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে এবং পৃথিবীর সকল জাতির ওপরে কম-বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
এই কুরআন পৃথিবীতে যে বিপ্লবাত্মক ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে, তা পৃথিবীর কোনো একটি আদর্শ বা গ্রন্থের পক্ষে পালন করা সম্ভব হয়নি। কুরআন শুধুমাত্র সজ্জিত অক্ষরের আকারে কাগজের পৃষ্ঠায় আবদ্ধ হয়ে থাকে না, বরং মানুষের বাস্তব কর্মের পৃথিবীতে এর এক একটি শব্দ, প্রভাব, শিক্ষা, চিন্তাদর্শ ও মতবাদের অনুপম রূপায়নে সম্পূর্ণ ভিন্নতর একটি সভ্যতা ও সংস্কৃতি নির্মাণ করে এক দৃষ্টান্তহীন কর্ম সম্পাদন করেছে এবং এখনো করছে। কুরআন যখন অবতীর্ণ হয়েছিল তখন তার যে প্রভাব ও বিপ্লবাত্মক ভূমিকা ছিল, আজও তা বিদ্যমান রয়েছে। সে যুগে কুরআনের শিক্ষা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে যে পাঠক পাঠ করতো, কুরআন তার পাঠককে সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে বাধ্য করতো, কুরআনের এই অতুলনীয় মু'জিযা, প্রভাব ও ক্ষমতা বর্তমানেও যেমন বিদ্যমান রয়েছে, অনাদিকাল পর্যন্তও বিদ্যমান থাকবে।
সে যুগে যারা কুরআনের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলো, তারা এটা স্পষ্ট অনুভব করেছিল যে, মুহাম্মাদ (সা:) কুরআনের যে বাণী প্রচার করছেন তার প্রভাব অপ্রতিরোধ্য। এ কারণে তারা সাধারণ মানুষকে এই কুরআন শোনা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিতো। মক্কার ইসলাম বিরোধিদের ইসলাম নির্মূলের অগণিত পরিকল্পনার মধ্যে একটি পরিকল্পনা ছিল এই যে, রাসূল যখনই কোনো সমাবেশে মানুষকে কুরআনের কথা শোনাবেন, তখনই সেখানে শোরগোল সৃষ্টি করে কুরআন শোনানোর পরিবেশ নষ্ট করে দেয়া। নানাভাবে কুরআনের মাহফিলে বাধা সৃষ্টি করা, যেন মানুষের ওপরে এই কুরআন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। ইসলাম বিরোধী শক্তি এই অস্ত্র শুধু সে যুগেই প্রয়োগ করেনি, বর্তমানেও তারা তাদের সেই পুরনো অস্ত্র প্রয়োগ করে কুরআন শোনা থেকে মানুষকে বিরত রাখার অপচেষ্টা করে। ঘৃণ্য
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা কুরআনের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে থাকে। সে যুগে ইসলাম বিরোধিরা সাধারণ মানুষকে কুরআনের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য বলতো-
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوْا لِهَذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ
এসব কাফেররা বলে, এ কুরআন তোমরা কখনো শুনবে না। আর যখন তা শুনানো হবে তখন শোরগোল সৃষ্টি করবে। হয়তো এভাবে তোমরা বিজয়ী হবে। (হা-মীম আস্ সেজদা-২৬)
কুরআন কী অসাধারণ প্রভাব ক্ষমতার অধিকারী বিস্ময়কর কিতাব, এই কিতাবের দাওয়াত যিনি দিচ্ছেন তিনি কেমন অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তাঁর এই ব্যক্তিত্বের সাথে উপস্থাপনার ভঙ্গি কেমন বিস্ময়করভাবে কার্যকর হচ্ছে, তা ইসলাম বিরোধী নেতারা স্পষ্ট অনুভব করতে পারতো। তারা এ কথা বিশ্বাস করতো, এ ধরনের উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির মুখ থেকে এমন চিত্তাকর্ষক, হৃদয়গ্রাহী মনোমুগ্ধকর ভঙ্গিতে এই দৃষ্টান্তহীন কালাম যার কর্ণকুহরে প্রবেশ করবে, সে ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত কুরআনের আন্দোলনের প্রতি দুর্বল হবেই হবে। অতএব যে প্রকারেই হোক, কুরআনের মাহফিল অনুষ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। কিন্তু যারা এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতো, স্বয়ং তারাই নিজেদের অজান্তে আল্লাহর কুরআনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়তো।
0 Comments