যাকাতের বর্ণনা
জানা উচিত, আল্লাহ তাআলা যাকাতকে ইসলামের একটি স্তম্ভ করেছেন এবং নামাযের পর এর কথাই উল্লেখ করেছেন। বলা হয়েছে:
اقِيمُوا الصلوة وأتُو الزكوة .
অর্থাৎ, তোমরা নামায কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর।
রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:
بنى الاسلام على خمس شهادة أن لا اله الله وان محمدا عبده ورسوله واقام الصلوة وايتاء الزكوة .
অর্থাৎ, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রসূল, নামায কয়েম করা এবং যাকাত প্রদান করা।
যারা যাকাত প্রদান করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিবাণী উচ্চারণ করেছেন। বলা হয়েছে:
وَالَّذِينَ يَكْتُرُونَ الذَهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرُهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ .
অর্থাৎ, যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।
এ আয়াতে আল্লাহর পথে ব্যয় করার অর্থ যাকাত প্রদান করা। আহনাফ ইবনে কয়স (রাঃ) বলেন: আমি কযেকজন কোরায়েশের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম, এমন সময় হযরত আবু যর (রাঃ) সেখান দিয়ে গমন করলেন। তিনি বললেন: কাফেরদেরকে শুনিয়ে দাও একটি দাগের খবর, যা তাদের পিঠে লাগবে এবং পাঁজরের হাড্ডি হয়ে বের হবে। আরেকটি দাগ তাদের গ্রীবায় লাগবে এবং কপাল পার হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি বললেন: আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এমন সময়ে পৌঁছলাম, যখন তিনি কাবা গৃহের ছায়ায় উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেন: কাবার পালনকর্তার কসম, তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত। আমি আরজ করলাম : হুযুর, কাদের কথা বলছেন? তিনি বললেন: যাদের কাছে প্রচুর ধন-সম্পদ রয়েছে। কিন্তু যারা ডানে, বামে, সম্মুখে ও পেছনে ধন-সম্পদ ছড়ায় এবং খয়রাত করে (তাদের কথা আলাদা), এরূপ লোকের সংখ্যা খুব কম। তিনি আরও বললেন: যে উটওয়ালা, ছাগলওয়ালা ও গরুওয়ালা তাদের যাকাত প্রদান করে না, কেয়ামতের দিন এসব জন্তু খুব বড় ও মোটাতাজা হয়ে আসবে এবং এ ব্যক্তিকে শিং দ্বারা গুঁতো মারবে আর খুর দ্বারা পিষ্ট করবে। যখন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল জন্তু তাকে মারা শেষ করবে, তখন পুনরায় এমনিভাবে শুরু করবে। মানুষের মধ্যে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত এই আযাব অব্যাহত থাকবে।
যাকাতের প্রকার ও ওয়াজেব হওয়ার কারণ
ধন-সম্পদের দিক দিয়ে যাকাত ছয় প্রকার। নিম্নে প্রত্যেক প্রকার আলাদা আলাদা বর্ণনা করা হচ্ছে।
প্রথম প্রকার- গৃহপালিত জন্তুর যাকাত প্রত্যেক মুসলমান স্বাধীন ব্যক্তির উপর ওয়াজেব। তার বালেগ ও বুদ্ধিমান হওয়া শর্ত। এখন যে চতুষ্পদ জন্তুর উপর যাকাত ওয়াজেব হয় তার জন্যে শর্ত পাঁচটি; প্রথমতঃ বিশেস চতুষ্পদ জন্তু হওয়া। কেননা, যাকাত কেবল উট, গরু ও ছাগলের মধ্যে ফরয। ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার মধ্যে ফরয নয়। দ্বিতীয়: জঙ্গলে ঘাস খাওয়া; কেননা, যেসকল জন্তু গৃহেই ঘাস খায়, সেগুলোর উপর যাকাত নেই। তৃতীয়তঃ এক বছর সময় অতিবাহিত হওয়া। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
لازكوة الا في مال حتى يحول عليه الحول .
অর্থাৎ, যে মালের উপর দিয়ে এক বছর অতিবাহিত হয় না, তাতে যাকাত নেই।
এ বিধানে বাচ্চা জন্তু বড় জন্তুর অনুগামী হয়। অর্থাৎ, বড় জন্তুর উপর দিয়ে এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলে বাচ্চাদেরও যাকাত দিতে হবে, যদিও সেগুলোর এক বছর পূর্ণ না হয়। বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যা বিক্রয় করে দেয়া হয় অথবা দান করা হয়, তা হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে না। চতুর্থতঃ মালের উপর পূর্ণ মালিকানা শর্ত। ফলে হারানো মালের যাকাত দেয়া ওয়াজেব নয়, যে পর্যন্ত তা পুনরায় হস্তগত না হয়। হস্তগত হলে অতীত দিনেরও যাকাত ওয়াজেব হবে। যার কর্জ তার সম্পূর্ণ মালের অধিক, তার উপর যাকাত নেই। কেননা, এরূপ মালের কারণে সে ধনী নয়। এ মাল প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে তাকে ধনী বলা যেত। পঞ্চমতঃ নেসাব পূর্ণ হওয়া। এটা প্রত্যেক চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে আলাদা আলাদা। উদাহরণতঃ উটের সংখ্যা পাঁচ না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত নেই। উট পাঁচটি হলে তাতে পূর্ণ এক বছর বয়সের একটি ভেড়া অথবা পূর্ণ দু'বছর বয়সের একটি ছাগল যাকাতস্বরূপ দিতে হবে। দশটি উটে দু'টি, পনরটিতে তিনটি এবং বিশটিতে চারটি ছাগল দিতে হবে। উট পঁচিশটি হলে তাতে একটি বিনতে মাখায অর্থাৎ উটের মাদী বাচ্চা, যা দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করে দিতে হবে। ছত্রিশটি উটে একটি বিনতে লাবুন, অর্থাৎ উটের মাদী বাচ্চা, যা তৃতীয় বছরে পদার্পণ করে দিতে হবে। ছেচল্লিশটি উটে একটি হিক্কা অর্থাৎ, চতুর্থ বছরের মাদী উট দিতে হবে। একষট্টিটি উটে জিযআ, অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়সের একটি উষ্ট্রী দিতে হবে। ছিয়াত্তরে দুটি বিনতে লাবুন, একানব্বইয়ে দু'হিক্কা এবং একশ' একুশ উটে তিনটি বিনতে লাবুন দিতে হবে। এর পর উটের সংখ্যা একশ' ত্রিশ হয়ে গেলে প্রতি পঞ্চাশটিতে একটি হিক্কা এবং প্রতি চল্লিশটিতে একটি বিনতে লাবুন যাকাত দিতে হবে। এই হিসাবে একশ' ত্রিশটিতে একটি হিক্কা ও দুটি বিনতে লাবুন যাকাত দিতে হবে। গাভী ও বলদে ত্রিশটি হওয়া পর্যন্ত যাকাত নেই। ত্রিশটি হয়ে গেলে একটি তবী (দ্বিতীয় বছরে উপনীত নর বাছুর) যাকাত দিতে হবে। চল্লিশটি হলে একটি মুসিন্না অর্থাৎ, যে মাদী বাছুর তৃতীয় বছরে পদার্পণ করে দিতে হবে। ষাটটি হলে দুটি তবী দিতে হবে। এর পর প্রত্যেক চল্লিশটিতে একটি মুসিন্না ও প্রত্যেক ত্রিশটিতে একটি তবী যাকাত দিতে হবে। চল্লিশটি না হওয়া পর্যন্ত ছাগল ভেড়ার মধ্যে যাকাত নেই। চল্লিশটি হলে তাতে একটি ভেড়ার 'জিযআ' (পূর্ণ এক বছরের ভেড়া) অথবা ছাগলের 'ছানিয়া' (পূর্ণ দু'বছরের ছাগল) দিতে হবে। এরপর একশ' বিশ পর্যন্ত এ হার অব্যাহত থাকবে। একশ' একুশটি হলে দুশ' পর্যন্ত দু'টি ছাগল দিতে হবে। দুশ' এক হয়ে গেলে তিনশ' নিরানব্বই পর্যন্ত তিনটি ছাগল এবং চারশ' হয়ে গেলে চারটি ছাগল দিতে হবে। অতঃপর প্রতি শ'তে একটি করে ছাগল দিতে হবে। নেসাবের মধ্যে দু'শরীকের যাকাত এক মালিকের মতই হবে। উদাহরণতঃ দু'ব্যক্তির শরীকানায় চল্লিশটি ছাগল থাকলে তাদের উপর এক ছাগলই ওয়াজেব হবে এবং তিন ব্যক্তির শরীকানায় একশ' বিশটি ছাগল থাকলে সকলের উপর এক ছাগলই ওয়াজেব হবে। অথচ আলাদা করলে প্রত্যেক ব্যক্তির ভাগে চল্লিশটি করে ছাগল পড়ে এবং তাতে একটি করে ছাগল ওয়াজেব হতে পারে। পালের মধ্যে সুস্থ জন্তু থাকলে অসুস্থ জন্তু যাকাতস্বরূপ গ্রহণ করা জায়েয নয়। ভাল জন্তুর মধ্যে ভাল এবং মন্দ জন্তুর মধ্যে মন্দ জন্তুই নিতে হবে।
দ্বিতীয় প্রকার: খাদ্য জতীয় ফসলের যাকাত। এরূপ ফসল আটশ' সের অর্থাৎ বিশ মণ হলে তাতে দশ ভাগের একভাগ যাকাত দিতে হবে। ফলমূল ও তুলার মধ্যে যাকাত নেই। খোরমা ও কিশমিশ শুষ্ক অবস্থায় বিশ মণ হলে তাতে যাকাত ওয়াজেব।
তৃতীয় প্রকার: রৌপ্য ও স্বর্ণের যাকাত। খাঁটি রৌপ্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা হয় এবং এক বছর অতিবাহিত হল, তার যাকাত চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। রৌপ্য আরও বেশী হলে এ হিসাবেই যাকাত ওয়াজেব হবে, যদিও এক দেরহাম বেশী হয়। স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত তোলা। এতেও বছরান্তে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত ওয়াজেব। এক রতি বেশী হলেও এ হিসাবেই যাকাত দিতে হবে। পক্ষান্তরে নেসাব থেকে এক রতি কম হলেও যাকাত ওয়াজেব হবে না।
চতুর্থ প্রকার: পণ্য দ্রব্যের যাকাত। এতে সোনা রূপার মত চল্লিশ ভাগের একভাগ যাকাত দিতে হয়। এর বছর গণনা সেদিন থেকে হবে, যেদিন পণ্যদ্রব্য কেনার নেসাব পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যবসায়ীর মালিকানায় আসে। যদি সেই নগদ অর্থ নেসাবের কম হয় অথবা দ্রব্যের বিনিময়ে ব্যবসা করার নিয়তে মাল ক্রয় করে, তবে বছরের শুরু ক্রয় করার সময় থেকে হবে। বছরের শেষে পণ্যদ্রব্যের যে মুনাফা অর্জিত হয়, মূলধনের উপর এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলে মুনাফার উপর যাকাত ওয়াজেব হয়ে যায়। মুনাফার উপর নতুনভাবে বছর অতিবাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
পঞ্চম প্রকার: মাটির নীচে পুঁতে রাখা মাল ও খনিজ সামগ্রীর যাকাত। পুঁতে রাখা মাল মানে সেই মাল, যা কুফরের আমলে পুঁতে রাখা হয় এবং এমন জমিনে পাওয়া যায়, ইসলামী আমলে যার উপর কারও মালিকানা হয়নি। যেব্যক্তি এই পুঁতে রাখা মাল পাবে, তার কাছ থেকে সোনা-রূপা হলে এক পঞ্চমাংশ নেয়া হবে। এতে বছর অতিবাহিত হওয়ার শর্ত নেই। নেসাবের শর্ত না হওয়াও উত্তম। কেননা, এক পঞ্চমাংশ ওয়াজেব হওয়ার কারণে যুদ্ধলব্ধ মালের সাথে এর সামঞ্জস্য বেশী। নেসাবের শর্ত রাখা হলেও তা অবান্তর নয়। কেননা, এই এক পঞ্চমাংশ এবং যাকাতের মাসরাফ তথা ব্যয় খাত একই। এ কারণেই সহীহ্ মাযহাব অনুযায়ী খাঁটি সোনা রূপাকেই 'দফীনা' তথা পুঁতে রাখা মাল বলা হবে, অন্য কিছুকে নয়। খনিজ পদার্থের মধ্যে কেবল সোনা-রূপার উপরই যাকাত ওয়াজেব হয়- অন্য কোন দ্রব্যের উপর ওয়াজেব হয় না। সোনা-রূপা খনি থেকে বের করে নেয়ার পর বিশুদ্ধতম উক্তি মোতাবেক তাতে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত ওয়াজেব হবে। এ উক্তি অনুযায়ী নেসাব হওয়া শর্ত। বছর অতিবাহিত হওয়ার ব্যাপারে দু'উক্তির মধ্যে এক উক্তি হচ্ছে, খনির সোনা-রূপার মধ্যে এক পঞ্চমাংশ ওয়াজেব। কাজেই বছর অতিবাহিত হওয়ার শর্ত নেই।
সাবধানতা হচ্ছে অল্প হোক কি বেশী, সকল প্রকার খনি থেকে এক পঞ্চমাংশ প্রদান করা এবং বিশেষভাবে সোনা-রূপার খনি নয়- প্রত্যেক খনি থেকে এক-পঞ্চমাংশ দেয়া- যাতে মতভেদের কোন সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে।
ষষ্ঠ প্রকার: সদকায়ে ফেতর। এটা এমন প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজেব, যার কাছে ঈদুল ফেতরের দিনে তার এবং তার পরিবারের খাদ্যের অতিরিক্ত এক ছা' খাদ্য মৌজুদ থাকে। তিন সের আধা ছটাকে এক ছা' হয়। সদকায়ে ফেতরের পরিমাণ মাথাপিছু এক ছা'। পরিবারে যে খাদ্য খাওয়া হয়, তা অথবা তা থেকে উত্তম খাদ্য দেবে। সুতরাং পরিবারে গম খাওয়া হলে যব দেয়া দুরস্ত নয়। বিভিন্ন প্রকার খাদ্য খাওয়া হলে যেটি উত্তম সেটি দেবে; যেকোন একটি দিলেও হবে। (১) পুরুষ গৃহকর্তার উপর তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং যাদের ভরণ-পোষণ করতে হয়, এমন আত্মীয়দের সদকা দেয়া ওয়াজেব। যেমন, বাপ-দাদা, মা-নানী ইত্যাদি। রসূলে করীম (সাঃ) বলেন: তোমরা যাদের ভরণ পোষণ কর, তাদের সদকায়ে ফেতর আদায় করে দাও। স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে ফেতরা দিয়ে দিলে যথেষ্ট হবে। যদি কারও কাছে এতটুকু খাদ্যই অতিরিক্ত হয়, যা কতক লোকের পক্ষ থেকে দিতে পারে, তবে কতক লোকের পক্ষ থেকেই আদায় করবে। তবে যাদের ভরণ-পোষণের তাকিদ বেশী, প্রথমে তাদের ফেতরা দেবে।
মোট কথা, প্রত্যেক ধনী ব্যক্তির এসব বিধান জেনে নেয়া উচিত এবং কোন বিরল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আলেমগণের কাছ থেকে ফতোয়া নিয়ে তার উপর আমল করা দরকার।
(১) হানাফী মাযহাবমতে সদকায়ে ফেতর এমন প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজেব, যে প্রয়োজনীয় বাসস্থান, অন্ন বস্ত্র ও সাজসর ামের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়। এ নেসাবের উপর বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। এ সদকা সে নিজের থেকে, নিজের সন্তানদের পক্ষ থেকে এবং খেদমতের গোলামদের পক্ষ থেকে আদায় করবে। স্ত্রী এবং বয়স্ক সন্তানদের পক্ষ থেকে দিতে হবে না। সদকায়ে ফেতরের পরিমাণ গম ও গম জাতীয় খাদ্যের অর্ধ ছা' এবং যব ও খেজুরের এক ছা'। এ পরিমাণ গমের মূল্য দিলেও সদকায়ে ফেতর আদায় হবে।
0 Comments