হিজরী দ্বিতীয় সালে পবিত্র রমজান মাসে মদীনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে বদর নামক স্থানে সত্য আর মিথ্যার প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধই ইতিহাসে 'বদর' যুদ্ধ নামে খ্যাত। এরপর থেকে শুরু হয় যুদ্ধের ধারাবাহিকতা। পরবর্তীতে নবী করীম (সা:) এবং সাহাবায়ে কেরামের নেতৃত্বে বহু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে মুসলমানগণ বাধ্য হয়েছিলেন। কেনো নবী করীম (সা:) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন, ঐ সকল যুদ্ধের ইতিহাস আলোচনার পূর্বে রাসূল (সা:) এর যুদ্ধনীতি বা ইসলাম পৃথিবীতে যুদ্ধের ব্যাপারে কি নীতি প্রবর্তন করেছিল আমরা তা সংক্ষেপে আলোচনা করবো। আরবের যুদ্ধ এবং তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও তার পাশবিক দিক সম্পর্কে ইতিহাসের পাঠক মাত্রই অবগত রয়েছেন। আরবের বাইরের দেশগুলোর যুদ্ধ নীতি সম্পর্কেও সচেতন পাঠক মহল অবগত রয়েছেন। তাদের যুদ্ধনীতি স্মরণে রেখে ইসলামের যুদ্ধনীতি পাঠ করা একান্ত প্রয়োজন। তাহলে আরবের যুদ্ধ এবং তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য এবং কেনো তারা যুদ্ধে জড়িয়েছেন এ প্রশ্নের জবাব মিলবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির যুদ্ধনীতি এবং মুসলমানদের জন্য ইসলাম যে যুদ্ধনীতি প্রদান করেছে, তার মধ্যে বিরাট পার্থক্য বিদ্যমান। নবী করীম (সা:) এমন এক নৈরাজ্যপূর্ণ পরিবেশে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, যে সময় যাবতীয় পাশবিকতা মুখ ব্যদন করে তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিল। তিনি সেই নৈরাজ্যপূর্ণ অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে আহ্বান জানালেন। প্রচলিত যুদ্ধের চরিত্র পরিবর্তন করে দিলেন। যুদ্ধ সম্পর্কে মানুষের সামনে এমন এক আদর্শ উপস্থাপন করলেন যা ছিল তাদের কাছে কল্পনার বিষয়।
তিনি মানুষকে জানিয়ে দিলেন, যুদ্ধ সংঘাত প্রকৃত অর্থেই এক জঘন্য কর্ম। প্রতিটি মানুষেরই উচিত এসব জঘন্য কর্ম থেকে বিরত থাকা। পক্ষান্তরে এই পৃথিবীতে যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর কোনো পাপাচার অনুষ্ঠিত হয়, যখন অত্যাচারিতের ক্রন্দন রোল আকাশ বাতাস বিষাক্ত করে তোলে, অরাজকতা আর বিশৃংখলতায় পৃথিবী কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়, জালিম দাম্ভিক অত্যাচারীর দল পৃথিবীবাসীর জীবন দুর্বিসহ করে তোলে, সাধারণ মানুষের শান্তি এবং নিরাপত্তার সামান্যতম নিশ্চয়তা রাখে না, তখন একমাত্র সেই অত্যাচারীর বিপর্যয় এবং ধ্বংস থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা একান্ত আবশ্যক হয়ে যায়।
এভাবে যুদ্ধ আরম্ভ করলেও সেই যুদ্ধের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, শত্রুকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া বা তার মারাত্মক কোনো ক্ষতিসাধন করা। বরং উদ্দেশ্য হলো, সে যে ধ্বংসসাধন করছে, অত্যাচার করছে, মানুষের ক্ষতি করছে, অর্থাৎ তাকে ক্ষতিকর কর্ম থেকে বিরত রাখা। এ কারণেই নবী করীম (সা:) যুদ্ধে এই নীতি প্রবর্তন করলেন যে, যুদ্ধে ঐ পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ করাই বৈধ, যতটা শক্তি প্রয়োগ করলে অত্যাচার অনিষ্ট বন্ধ হবে, বিপর্যয় ও যাবতীয় বিশৃংখলা রোধ করা যাবে। যুদ্ধে কোনোক্রমেই বাড়াবাড়ি করা যাবে না। যুদ্ধে সীমিত শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
আর এই সীমিত শক্তিও প্রয়োগ করা যাবে শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধে যারা অত্যাচারীকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করছে এবং যারা ক্ষতিকর। এর বাইরে সকল জনশক্তি যুদ্ধের আওতা ও ধ্বংস প্রভাব মুক্ত থাকবে। শত্রুর যে সব ধন-সম্পদ বা বস্তুর সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকবে না বা নেই, সে সব ধন-সম্পদ বা বস্তুর ওপরে কোনো ধরনের আক্রমণ করা যাবে না। আক্রমণের লক্ষ্য হতে হবে একমাত্র শত্রু।
সাধারণতঃ যুদ্ধ সম্পর্কে মানুষের মন-মস্তিষ্কে যে ধারণা বিদ্যমান ছিল এবং এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধ সম্পর্কে ইসলামের ধারণা বা নবী করীম (সা:) এর সীরাত তা থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এসব ধারণার সাথে তাঁর সীরাতের কোনো রূপ সামঞ্জস্যতা নেই। তিনি যে যুগে এসেছিলেন সে যুগে যুদ্ধের নানা পরিভাষা প্রচলিত ছিল। সেসব পরিভাষার অর্থও ছিল বড় বিচিত্র। এখানে কতকগুলো পরিভাষার উল্লেখ করা হলো।
আগুন। সে সময় আগুন শব্দ দিয়ে যুদ্ধকে বুঝানো হতো। বেষ্টনী। এই বেষ্টনী শব্দ দিয়েও তারা যুদ্ধকে বুঝাতো। যাঁতা বা চাকি। যাঁতা বা চাকি শব্দ দিয়েও যুদ্ধের কথা বলা হতো। নুতাহ বা মেষের লড়াই। উটের বুক। ওয়াগা, এই ওয়াগা শব্দের অর্থ হলো গোলযোগ করা। তারা ওয়াগা শব্দকে যুদ্ধের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার করতো। মাগদাবাতুন, এই শব্দের অর্থ ক্রোধ বা অসন্তুষ্টি। এটাও যুদ্ধের একটি পরিভাষা। শাররুন, এ শব্দের অর্থ অন্যায় বা খারাপ। এ শব্দটিও যুদ্ধের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হত।
কারিহাতুন। এ শব্দের অর্থ হলো কঠোরতা। এটাও যুদ্ধের একটি পরিভাষা। রওউন। এর অর্থ হলো আতঙ্ক, এটা যুদ্ধের একটি পরিভাষা। হিয়াজ। এর অর্থ হলো আক্রোশ, এটাও যুদ্ধের একটি পরিভাষা। ইহরাব। এর অর্থ হলো দুশমনের ধন-সম্পদ লুঠ করার লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তিকে পথ প্রদর্শন করা। এ শব্দটিও যুদ্ধের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার হতো। হারব। এ শব্দের অর্থ যুদ্ধ, আভিধানিক অর্থ রাগান্বিত হওয়া। মাহরুব। এর অর্থ যার ধন-সম্পদ লুঠ হয়েছে। এটাও যুদ্ধের একটি পরিভাষা। তাহরিব। এ শব্দের অনেকগুলো অর্থ। এর মধ্যে একটি অর্থ অস্ত্র ধার দেয়া। এ শব্দটিও যুদ্ধের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার হতো।
হারিবা। এই শব্দের অর্থ যুদ্ধের সময় যেসব সম্পদ দখল করা হয় বা লুঠ করা হয়। এ শব্দটিও যুদ্ধের পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার হতো। হারাব। অন্যায়ভাবে কারো ধন-সম্পদ হস্তগত করা বা লুঠ করে নেয়া। এটাও যুদ্ধের একটি পরিভাষা। এ ধরনের বহু শব্দ যুদ্ধের প্রতীকি শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হতো। কারণ তারা যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করতো, সে উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতো তাদের ভাষার মাধ্যমে। নবী করীম (সা:) ইসলামের যুদ্ধ নীতির ব্যাপারে তদানীন্তন পৃথিবীতে প্রচলিত একটি ভাষাকেও গ্রহণ করেননি।
মহান আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিলেন 'জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ' বা আল্লাহর পথে জিহাদ। কারণ ইসলামে যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধ, 'জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ' এই শব্দের মধ্যেই সেই উদ্দেশ্য নিহিত। এই শব্দের মধ্যে দিয়েই নবী করীম (সা:) এর সকল যুদ্ধের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ব্যক্ত হয়েছে। ইসলামের প্রকৃত ধারণা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মধ্যেই প্রবিষ্ট করা হয়েছে। জিহাদ আরবী শব্দ, এর অর্থ কোনো লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বা কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অথবা কোনো কাজ সমাপ্ত করার জন্য চূড়ান্তভাবে চেষ্টা- সাধনা করা। শত্রুতামূলক, সন্ত্রাসমূলক, আক্রমণাত্মক বা প্রতিহিংসামূলক যুদ্ধের ধারণা থেকে 'জিহাদ' শব্দ সম্পূর্ণ মুক্ত।
ইউরোপের ইসলাম বিদ্বেষী গবেষক ও লেখকগণ আরবী 'জিহাদ' শব্দের অনুবাদ করেছেন, Holy war. Religious war পবিত্র যুদ্ধ বা ধর্মযুদ্ধ। জিহাদ শব্দের অনুবাদের ক্ষেত্রে তাদের ঐ অনুবাদ সম্পূর্ণ ভুল। Holy war. Religious war শব্দ দ্বারা আরবী জিহাদ শব্দের শত ভাগের একভাগ অর্থও প্রকাশ পায় না। ইংরেজী ভাষাই শুধু নয়, পৃথিবীর বুকে এমন কোনো ভাষা নেই, যে ভাষার একটি শব্দ দিয়ে আরবী জিহাদ শব্দের পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ স্বয়ং এই শব্দ চয়ন করেছেন। এই জিহাদ শব্দ যাবতীয় অসৎ ধ্যান ধারণা এবং ক্ষতিকর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, জিহাদ আরবী শব্দ, এর অর্থ কোনো লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বা কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অথবা কোনো কাজ সমাপ্ত করার জন্য চূড়ান্ত ভাবে চেষ্টা-সাধনা করা। শত্রুতামূলক, সন্ত্রাসমূলক, আক্রমণাত্মক বা প্রতিহিংসামূলক যুদ্ধের ধারণা থেকে 'জিহাদ' শব্দ সম্পূর্ণ মুক্ত। এই শব্দটির অর্থই জানিয়ে দেয়, একজন মুসলিম যোদ্ধার প্রকৃত লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে যাবতীয় হিংসা বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা, অশান্তি, সন্ত্রাস, অত্যাচার, অশ্লীলতা, নোংরামী, জুলুম, অনিষ্ট ইত্যাদী দূরীভূত করা। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য যতটুকু চেষ্টা-সাধনা, কর্ম তৎপরতা চালানো প্রয়োজন ততটুকুই সে করবে। সীমা লংঘন সে কোনোক্রমেই করবে না।
ইসলামে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য যুদ্ধের কোনো অবকাশ নেই। নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করার কোনো অবকাশ নেই। ইসলামে যুদ্ধ হলো মহান আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এই যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে নিজের বীরত্ব প্রকাশ বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কোনো চিহ্ন নেই। পবিত্র কুরআন যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে একজন মুসলিম যোদ্ধা তাই করে। এ কারণে ইসলাম তার পবিত্র উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ সম্পর্কিত যাবতীয় আইন রচনা করে দিয়েছে। সে আইনে যুদ্ধের নীতিমালা, যুদ্ধের নৈতিক বিধি-নিষেধ, যোদ্ধাদের অধিকার ও কর্তব্য, সামরিক ও বেসামরিক মানুষদের মধ্যে পার্থক্য এবং তাদের অধিকার, চুক্তিবদ্ধদের অধিকার, দূত ও যুদ্ধবন্দীদের অধিকার, যুদ্ধে যারা জয়ী হয় তাদের অধিকার সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নবী করীম (সা:) পৃথিবীতে প্রচলিত যুদ্ধের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বাতিল করে একটি পবিত্র উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠিত করলেন। সে সময় যুদ্ধের যে পৈশাচিক এবং বিভৎস উদ্দেশ্য ছিল, তিনি তার কবর রচনা করলেন। তিনি এ লক্ষ্যে যোদ্ধাদের চরিত্র সংশোধন করলেন। শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী যুদ্ধের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষের চিন্তা চেতনার জগৎ আচ্ছন্ন করেছিল, এ কারণে নবী করীম (সা:) সর্বপ্রথম চিন্তার পরিশুদ্ধি ঘটালেন।
ব্যবহারিক জীবনে বিপ্লব ঘটানোর পূর্বে মানুষের চিন্তার জগতে সর্বপ্রথম বিপ্লব ঘটানো হলো। যা ছিল মানুষের চেতনার অতীত, তাই বাস্তবে করে দেখানো হলো। যুদ্ধের বিষয়টি মানুষের বুদ্ধির অগম্য ছিল যে, যুদ্ধ যদি নিজের ক্ষমতা প্রকাশের জন্যে না হয়, যুদ্ধ যদি কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে না হয়, যুদ্ধ যদি সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্যে না হয়, যুদ্ধ যদি ধন-সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে না হয়, যুদ্ধ যদি সম্মান প্রতিপত্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে না হয় তাহলে কেনো নিজের প্রাণকে বিসর্জন দিয়ে এই যুদ্ধ করা হবে?
এ সকল কিছুর উর্ধ্বে এক বিশাল মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুদ্ধ পরিচালিত হতে পারে তা ছিল মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধারণা-কল্পনারও অতীত বিষয়। একটি অদৃশ্য স্বার্থের কারণে, অদেখা স্বার্থ অর্জনের জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করা ঐ জাতির জন্য কোনো সামান্য ব্যাপার ছিল না, যাদের কাছে প্রাণ উৎসর্গ করার অর্থই ছিল ধন-সম্পদ অর্জন বা ক্ষমতার প্রকাশ ঘটানো বা প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করা। অথচ সেই মানুষগুলোকেই নবী করীম (সা:) এমনভাবে পরিশুদ্ধ করলেন যে, তাদের কাছে সমগ্র পৃথিবীর ধন-সম্পদের তুলনায় অদেখা আখিরাতের স্বার্থ বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। সে উদ্দেশ্যে তাঁরা নিজের প্রাণ পর্যন্ত কুরবান করতো।
নবী করীম (সা:) তাঁর সাহবায়ে কেরামকে আল্লাহর পথে জিহাদের তাৎপর্য বুঝিয়ে দিলেন। মহান আল্লাহ যে উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জিহাদ করতে বলেছেন তা তাদের মন- মগজে প্রবিষ্ট করলেন। এ সম্পর্কে একটা হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে।
হযরত মুসা আশয়ারী (রা:) বর্ণনা করেন, একজন লোক এসে নবী করীম (সা:) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! একজন যুদ্ধ করে সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, একজন যুদ্ধ করে প্রশংসা এবং খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে, একজন যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনের লক্ষ্যে। এদের মধ্যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করলো?'
আল্লাহর নবী (সা:) তাঁকে বললেন, 'য়ে ব্যক্তি কেবলমাত্র মহান আল্লাহ তা'য়ালার নাযিল করা জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যুদ্ধ করে সেই ব্যক্তিই কেবল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে'। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা:) বর্ণনা করেন, একজন লোক নবী করীম (সা:) এর কাছে এসে জানতে চাইলো, 'হে আল্লাহর রাসূল (সা:)! আমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যুদ্ধ করে প্রতিহিংসার কারণে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে। কোনো ব্যক্তি যুদ্ধ করে তাদের জাতিয় আভিজাত্য প্রকাশের লক্ষ্যে। কিন্তু আল্লাহর পথে যুদ্ধ কি ধরনের যুদ্ধ?'
নবী করীম (সা:) জবাবে বললেন, 'যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা'য়ালার বিধান প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যুদ্ধ করে তাঁর যুদ্ধই আল্লাহর পথের যুদ্ধ'। (বুখারী, মুসলিম)
হজরত আবু উমামা বাহেলী (রা:) বলেন, আরেকজন লোক নবী করীম (সা:) এর কাছে এসে জানতে চাইলো, 'হে আল্লাহর নবী! যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ বৃদ্ধি এবং প্রশংসা লাভের জন্য যুদ্ধ করে, এমন লোকের ব্যাপারে আপনার মতামত কি? সে কোনো সওয়াব অর্জন করবে?'
নবী করীম (সা:) লোকটিকে জানালেন, 'এমন ধরনের লোক কোনো সওয়াব অর্জন করবে না'।
হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে, নবী করীম (সা:) এর জবাব শোনার পরে প্রশ্নকারী অবাক বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়েছিল। তারপর লোকটি চলে গেল এবং পুনরায় এসে ঐ একই প্রশ্ন করলো। তিনি তাঁকে পূর্বের ন্যায় জবাব দিলেন। এভাবে লোকটি চারবার এসে ঐ একই প্রশ্ন করেছিল। শেষের বার নবী করীম (সা:) লোকটিকে বলেছিলেন, 'শোন, যতক্ষণ কোনো কাজ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা না হয় ততক্ষণ সে কাজ আল্লাহ তা'য়ালা কবুল করেন না'। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) বলেন, নবী করীম (সা:) একদিন বললেন, 'কোনো মানুষ আল্লাহ তা'য়ালার বিধান প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলো কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সে এই যুদ্ধ থেকে তাঁর উটকে বাঁধার জন্য রশি সংগ্রহ করবে। সে ব্যক্তি শুধু ঐ রশিই লাভ করবে, কোনো সওয়াব লাভ করবে না'।
হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা:) বলেন, 'যুদ্ধ দুই ধরনের হয়। প্রথম ধরনের যুদ্ধ হলো, একজন কেবলমাত্র মহান আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করে এবং নেতার আনুগত্য করে। নিজের উত্তম ধন-সম্পদ সে উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং কোনো ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি করে না। সে জেগেই থাক বা ঘুমিয়েই থাক, সওয়াব সে অর্জন করবে। আরেক ব্যক্তি প্রদর্শনীর জন্য যুদ্ধ করে, সুনাম ও প্রশংসা অর্জন করতে চায়, নেতার আদেশ পালন করে না। পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। সে কেবলমাত্র শাস্তি ব্যতীত আর কিছুই ভোগ করবেনা'।
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, একদিন নবী করীম (সা:) বললেন, কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম তিন ব্যক্তির বিচার করা হবে। তার মধ্যে প্রথম ঐ ব্যক্তির বিচার করা হবে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিল। বিচারের জন্য নিয়ে আসা হলে তাকে মহান আল্লাহ তাঁর দেয়া অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে ব্যক্তি তার স্বীকৃতি দিবে। এরপর মহান আল্লাহ তাকে প্রশ্ন করবেন, 'তুমি আমার জন্য কোনো কাজ করেছো?'
লোকটি জবাব দিবে, 'আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যুদ্ধ করে প্রাণদান করেছি'।
মহান আল্লাহ বলবেন, 'তুমি মিথ্যা কথা বলছো, তুমি যুদ্ধ করেছিলে বীরত্ব প্রকাশের জন্য মানুষ যেন তোমাকে বীর হিসাবে আখ্যায়িত করে, তোমার প্রশংসা করে। তুমি তোমার উদ্দেশ্যে সফলতা লাভ করেছো। এসব কথা বলে আল্লাহ নির্দেশ দিবেন, একে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো'।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বর্ণনা করেন, একদিন নবী করীম (সা:) বললেন, কিয়ামতের দিন একজন মানুষ আরেকজন মানুষের হাত ধরে আল্লাহ তা'য়ালার সামনে এনে বলবে, হে আল্লাহ! এই লোক আমাকে হত্যা করেছিল। আল্লাহ তা'য়ালা প্রশ্ন করবেন, তুমি তাকে কেনো হত্যা করেছিলে? লোকটি জবাব দিবে, আমি তাকে হত্যা করেছিলাম যেন প্রভুত্ব আপনারই জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাকে হত্যা করেছিলাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলবেন, হ্যাঁ, প্রভুত্ব আমারই।
এরপর আরেকজন লোক আরেকটি লোকের হাত ধরে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তা'য়ালার দরবারে আবেদন করবে, হে আল্লাহ! এই লোক আমাকে হত্যা করেছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি কেনো তাকে হত্যা করেছিলে?
লোকটি জবাব দিবে, আমি কোনো একজনের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে হত্যা করেছিলাম। আল্লাহ বলবেন, প্রভুত্ব শুধু আমারই। অন্য কারো প্রভুত্ব নেই। তারপর তাকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হবে।
নবী করীম (সা:) তাঁর সাহাবায়ে কেরাম তথা মুসলমানদের যুদ্ধ সম্পর্কে উল্লেখিত শিক্ষা এবং চেতনা দান করেছিলেন। এ সব শিক্ষার কোথাও নিজের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। এসব শিক্ষা মানুষের মন থেকে যুদ্ধ সম্পর্কে পূর্বের প্রতিষ্ঠিত সব ধরনের চিন্তা-চেতনা মুছে দিয়েছিল। যুদ্ধ করে গণিমতের সম্পদ অর্জন, বীরত্ব প্রদর্শন, প্রশংসা অর্জন, যুদ্ধের মাধ্যমে ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রতিশোধ গ্রহণ বা জাতিগত শত্রুতার প্রতিশোধ গ্রহণ তথা পার্থিব যাবতীয় উদ্দেশ্যই নিঃশেষ করে দেয়া হয়েছিল।
পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য সামনে রেখে যুদ্ধ করা নবী করীম (সা:) বৈধ করেননি। এসব স্বার্থকে যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরে শুধু অবশিষ্ট ছিল, পার্থিব স্বার্থের স্বাদ গন্ধহীন আখিরাতের সেই অদৃশ্য স্বার্থ। এই স্বার্থ অর্জনের জন্য যুদ্ধের ফলে কোন ধরনের বিশৃংখলা বা কোনো মারাত্মক ধ্বংসসাধন হবে এমন চিন্তাই করা যায় না। এমনকি শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলেও তখনই অস্ত্র ধারণ করা যাবে, যখন অস্ত্র ধারণ না করলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হবার নিদর্শন স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
এ কারণে বিশ্বনবী (সা:) যুদ্ধকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি শিক্ষাদান করেছেন, 'শত্রুর সাথে মুকাবিলা যেন করতে না হয় তোমরা এই কামনা করো। মহান আল্লাহর কাছে শান্তির জন্য দোয়া করতে থাকো। কিন্তু যদি শত্রুর সাথে মুকাবিলা করতে তোমরা বাধ্য হও, তাহলে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে মুকাবিলা করো। জেনে রেখো, আল্লাহ তা'য়ালার জান্নাত অবস্থান করছে তরবারীর ছায়ার নীচে'।
যুদ্ধ সম্পর্কে বিশ্বনবীর শিক্ষা স্পষ্ট হয়ে গেল। যুদ্ধ অত্যন্ত খারাপ বিষয়। কারো পক্ষেই যুদ্ধ কামনা করা উচিত নয়। তিনি শিক্ষাদান করলেন, যুদ্ধ যেন করতে না হয় আল্লাহ তা'য়ালার কাছে এমন দোয়া করো। কিন্তু নরপিশাচের দল যদি তোমাদেরকে যুদ্ধ করতে বাধ্যই করে, তাহলে তাদের সাথে এমনভাবে যুদ্ধ করবে যেন তারা তাদের অত্যাচারের হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। যে অশান্তি তারা সৃষ্টি করছে তা যেন আর করতে না পারে। আর এই যুদ্ধ করতে গিয়ে তুমি যদি শত্রুর অস্ত্রের আঘাতে প্রাণদান করো তাহলে মনে রেখো, শত্রুর ঐ অস্ত্রের নীচেই তোমার জন্য রয়েছে আল্লাহর জান্নাত। অত্যাচারী জালিমের জুলুমকে স্তব্ধ করতে যেয়ে তাদের অস্ত্রের আঘাতের ভয়ে পালিয়ে এসো না।
নবী করীম (সা:) এর এই শিক্ষায় শিক্ষিত যোদ্ধাদের আচরণ যুদ্ধের ময়দানে কি ধরনের ছিল এ সকল বিবরণে ইতিহাসের পৃষ্ঠা পরিপূর্ণ। যুদ্ধের ময়দানে শত্রু পক্ষের বুকের ওপর হযরত আলী (রা:) উঠে বসেছেন। ক্ষণিকের মধ্যে তিনি তাঁর তীক্ষ্মধার তরবারী শত্রুর বুকে প্রবিষ্ট করাবেন। পতিত শত্রু আলী (রা:) এর মুখে থুথু নিক্ষেপ করলো। তিনি শত্রুকে হত্যা না করে তাকে ছেড়ে দিলেন।
বিস্ময়ে বিমূঢ় শত্রু উঠে দাঁড়িয়ে আলী (রা:) এর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অবাক কণ্ঠে জানতে চাইলো, 'তুমি আমাকে হত্যা না করে মুক্ত করে দিলে যে?'
আলী (রা:) জবাব দিলেন, 'তোমাকে আমি হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলাম আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কিন্তু যখন তুমি আমার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলে, এরপর যদি তোমাকে আমি হত্যা করতাম আর আল্লাহ তা'য়ালা যদি আমাকে কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করেন, আলী! তোমার মুখে লোকটি থুথু নিক্ষেপ করেছিল, এ কারণে তাকে তুমি হত্যা করেছিলে? আল্লাহ তা'য়ালার কাছে আমি কি জবাব দিবো! এ কারণে আমি তোমাকে হত্যা না করে মুক্ত করে দিয়েছি।
হযরত আলী (রা:) এর কথা শুনে লোকটি তৎক্ষণাৎ ইসলাম কবুল করেছিল। থুথু নিক্ষেপের কারণে আলী (রা:) এর মধ্যে ব্যক্তিগত আক্রোশ জাগতে পারে। এ কারণে তিনি যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে হত্যা না করে মুক্ত করে দিলেন। নবী করীম (সা:) এর শিক্ষায় তাঁরা স্পষ্ট অনুভব করেছিলেন, ব্যক্তিগত আক্রোশে যুদ্ধ করা যাবে না এবং যুদ্ধের ময়দানেও ব্যক্তিগত আক্রোশে কাউকে হত্যা করা যাবে না।
ইসলামের শত্রুরা যখন যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, তখন নবী করীম (সা:) তাঁর অনুসারীদের মধ্যে এভাবেই যুদ্ধের উদ্দেশ্যের পরিশুদ্ধিসাধন করেছিলেন। তাঁরা যুদ্ধের সেই উত্তপ্ত রক্তঝরা ময়দানেও নবীর শিক্ষার বাস্তবায়ন করেছেন। আক্রোশে অন্ধ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁরা কোনো গর্হিত কাজ করেননি, ইসলামের শিক্ষা বা আদেশের বিপরীত কিছুই করেননি। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে এসেছেন, তার বাইরে তাঁরা এক কদমও নিক্ষেপ করেননি।
যুদ্ধের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে নবী করীম (সা:) যেমন শিক্ষা দিয়েছেন তেমনিভাবে যুদ্ধের পদ্ধতি সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আবহমানকাল থেকে যুদ্ধের ময়দানে যে নিয়ম এবং পদ্ধতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করা হতো রাসূল (সা:) তার সবকিছুই রহিত করলেন। তদানীন্তন যুগে যুদ্ধ চলাকালে যেসব পৈশাচিক পদ্ধতি বহাল ছিল তিনি সাহাবায়ে কেরামদের জানিয়ে দিলেন, এসব নিষ্ঠুর নির্মম পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবেনা। তিনি শত্রু পক্ষকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। একভাগ সামরিক এবং আরেকভাগ বেসামরিক।
সামরিক লোকদের আওতায় তাদেরকেই আনলেন যারা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, প্রচলিত নীতি অনুযায়ী বা সাধারণ বুদ্ধি বিচারে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সামর্থবান বলে চিহ্নিত হয়। বেসামরিক লোকদের আওতায় আনলেন যারা প্রচলিত নীতি অনুযায়ী বা সাধারণ বুদ্ধি বিচারে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সামর্থবান বলে চিহ্নিত হয় না। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না বা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি।
এই শেষোক্ত দলের মধ্যে রয়েছে শান্তি প্রিয় নিরীহ ধরনের লোকজন। ধর্মস্থানের সেবক, সংসারত্যাগী সন্নাসী, ধর্মস্থান, নারী, শিশু, পর্যটক, পাগল, ভিক্ষুক, আহত, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী ও অন্ধ, এ ধরনের কোনো লোকজনের ওপর আক্রমণ করা যাবে না। তিনি এই শ্রেণীর লোকজনকে হত্যা করা সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিলেন। অর্থাৎ যাদের দ্বারা
কোনো ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই, কোনোক্রমেই তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা যাবে না। একবার যুদ্ধের ময়দান পরিদশর্ন কালে নবী করীম (সা:) এক নারীর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, 'এই নারী তো সামরিক বাহিনীর লোক ছিল না। তাকে হত্যা করা হলো কেন?'
তিনি সিপাহসালার হযরত খালিদ (রা:) কে ডেকে তাঁর কাছে কৈফিয়ত চাইলেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করে দিলেন, 'নারী বা শ্রমিককে হত্যা করা যাবে না'।
যুদ্ধের ময়দানে নবী করীম (সা:) নারী এবং শিশুদের হত্যা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। যুদ্ধের ময়দান সম্পর্কে নবী করীম (সা:) ঘোষণা করলেন, 'কোনো নারী, শিশু বা বৃদ্ধকে হত্যা করো না। গণিমতের সম্পদ (যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে শত্রু বাহিনীর কাছ থেকে যে সম্পদ দখল করা হয়) অপহরণ করো না। যুদ্ধে যা কিছু হস্তগত হয় তা সব একত্র করো। উত্তম কাজ করো এবং উত্তম আচরণ করো। যারা উত্তম কাজ করে মহান আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন'। কোনো নারী বা বৃদ্ধ যদি মানবতার জন্যে ক্ষতিকর হয় বা তাদের দ্বারা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্যে হুমকি স্বরূপ হয় তাহলে তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামী আইন প্রয়োগ করা হবে।
মক্কা বিজয়কালে নবী করীম (সা:) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, 'কোনো আহত মানুষের ওপরে আক্রমণ করবে না। প্রাণের ভয়ে যারা পালিয়ে যাচ্ছে, এমন কোনো মানুষের পেছনে ধাওয়া করা যাবেনা। যারা ঘরের দরোজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছে তাদের ওপরে আক্রমণ করা যাবে না'। (ফতহুল বুলদান, পৃষ্ঠা নং-৪৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, 'কোথাও অভিযানে প্রেরণ করার সময় নবী করীম (সা:) সৈন্য বাহিনীকে আদেশ দিতেন, তাঁরা যেন কোনো ধর্মস্থানের নিরীহ সেবকদের ও আশ্রমের তপস্বী বা সাধক সন্নাসীদের হত্যা না করে'।
নবী করীম (সা:) এর সীরাত তথা নীতি হলো, যুদ্ধের সাথে যারা জড়িত নেই তাদেরকে হত্যা করা যাবে না। তিনি ঐসব লোকদেরই শিক্ষা দিলেন, যারা সামান্য কোনো কারণে, অহংকার ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য বা যে কোনো তুচ্ছ কারণে যুদ্ধের সূচনা করে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ করতো। প্রতিপক্ষের নারী, শিশু, রোগী, বৃদ্ধ তথা যে কোনো ধরনের মানুষকে হত্যা অথবা গ্রেফতার করে আনতো, তাদের পশু সম্পদ, বৃক্ষরাজিসহ যাবতীয় কিছুই ধ্বংস করে দিত।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে যাদের আচরণ নৃশংসতার শেষ পর্যায় অতিক্রম করেছিল, আর ইসলাম গ্রহণের পরে নবী করীম (সা:) এর শিক্ষায় তাঁরাই যুদ্ধের ময়দানে এমন আচরণ করেছে, সমগ্র পৃথিবীবাসীর জন্য তাদের আচরণ চিরদিনের জন্য অনুসরণীয় হয়ে আছে। বিশ্বনবী (সা:) শিক্ষা দিলেন, যুদ্ধে সামরিক ব্যক্তিদের ওপরে আক্রমণ করা যাবে বটে কিন্তু সে আক্রমণের ক্ষেত্রেও নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে হবে। অবাধে আক্রমণ করা যাবে না।
সে যুগে আক্রমণের কোনো নিয়ম-নীতি ছিল না। রাতের অন্ধকারে বিশেষ করে শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর নিদ্রায় বিভোর থাকতো, সেই মুহূর্তে তারা হঠাৎ আক্রমণ করতো। নবী করীম (সা:) আদেশ জারী করলেন, অতর্কিত আক্রমন করা যাবে না। রাতের অন্ধকারে আক্রমন করা যাবে না। রাতের অন্ধকারে শত্রুপক্ষকে ঘেরাও করে রাখলেও তাদের ওপরে কোনো আক্রমণ করা যাবে না।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা:) খয়বর যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, 'নবী করীম (সা:) কোনো শত্রু গোষ্ঠীর কাছে রাত্রে পৌঁছলেও তিনি সকাল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ করতেন না'।
সে যুগে যুদ্ধের আরেকটি বীভৎস নীতি ছিল যে, তারা আক্রোশে অন্ধ হয়ে প্রতিপক্ষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতো। এই ঘৃণ্য এবং নৃশংস প্রথা নবী করীম (সা:) কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করলেন। তিনি বললেন, 'আগুনে পুড়ানের শাস্তি শুধু মাত্র আগুনের যিনি মালিক তিনি ব্যতীত আর কেউ দিতে পারে না'।
আগুনে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যাই শুধু নয়, কোনো প্রাণীকেও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা যাবে না। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, 'একবার নবী করীম (সা:) আমাদেরকে যুদ্ধে যেতে বললেন। আমাদেরকে তিনি দু'জন লোকের নাম উল্লেখ করে আদেশ দিলেন, তাদেরকে ধরে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে। আমরা যাত্রা করা মাত্র তিনি আমাদেরকে ডেকে বললেন, আমি তোমাদের আদেশ দিয়েছিলাম, তাদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে। কিন্তু আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করো না। আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়া শুধু আল্লাহ তা'য়ালার ইখতিয়ারে। তোমরা লোক দু'টোকে গ্রেফতার করতে পারলে তাদেরকে হত্যা করো'।
হযরত আলী (রা:) একবার ইসলামের দুশমন বেশ কিছু নাস্তিককে গ্রেফতার করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ সংবাদ জানতে পেরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) তাকে ডেকে নবী করীম (সা:) এর নির্দেশ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, আগুন আল্লাহ তা'য়ালার শাস্তি। এই আগুন দিয়ে কোনো মানুষকে শাস্তি দেয়া যেতে পারে না'।
যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে নির্যাতন করে বা বেঁধে হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। উবায়েদ ইবনে ইয়ালা (রা:) বর্ণনা করেন, আমরা হযরত আব্দুর রহমান ইবনে খালিদ (রা:) এর সাথে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমাদের সৈন্যরা শত্রু পক্ষের বারোজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে এলো। হযরত আব্দুর রহমান (রা:) তাদের বেঁধে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন।
হযরত আবু আইউব আনসারী (রা:) এ ঘটনা জানতে পেরে তাঁকে বলেছিলেন, 'আমি শুনেছি নবী করীম (সা:) কাউকে বেঁধে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর শপথ! আমি মুরগীও বেঁধে জবাই করতে রাজী নই। হযরত আবদুর রহমান (রা:) এ কথা জানতে পেরে তাঁর ভুলের কাফ্ফারা স্বরূপ চারজন দাস মুক্ত করেছিলেন'।
নবী করীম (সা:) আগমনের পূর্বে যুদ্ধের সূচনা করাই হতো লুটতরাজ করার জন্য। আর রাসূল (সা:) শিক্ষা দিলেন, যুদ্ধের পরে বিজিত অঞ্চলে কোনো ধরনের লুটতরাজ করা যাবে না। খায়বর বিজিত হবার পরে কিছু সংখ্যক মুসলিম সৈন্য ইয়াহুদীদের এলাকায় সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইয়াহুদীদের গোত্রপতি নবী করীম (সা:) এর কাছে অভিযোগ করে রাগত কন্ঠে বলেছিল, হে মুহাম্মাদ (সা:)! গাধা হত্যা করা, গাছের ফল ভক্ষণ করা আর নারীদেরকে আঘাত করা আপনাদের জন্য কি শোভা পায়?
এ কথা শোনার সাথে সাথে নবী করীম (সা:) হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা:) কে আদেশ দিলেন, মুসলিম বাহিনীর সকল সদস্যকে ডাকো।
তিনি 'নামাযের জন্য সমবেত হও' বলে ডাক দিলেন। মুসলিম সৈন্য একত্রিত হলে নবী করীম (সা:) দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ কি গর্বিত হয়ে এ ধারণা করেছে নাকি, আল্লাহ তা'য়ালার কুরআন যা নিষেধ করেছে এর বাইরে আর কিছু নিষেধ নয়? আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে যে সব উপদেশ এবং আদেশ দিয়ে থাকি, যা নিষেধ করে থাকি, এসবও কুরআনের আদেশ-নিষেধের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদেরকে আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান) বাড়িতে তাদের অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করা, তাদের নারীদের আঘাত বা লাঞ্ছিত করা, অনুমতি ব্যতীত তাদের গাছের ফল খাওয়া হারাম করে দিয়েছেন। কারণ তাদের যেসব জিনিস দেয়া প্রয়োজন ছিল তারা তা দিয়েছে'।
কোনো এক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ছাগল ধরে এনে যবেহ করে রান্না করেছিল। গোস্ত খাবে এমন সময় নবী করীম (সা:) জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হয়ে গোস্তের হাড়ি উল্টিয়ে ফেলে দিয়ে বললেন, 'জোরপূর্বক নিয়ে আসা জিনিসপত্র মৃত প্রাণীর গোস্তের মতই হারাম'।
যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে পরাজিত সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে যা পাওয়া যায় তা নিয়মিতভাবে বন্টন করার আগে যদি কেউ তা গ্রহণ করে তাহলে তা হারাম হবে। কিন্তু বেসামরিক লোকদের কাছ থেকে কোনো কিছু জোরপূর্বক গ্রহণ করা, বিজিত এলাকায় প্রবেশ করে শত্রু দেশের সাধারণ জনগণের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়া নবী করীম (সা:) হারাম করে দিয়েছেন। লুটের সামান্য একটি রশিও তিনি হারাম করে দিয়েছেন।
যে জাতি যুদ্ধই করতো লুটতরাজ করার জন্য, তাঁরাই নবী করীম (সা:) এর শিক্ষায় বিজিত এলাকায় এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, শত্রু দেশের জনগণ তাদের পবিত্র চরিত্র এবং সম্পদের প্রতি তাচ্ছিল্যভাব দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। তাঁরাও অনুভব করেছে, এদের যুদ্ধের লক্ষ্য মহান আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা।
প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ করার সময় তাদের ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট করা, তাদের বৃক্ষ ধ্বংস করা, তাদের দেশের সম্পদ ধ্বংস করা, কোনো কিছু আগুনে পুড়িয়ে দেয়া, গণহত্যা করা এসব সে যুগেও যেমন ছিল, বর্তমানেও আছে। কিন্তু নবী করীম (সা:) এসব নৃশংস আচরণ করতে তাঁর মুসলমানদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এসব নিন্দনীয় কাজকে পবিত্র কুরআন 'ফাসাদ' বা অরাজকতা বলে আখ্যায়িত করেছে।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ طَ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ الفَسَادَ -
সে যখন (আল্লাহ তা'য়ালার যমীনের কোথাও) ক্ষমতার আসনে বসতে পারে, তখন সে নানা প্রকারে অশান্তি সৃষ্টি করতে শুরু করে, যমীনের শস্য ক্ষেত্র বিনাশ করে, (জীবজন্ত নূর) বংশ নির্মূল করতে চায়; (মূলত) আল্লাহ তা'য়ালা কখনো বিপর্যয় (সৃষ্টিকারী মানুষদের) পছন্দ করেন না।
(সূরা আল বাকারা-২০৫)
শস্য ক্ষেত্র ও জীবজন্তু দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে, কিন্তু স্বৈরাচারী দল বা ব্যক্তি যখন দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে জনগণকে বঞ্চিত করে নিজ দেশের স্বার্থ অন্য দেশের হাতে তুলে দেয় এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে। সূরা বাকারার ২০৪ নং আয়াতে এ ধরনের লোকদের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'এরা হিংসুক ও ঝগড়াটে প্রকৃতির এবং প্রতিহিংসা পরায়ন। অথচ এরা কথায় কথায় আল্লাহ তা'য়ালার নামে শপথ করে বলে যে, তারা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই কাজ করছে'।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) সিরিয়া এবং ইরাকে সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করার সময় যেসকল নির্দেশ দিয়েছিলেন তার মধ্যে একথাও ছিল, 'কোনো জনপদ ধ্বংস করা যাবে না। ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট করা যাবে না'।
অবশ্য সামরিক প্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করে বা পুড়িয়ে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু প্রতিহিংসামূলকভাবে তা করা যাবে না। ধ্বংসাত্মক মন-মানসিকতা নিয়ে প্রতিপক্ষের সম্পদ বিনষ্ট করা যাবে না। যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষের নিহত ব্যক্তির লাশ বিকৃত করা যাবে না। ইসলাম এ সম্পর্কে কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ আনসারী (রা:) বলেন, 'নবী করীম (সা:) লুটের জিনিস গ্রহণ করতে এবং লাশ বিকৃত করতে নিষেধ করেছেন'।
নবী করীম (সা:) যখন বাধ্য হয়ে যুদ্ধের জন্য সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করতেন তখন তিনি স্পষ্টভাবে নিষেধ করতেন, 'অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে না। গণিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করবে না। কোনো লাশের বিকৃতি ঘটাবে না'।
নবী করীম (সা:) নির্দেশ দিলেন বন্দীদের হত্যা করা যাবে না। অথচ সে যুগে বন্দীদের নির্বিচারে হত্যা করা হতো। বর্তমান যুগে কৌশল পরিবর্তন করা হয়েছে মাত্র, সে যুগের তুলনায় বর্তমান যুগে বন্দীদের ভিন্ন কৌশলে অত্যন্ত নির্মম পদ্ধতিতে হত্যা করা হয়। মক্কা বিজয়ের পরে নবী করীম (সা:) যখন মক্কা শহরে প্রবেশ করেন তখন তিনি মুসলিম বাহিনীর প্রতি নির্দেশ জারী করেন, 'কোনো আহত মানুষের প্রতি আক্রমন করা যাবে না। যে ব্যক্তি পালিয়ে যাচ্ছে তাকে ধাওয়া করা যাবে না। যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করা যাবে না। যে ব্যক্তি ঘরের মধ্যে দরোজা বন্ধ করে অবস্থান করবে তার ওপরে হামলা করা যাবে না'।
মুসলিম ইতিহাসের নিষ্ঠুর শাসক হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ একজন বন্দীকে হত্যা করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) কে নির্দেশ দিয়েছিল। হযরত আব্দুল্লাহ প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, 'মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে বন্দী হত্যার অনুমতি দেননি। তবে নিদের্শ দিয়েছেন মুক্তিপণ গ্রহণ করে ছেড়ে দিতে বা ক্ষমা করে দিতে'।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা:) এর কথা ইসলামের সাধারণ নির্দেশের ব্যাপারে প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক এবং প্রশাসন অবশ্যই এই ক্ষমতা সংরক্ষণ করে যে, ইসলামের ভয়ঙ্কর শত্রু, মুসলমানদের ওপরে যে ব্যক্তি লোমহর্ষক নির্যাতন করেছে এমন ব্যক্তিকে, চরম বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি, দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর কোনো ব্যক্তি, দেশের মারাত্মক সর্বনাশকারী ব্যক্তি ইত্যাদী ধরনের লোকদের বন্দী করে ইসলামের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নবী করীম (সা:) বদর যুদ্ধের বন্দীদের কাছ থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করে মুক্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু উকবা ইবনে আবু মুইয়িতকে ইসলামের বিধান অনুসারে দণ্ড প্রদান করেছিলেন। এ সম্পর্কে ইসলামী সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা আপোষহীনভাবে গ্রহণ করবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে মিত্র শক্তিবর্গ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে যে প্রহসন চালিয়েছিল ইসলামে সে প্রহসন চালানোর অবকাশ নেই।
তদানীন্তন যুগে দূত হত্যা করতেও তারা দ্বিধা করতো না। কিন্তু নবী করীম (সা:) প্রতিপক্ষের দূত বা প্রতিনিধিকে হত্যা করতে স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। সে সময় মিথ্যা নবীর দাবীদার জাহান্নামি মুসাইলামার পক্ষ থেকে উবাদা ইবনে হারিস বিশ্বনবী (সা:) এর দরবারে এমন এক নিকৃষ্ট বাণী নিয়ে আগমন করেছিল, যে বাণী দ্বারা নবী করীম (সা:) এর মর্যাদা ও খতমে নবুয়্যাতের প্রতি আঘাত করা হয়েছিল।
নবী করীম (সা:) তাকে বলেছিলেন, 'দূত হত্যা করা যদি হারাম না হতো তাহলে আমি তোমার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করতাম'।
আল্লাহর রাসূল (সা:) নির্দেশ দিলেন, প্রতিপক্ষের সাথে চুক্তি করে তা লংঘন করা যাবে না। প্রতিপক্ষের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করা, তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা, চুক্তিবদ্ধদের সাথে অশোভন আচরণ করা স্পষ্ট হারাম ঘোষনা করেছেন। তিনি ঘোষনা করলেন, 'যে চুক্তিবদ্ধ মানুষকে হত্যা করবে সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। পক্ষান্তরে জান্নাতের গন্ধ ৪০ বছরের পথের দূরত্ব থেকেও অনুভব করা যাবে'।
নবী করীম (সা:) ঘোষণা করলেন, 'চারটি খারাপ গুণ এমন যে, যার ভেতরে তা দেখা যাবে সে সম্পূর্ণ মুনাফিক হয়ে যাবে। সে খারাপ গুণগুলো হচ্ছে, যখন কথা বলবে তখন মিথ্যা কথা বলবে। যখন অঙ্গীকার করবে তখন তা ভঙ্গ করবে। যখন চুক্তিতে আবদ্ধ হবে তখন তা লংঘন করবে। যখন ঝগড়া করবে তখন অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করবে'। (বুখারী, মুসলিম)
বিশ্বাসঘাতক এবং চুক্তি ভঙ্গকারীদের সম্পর্কে তিনি ঘোষণা করলেন, 'কিয়ামতের দিন প্রতিটি বিশ্বাসঘাতক এবং চুক্তি ভঙ্গকারীর জন্য একটি পতাকা থাকবে যা তার কর্মফলের প্রতীক হিসাবেই চিহ্নিত হবে। মনে রেখো, যে জননেতা বিশ্বাসঘাতক হয় তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর কেউ হতে পারে না'।
রোম সাম্রাজ্যে হযরত মুয়াবিয়া (রা:) একবার আক্রমন করতে যাচ্ছিলেন। অথচ তার সাথে রোমের চুক্তি বহাল ছিল। তাঁর ইচ্ছা ছিল তিনি চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার সাথে সাথেই আক্রমন করবেন। কিন্তু আমর ইবনে আম্বাছা (রা:) সন্ধির মেয়াদকালে যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং রোমের দিকে বাহিনী প্রেরণকে চুক্তি ভঙ্গ হিসাবে আখ্যায়িত করলেন।
তিনি হযরত মুয়াবিয়া (রা:) কে বললেন, 'সর্বনাশ! আপনি এটা কি করতে যাচ্ছেন? চুক্তি মেনে চলুন!'
হযরত মুয়াবিয়া (রা:) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'আপনি এমন করছেন কেনো, কি হয়েছে?'
তিনি বললেন, 'আমি আল্লাহর রাসূল (সা:) কে বলতে শুনেছি, 'যাদের সাথে কোনো জাতির চুক্তি থাকবে তাদের উচিত চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন না করা। যদি প্রতিপক্ষ থেকে বিশ্বাসঘাতকতার আশংকা থাকে তাহলে সমতা বজায় রেখে চুক্তি শেষ হবার কথা জানানো উচিত'।
সে সময় যোদ্ধাদের একটিা অসভ্য নীতি ছিল যে, তারা যে পথ দিয়ে গমন করতো সে পথে যাকে পেত তাকেই উত্যক্ত করতো। যে এলাকায় শিবির স্থাপন করতো সেখানে এমন এক বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করতো যে, পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণ অতিষ্ঠ করে তুলতো। যেখানে সেখানে শিবির স্থাপন করে মানুষের চলাফেরা বন্ধ করে দিত। নবী করীম (সা:) একবার তাঁর বাহিনীসহ অভিযানে যাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে সংবাদ এলো মুসলিম বাহিনীর কিছু লোকজন এমন বিশৃংখলার সৃষ্টি করেছে যে, মানুষের মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে।
এ সংবাদ শোনা মাত্র তিনি ঘোষণা করলেন, 'যে ব্যক্তি স্থানীয় বেসামরিক লোকদের বিরক্ত করবে অথবা পথিকদের সম্পদ লুট করবে তার জিহাদ হবে না। তোমাদের এভাবে বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়া শয়তানের মতো কাজ'।
বিশ্বনবী (সা:) এই আদেশের পর থেকে মুসলিম বাহিনীতে এমন সুশৃংখল অবস্থা বিরাজ করতো, তাঁরা কোনো স্থানে শিবির স্থাপন করলে তাদের সংঘবদ্ধতার কারণে মনে হত যে, একটি চাদর বিস্তার করলে তার নীচে সবাই চলে আসবে। সে সময় যুদ্ধের ব্যাপারে আরেকটা নীতি ছিল, গোটা বাহিনী এক মহাশোরগোল সৃষ্টি করে পথ অতিক্রম করতো এবং যুদ্ধের ময়দানে নিজের খ্যাতি, বীরত্ব প্রকাশ ও শত্রুর প্রতি অশালিন ভাষা প্রয়োগ করে গালি দেয়া হতো।
মুসলিম বাহিনী এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে ইচ্ছুক হলে নবী করীম (সা:) তা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষনা করলেন, 'কোনো অবস্থাতেই অহংকার প্রকাশ করা যাবে না। এমন কথাও বলা যাবে না যে কথায় অহংকার প্রকাশ পায়। অবশ্য ইসলাম নিয়ে গৌরব প্রকাশ করা যেতে পারে। অশালিন ভাষা উচ্চারণ করা যাবে না'।
হযরত আবু মুসা আসয়ারী (রা:) বলেন, আমরা নবী করীম (সা:) এর সাথে অভিযানে বের হতাম। কোনো স্থানে পৌঁছলে উচ্চকণ্ঠে আল্লাহ তা'য়ালার নাম উচ্চারণ করতাম। এ অবস্থা দেখে তিনি নির্দেশ দিলেন, 'তোমরা ধীর স্থিরভাবে চলবে। মধ্যম স্বরে আল্লাহ তা'য়ালার নাম ধরে ডাকবে। কারণ যাকে তোমরা ডাকছো তিনি বধির নন এবং অনুপস্থিতও নন। তিনি তোমাদের সাথেই আছেন অতি কাছেই আছেন'।
রাসূল (সা:) যখন কোনো অভিযানে বাহিনী প্রেরণ কালে বলতেন, 'তোমরা আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করবে। আল্লাহ তা'য়ালার নাম নিয়ে তাঁর পথে যাত্রা আরম্ভ করো। তাঁকে যারা স্বীকৃতি দেয় না তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। কিন্তু যুদ্ধে কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আত্মসাৎ করো না। লাশ বিকৃত করো না। কোনো শিশুকে হত্যা করো না'।
তিনি আরো বলতেন, 'শত্রুর সামনে তিনটি প্রস্তাব পেশ করবে। ইসলাম গ্রহণ, জিজিয়া প্রদান ও যুদ্ধ। যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে কিছুই বলো না। যদি জিজিয়া প্রদান করতে সম্মত হয় তাহলে তাদের কোনো কিছুর ওপর হস্তক্ষেপ করো না। এ দু'টোর কোনটিই যদি না করে তাহলে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে সাহায্য কামনা করে যুদ্ধ করবে'।
হযরত আবু বকর (রা:) তাঁর খেলাফতের সময় যখন সিরিয়াতে অভিযান চালিয়েছিলেন তখন তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, 'নারী শিশু ও বৃদ্ধদেরকে কেউ যেন হত্যা না করে। লাশ যেন বিকৃত না করে। সন্নাসী ও তপস্যাকারীদের যেন অসুবিধা না করে এবং কোনো ধর্মস্থান যেন ভাঙ্গা না হয়। ফসলের ক্ষেতের কেউ যেন ক্ষতি না করে এবং ফলবান গাছ যেন কেউ না কাটে। ফসলের ক্ষেত যেন আগুনে জ্বালানো না হয়। সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জনবসতীর মধ্যে যেন আতংক ছড়িয়ে সে জনবসতী শূন্য করা না হয়। যুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন কোনো পশুপ্রাণীকে যেন হত্যা করা না হয়। অঙ্গীকার যেন ভঙ্গ করা না হয়। যারা আনুগত্য স্বীকার করবে, তাদের প্রাণ ও সম্পদকে মুসলমানের প্রাণ ও সম্পদের মতই নিরাপত্তা দিতে হবে। যুদ্ধের ময়দান থেকে যেন পালানো না হয়। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ যেন আত্মসাৎ করা না হয়'।
সংক্ষেপে এটাই ছিল বিশ্বনবী (সা:) এর যুদ্ধ সীরাত। উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা তিনি কোন্ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে যুদ্ধ করেছেন তা পরিষ্কার হয়েছে এবং তাঁর যুদ্ধ পদ্ধতি কেমন ছিল তাও স্পষ্ট হয়েছে। অথচ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ইসলাম বিদ্বেষী মহল যারা নবী করীম (সা:) সম্পর্কে সমালোচনা করেন তারা মাত্র কিছুদিন পূর্বেও অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামঝি সময়েও জানতেন না যে, কোনো বাহিনীকে যুদ্ধে প্রেরণের পূর্বে তাদেরকে দিক নির্দেশনা দিতে হয়। পক্ষান্তরে রাসূল (সা:) সেই সপ্তম শতাব্দীতেই দিক নির্দেশনার সর্বোন্নত নীতি উদ্ভাবন করেছিলেন।
অতিত থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও পৌত্তলিকদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি যা ছিল, বর্তমানকালেও তাই রয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যের হীনতা ও নিকৃষ্ট নির্মম পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অতিতেও লুটপাট ও সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে তারা যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছে বর্তমান বিশ্বেও তারা সেই একই নীতি অবলম্বন করে চলেছে।
বর্বর যুদ্ধবাজদের বিপরীত উদ্দেশ্য এবং পদ্ধতি কেবলমাত্র নবী করীম (সা:) বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছিলেন। আর এমন এক জাতির মাধ্যমে তিনি তা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছিলেন, যাদের কাছে ছিল না কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির বিন্দুমাত্র চিহ্ন। যুদ্ধই ছিল যাদের জীবিকা নির্বাহের সর্বোত্তম মাধ্যম। অপরের সম্পদ লুট করে নেয়ার মধ্যে যারা গৌরব বোধ করতো। নারী শিশু অসহায় বৃদ্ধদের হত্যা করে যারা পৈশাচিক আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করতো। তাদের মাধ্যমেই তিনি মানুষের কল্পনার অতীত নিয়ম- নীতি বাস্তবায়ন করেছিলেন।
নবী করীম (সা:) এর যুদ্ধনীতি অধ্যয়ন করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি যুদ্ধকে যাবতীয় নারকীয়তা ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করেছিলেন। পক্ষান্তরে তখন হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছিল যুদ্ধের এক অবিচ্ছেদ্য নীতি। শোরগোল ও অশালীন ভাষায় গালাগালি সহকারে যুদ্ধ করা, সৈন্যদের অরাজকতা বিশৃংখলা, সেনাপতির আদেশ অমান্য করা, চুক্তি ভঙ্গ করা, অঙ্গীকার রক্ষা না করা, লুটতরাজ করা, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করা, চুক্তিবদ্ধদের হত্যা করা, দূত হত্যা করা, আহতদের হত্যা করা, বেসামরিক লোকদের হত্যা করা, লাশ বিকৃত করা, লাশের অবমাননা করা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা, রাহাজানি করা, ফসল বৃক্ষ তরু-লতা ধ্বংস করা, যুদ্ধরত নয় এমন জনপদের ক্ষতিসাধন করা এ সবই নিষিদ্ধ করা হলো।
এভাবে যুদ্ধের একমাত্র পরিচয় অবশিষ্ট থাকলো, একজন বীর সৈনিক দুশমনের সবচেয়ে কম ক্ষতিসাধন পূর্বক তার পক্ষ থেকে অকল্যাণ বা ক্ষতিরোধ করে যে কাজের মাধ্যম, তাই হলো যুদ্ধ। নবী করীম (সা:) এর দশ বছরের সামরিক জীবনে তিনি প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ বর্গ মাইল এলাকার শাসক হয়েছিলেন। এই বিশাল এলাকা তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য মুসলিম বাহিনী প্রতিপক্ষের মাত্র ২৫১ জনকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। মুসলিম বাহিনীর পক্ষে শাহাদাতবরণ করেছিলেন মাত্র ১২০ জন মুজাহিদ।
সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে সন্ধান করলেও মানুষের প্রাণের প্রতি এমন নির্মল সম্মান প্রদর্শনের একটি দৃষ্টান্তও খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুদ্ধ তো অনেক দূরের ব্যাপার, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী শাসন টিকিয়ে রাখার জন্যে পুলিশ বাহিনী দিয়েই শাসকগণ মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে অসংখ্য নিরীহ জনগণকে হত্যা করছে। পরাশক্তি ও তাদের মদদপুষ্ট দেশগুলো প্রতি নিয়ত নিরীহ মানুষকে পাখির মতোই হত্যা করছে। পৃথিবীর অন্যান্য জাতির যুদ্ধের ইতিহাস পাঠ করলে বা তাদের দাঙ্গা মারামারির ঘটনা পত্রিকার পাতায় পাঠ করলে ঘৃণায় দেহ-মন কুঞ্চিত হয়ে যায়।
0 Comments