মাতৃদুগ্ধ শুধুই দুধ নয়, এই দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম ওষুধ। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মাতৃদুগ্ধ যেসব সন্তান নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পান করার সুযোগ পেয়েছে, তারা রোগে খুব কমই আক্রান্ত হয় এবং এরা মেধাবী হয়। শিশু ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, মায়ের দুধও ক্রমশঃ ঘন হতে থাকে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পরে প্রথমে মায়ের বুকে যে দুধ থাকে, অজ্ঞতার কারণে তা অনেকে ফেলে দেয়। অথচ ঐ দুধই হলো সন্তানের সমস্ত রোগের প্রতিষেধক। শিশু বড় হচ্ছে মায়ের দুধও ঘন হচ্ছে, এর কারণ হলো-প্রথমে দুধ ঘন হলে শিশু তা চুষে বের করতে পারবে না এবং সে ঘন দুধ তার অপরিপক্ক পাকস্থলীতে হজম হবে না। পাকস্থলী ক্রমশঃ শক্তিশালী হতে থাকে, সেই সাথে মায়ের দুধও ঘন হতে থাকে। এভাবে শিশু যখন বাইরের খাদ্য আহার করতে সক্ষম হয়, তখন মায়ের দুধ ক্রমশঃ ঘন হতে হতে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। মায়ের স্তনে একটি ছিদ্র নেই, একটি ছিদ্র থাকলে তা দিয়ে বেগে দুধ নির্গত হয়ে সন্তানের কন্ঠনালীতে অসুবিধার সৃষ্টি করতো। এ জন্য মায়ের স্তনে আল্লাহ তা'য়ালা বত্রিশটি ছিদ্র দিয়েছেন যেন সমতা রক্ষা করে দুধ নির্গত হয় এবং শিশু তা পরম প্রশান্তিতে পান করতে সক্ষম হয়।
শিশু যখন বাইরের খাদ্য গ্রহণ করার উপযুক্ত হলো, তখন শক্ত খাদ্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার জন্য মাড়িতে দাঁতের প্রয়োজন। এই দাঁতের জন্য আল্লাহর কাছে কারো আবেদন করতে হয়নি। তিনি এমন রব্ব যে, তা না চাইতেই তিনি দিয়েছেন। মানুষের মাথার মগজ-যাকে ব্রেন বলা হয়ে থাকে। এই মগজ এমনভাবে মাথার খুলির ভেতরে রাখা হয়েছে, যেন তা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মগজের চারদিকে বেশ কয়েকটি আবরণ বা পর্দা নির্মাণ করা হয়েছে, এগুলো কোন কঠিন পদার্থ দিয়ে বানানো হয়নি। এগুলো করা হয়েছে নরম এবং সিক্ত। ক্রীম যেভাবে পানির ভেতরে ভাসতে থাকে, মাথার মগজকে সেভাবে সিক্তাবস্থায় রাখা হয়েছে, যেন তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে। মানুষের মাথায় অসংখ্য সেল নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো কম্পিউটার। এই কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা দেখলে হতবাক হতে হয়। তারপরেও কম্পিউটারের মেমোরির একটি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু মানুষের এই মাথা অনেকগুণ বেশী বিস্ময়কর। মানুষের মাথায় আল্লাহ যে মেমোরি দিয়েছেন, পৃথিবীর যাবতীয় তথ্য এই মেমোরিতে রাখার পরও আরো বিশাল জায়গা অবশিষ্ট রয়ে যাবে।
মানুষের চোখে কর্ম ক্ষমতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন। মানুষ রাস্তায় চলতে গিয়ে যদি সাপ দেখে, তাহলে এই চোখ অত্যন্ত দ্রুত বিপদ সংকেত প্রেরণ করে ব্রেনকে। এই ব্রেন তাৎক্ষণিকভাবে সক্রিয় করেছে পা ও হাতকে। সংকেত দিয়েছে হাতে যদি কোন অস্ত্র থাকে তাহলে তা দিয়ে সাপকে আঘাত করতে হবে আর না থাকলে পায়ের শক্তিতে দৌড় দিতে হবে। বিষয়টি যতটা সহজ মনে করা হয় প্রকৃতপক্ষে তা নয়। বিষয়টি এত অল্প সময়ের ভেতরে বাস্তবায়িত হয় যে, এতে কতটুকু সময় ব্যয় হলো তা মানুষের পক্ষে হিসাব করে বের করা অসম্ভব। চোখ সাপ দেখলো এবং সে মাথায় সংবাদ প্রেরণ করলো, মাথা পা ও হাতকে সক্রিয় করলো। এই পুরো বিষয়টি সংঘটিত হতে, এক সেকেন্ডেরও সময়ের প্রয়োজন হয়নি, এক সেকেন্ডের কয়েক লক্ষ ভাগের একভাগ মাত্র সময় প্রয়োজন হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি সম্ভব করা কেবল মাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষেই সম্ভব আর এ জন্যেই তাঁর যাবতীয় প্রশংসা।
আবার মানুষ তার চোখে যা দেখে তা নেগেটিভ ভঙ্গীতে দেখে থাকে। নেতিবাচক দৃশ্য ধরে চোখ তা ব্রেনে পৌঁছে দেয় এবং সেখান থেকে তা পজিটিভ হয়ে বের হয়ে আসে এবং মানুষ তখন স্পষ্ট দেখতে পায়। আল্লাহ হলেন রব্ব এবং এসব ব্যবস্থা তিনিই করেছেন। মানুষ তার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে অসংখ্য শব্দ শুনে থাকে। কিন্তু অনেকগুলো শব্দ একই সাথে কানে প্রবেশ করে অস্বাভাবিক কোন শব্দের সৃষ্টি করে না, কোন একটি শব্দও জড়িয়ে যায় না। মানুষের জিহ্বার গঠন প্রণালী এমন যে, জিহ্বা অসংখ্য স্বাদ গ্রহণ করতে ও পার্থক্য নির্দেশ করতে সক্ষম। এ জন্য সেই রব্ব-এরই প্রশংসা করতে হবে, যিনি তাঁর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দিয়ে মানুষকে এত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন।
1 Comments
masalla
ReplyDelete