বিজ্ঞান ও কোরআন মধ্যে সম্পর্ক

        পবিত্র কোরআনে কারীম গোটা বিশ্বের মহাবিস্ময়। কোরআনে কারীম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক জীবন্ত মুক্তিযা। কোরআন মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের পক্ষ হতে গোটা বিশ্ববাসীর জন্য আখেরী হেদায়েতের গ্রন্থ হিসেবে এ পৃথিবীর বুকে এসেছে। এ কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সবকিছু স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। পৃথিবীর এমন কোন লোক বলতে পারবে না যে এর মধ্যে অমুক বিষয় বাদ পড়েছে বা এ বিষয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি। সবকিছুর বর্ণনা আল্লাহ পবিত্র কোরআন কারীমে তুলে ধরেছেন (তিবইয়ানান লিকুল্লি শাইয়া)। পবিত্র কোরআন চিরন্তন। আপনারা জানেন, আবহাওয়ার বার্তা বিভাগ থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়। যেমন- এই এলাকার ওপর দিয়ে এত মাইল বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং তার সাথে জলোচ্ছ্বাস ও বৃষ্টিপাতও হতে পারে। সুতরাং তারা একটি সম্ভাবনার কথা বলে থাকেন; কিন্তু কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে, এই এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হবেই।

        কোন বিজ্ঞানী একথা বলতে সাহস পাবে না। কিন্তু কোরআন নিশ্চিত করে বলেছে

اذا السَّمَاءُ انْفَطَرَتْ وَإِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ وَإِذَا الْبِحَارُ فُجَرَتْ وَإِذَا الْقُبُورُ بُعْثِرَتْ

        আসমান যখন ফেটে যাবে। তারাগুলো যখন ছড়িয়ে পড়বে। সমুদ্র যখন দীর্ণ-বিদীর্ণ করা হবে। কবরগুলো যখন খুলে দেয়া হবে। (সূরা ইনফিতার-১-৪)

        নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ হতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন পেশ করলেন। তাতে এ ধরনের কোন কথা নেই যে, আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যেতে পারে, তারকাসমূহ বিক্ষিপ্ত হয়ে যেতে পারে, কবরসমূহ হতে সমস্ত প্রাণীগুলো উত্থিত হতে পারে ইত্যাদি, এ ধরনের কোন কথা নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ভাষায় সমস্ত কথাগুলো নিশ্চিত করে বলেছেন।

        আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে যত নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, সমস্ত নবী ও রাসূলের কথা এক, কেউ দু'ধরনের কথা বলেননি। পৃথিবীর দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কথা বলেছেন। কার্ল মাক্স বলেছেন, মানুষ হচ্ছে পেট সর্বস্ব জীব। ফ্রয়েড বলেছেন, সেক্স সর্বস্ব জীব। ডারউইন বলেছেন, মানুষতো বানরের বংশধর। পৃথিবীর বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কথা একজনের সাথে আরেক জনের কোন মিল নেই। আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম হতে শুরু করে হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সমস্ত নবী ও রাসূলের কথায় কোন গড়মিল নেই। কেউ এ কথা বলেননি যে, পরকাল হতে পারে বা সমস্ত মানুষের হাশরের ময়দানে হিসেব দিতে হতে পারে। এ ধরনের কোনো অনিশ্চিত কথা নবী বা রাসূল বলেননি। নবী ও রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন। সবার মিশন ছিল এক, সকলের শ্লোগান ছিল একটিই আর তাহলো- لا اله الا الله সকল নবী ও রাসূলের কথাগুলো মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট হতে এসেছে। একটি কথাও 'হতে পারে' এরকম নেই, সব কথা নিশ্চিত হয়ে বলেছেন। সুতরাং পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়েছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়েছেন। তারা ভয় পেয়েছেন। তাদের ধারণা পাঁচটি গ্রহ একই সাথে একই রেখার মধ্যে যদি এসে যায়, তাহলে তো পৃথিবীর মানুষগুলো সমস্যায় পড়ে যাবে। এ চিন্তায় তারা অস্থির। কারণ তারা কোরআন জানে না। কোরআনে কারীম সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই বলে তারা এ চিন্তায় অস্থির। এ পৃথিবীর কিছুই হঠাৎ করে ধ্বংস হবে না। এ গ্রহগুলো যদি সুতার মালার মত একটির পর আরেকটির পিছনে কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায় তাহলেও দুর্ঘটনা ঘটবে না। কারণ মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন-

لا الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تَدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

        রাত দিনকে অতিক্রম করবে না, চন্দ্র সূর্যকে ধরতে পারবে না, দিন রাতের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না, সূর্য চন্দ্রকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না, সবগুলো তার আপন আপন কক্ষপথে স্বাতন্ত্রশীল থাকবে। (সূরা ইয়াসীন-৪০)

        কোনো কিছুই স্থির নেই, সব কিছু ঘুরছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুঝেছেন অনেক পরে। কেউ বলেছেন সূর্য ঘুরছে, কেউ বলেছেন পৃথিবী ঘুরছে। আসলে যে কি ঘুরছে তা বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন না। ।। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন- وَمَا أُوتِيْتُمْ . مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا আমি তোমাদেরকে একেবারে সামান্যতম জ্ঞান দান করেছি। (বনি ইসরাইল-৮৫)

        যদি إِلَّا قَلِيْلِ বলা হত তাহলে হয়ত বুঝা যেত আল্লাহ তায়ালা কিছু জ্ঞান দান করেছেন। তা না বলে বলা হলো তোমাদেরকে খুব সামান্যতম জ্ঞান দেয়া হয়েছে। এ সামান্যতম জ্ঞান কোরআনে কারীমের মধ্যে যখন পাঠ করি তখন আসলেই অবাক হওয়া ব্যতীত আর কোনো উপায় থাকে না। এ পৃথিবীতে আমরা বাস করি পঁচিশ হাজার ব্যাসার্ধে (গোলার্ধে)। মহাশূন্যের দিকে যদি দৃষ্টি নিক্ষেপ করি তাহলে দেখতে পাই, এ মহাশূন্য কি- এটা সম্পর্কে আমাদের মানুষের অনেকের ধারণা নেই। অবশ্য বিজ্ঞান নিয়ে যারা লেখাপড়া করেন, বিচার বিশ্লেষণ করেন, তারা জানেন মহাশূন্যের ভেতরে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ইউরেনাস, নেপচুন, বুধ, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও সমস্ত গ্রহ যে আছে তাদের আবার প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন সৌরজগৎ আছে। সৌরজগৎ সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি ততটুকু নয়। বিশাল বিশাল সৌরজগৎ রয়েছে। অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে। আবার এ গ্যালাক্সির ভেতর বিলিয়ন বিলিয়ন তারকা রয়েছে। সূর্য পৃথিবীর চেয়ে তের লক্ষ গুণ বড়, এ রকম তিন কোটি সূর্য খেয়ে হজম করতে পারবে, গ্যালাক্সির ভেতরে সেরকম দৈত্য তারকা রয়েছে হাজার হাজার। এরপর বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন হয়ত এটাই শেষ আবিষ্কার করলেন; কিন্তু না এটাই শেষ আবিষ্কার নয়, এর থেকেও আরো অনেক কিছু অনাবিষ্কৃত রয়েছে, সেটা হল ব্লাক-হোল। ব্লাক-হোল হচ্ছে, যে তারকা তিন কোটি সূর্য খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে, আর সে তারকাগুলো ঘুরতে ঘুরতে যখন ব্লাক-হোলের আওতায় এসে যায়, তখন এমন দেখায়, মানুষ চকলেট চুষে নিঃশেষ করলে যেমন দেখায়, ঠিক তেমনই। যে তারকা পৃথিবীর চেয়ে তের লক্ষ গুণ বড় সে তারকাগুলোকে ব্লাক-হোল নিমিষে চুষে শেষ করে দেয়। এটা আবিষ্কার করছেন আজকের বিজ্ঞানীরা।

        কিন্তু কোন বিজ্ঞানাগারে লেখা পড়া না করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী, যিনি লিখতে জানেন না, পড়তে জানেন না, যিনি নাম দস্তখত করতে জানেন না, যাঁকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَبُ وَلَا الْإِيْمَانُ 

        আপনি জানতেন না কিতাব কাকে বলে? আপনি একথাও জানতেন না ঈমান কাকে বলে? (আমি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছি।) (সূরা শুরা-৫২) 

وَمَا كُنْتَ تَتْلُوا مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلَا تَخْطُهُ بِيَمِنِكَ إِذًا لأَرْتَابَ الْمُبْطِلُونَ

(হে রাসূল) ইতিপূর্বে তুমি কোন কিতাব পড়তে না এবং স্বহস্তে লিখতেও না, যদি এমনটি হতো, তাহলে অবিশ্বাসীরা সন্দেহ পোষণ করতে পারতো। (আনকাবৃত) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষক হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, আমি পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছি শুধুমাত্র শিক্ষক হিসেবে। আমি কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষকমণ্ডলীর শিক্ষক। তাঁর নিকট জ্ঞান এসেছে স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ হতে, কোন সাধারণ বা অসাধারণ মানুষের পক্ষ হতে নয়।

        ভেবে আশ্চর্য হতে হয় যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিজ্ঞানাগারে লেখা পড়া করেননি, যিনি অন্ধকার যুগে এ পৃথিবীতে এসে এমন এক কিতাব বিশ্বের মানুষকে উপহার দিলেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত তা বিজ্ঞানকে আলোকিত করতে থাকবে, বিজ্ঞানীরা ভিক্ষুকের মত কোরআনে কারীমের দরজায় হাত পেতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। যতদিন না কিয়ামত হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এতিমের মত হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকবে বিজ্ঞানীরা।

        বিজ্ঞানীরা ব্লাক-হোল আবিষ্কার করলেন আজকে, আর আজ হতে দেড় হাজার বছর পূর্বে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখে মহান আল্লাহ জানিয়েছেন-

فَلَا أُقْسِمُ بِمَوَاقِعِ النُّجُومِ -

             শপথ করছি সে পতিত স্থানের যে স্থানে তারকাসমূহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। (সূরা ওয়াকিয়া-৭৫)

        তারকাগুলো যে স্থানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সে স্থান হল ব্লাক-হোল, এটা আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা বর্তমানে। সমস্ত বিজ্ঞানের উৎস হচ্ছে পবিত্র কোরআনুল কারীম। বিজ্ঞানের সাথে কোরআনুল কারীমের কোন দ্বন্দ্ব নেই। তবে যদি কোথাও বিজ্ঞানের সাথে কোরআনের মতানৈক্য ঘটে তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোরআনের কাছ থেকে। পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, দার্শনিক, চিকিৎসক, চিন্তাবিদদেরকে মাথা নত করতে হবে পবিত্র কোরআনের কাছে। কারণ কোরআন হচ্ছে সমস্ত জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের উৎস।

Post a Comment

0 Comments