ছায়াপথই গোটা সৃষ্টিজগৎ নয়

        আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহুমাত্রিক জগতের ধারণা দিয়ে অবিশ্বাসীদের সামনে তাঁর অস্তিত্বই প্রকাশ করেছেন। এসব দেখেও যারা তাঁর অস্তিত্বে, তাঁর একত্বে, রিসালাতের ওপরে, আখিরাতের প্রতি সংশয়যুক্ত মানসিকতা লালন করবে, তাদেরকে কপাল পোড়া ছাড়া আর কি-ই বা বলা যেতে পারে। আমাদের এ পৃথিবী যে সৌরজগতের অন্তরভুক্ত তার বিশালত্বের অবস্থা হলো এই যে, তার কেন্দ্রীয় সূর্যটি পৃথিবীর ভরের তিন লক্ষ বত্রিশ হাজার আট শত গুণ। আর সূর্যের ব্যাস হলো পৃথিবীর ব্যাসের একশত নয় গুণ। ঘনত্ব একহাজার চারশত দশ গ্রাম বা ঘন সেন্টিমিটার।

        সূর্যের সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ-যার নাম দেয়া হয়েছে নেপচুন, সূর্য থেকে এর দূরত্ব কমপক্ষে দুই শর্ত ঊনআশি কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল। বরং যদি পুটো নামক গ্রহটিকে দূরবর্তী গ্রহ হিসাবে ধরা হয় তাহলে সূর্য তার দূরত্ব চারশত ষাট কোটি মাইলে গিয়ে উপনীত হয়। এত বড় বিশাল হবার পরও এ সৌরজগৎ একটি বিরাট বিশাল গ্যালাক্সী বা ছায়াপথের নিছক একটি ছোট্ট অংশ মাত্র।

        মানুষ যেখানে অবস্থান করছে, এই সৌরজগৎ যে গ্যালাক্সী বা ছায়াপথটির অন্তরভুক্ত তার মধ্যে প্রায় তিন হাজার মিলিয়ন অর্থাৎ তিনশত কোটি সূর্য রয়েছে এবং সে সূর্যের সবচেয়ে কাছের সূর্যটি এই পৃথিবী থেকে এতদূরে অবস্থান করছে যে, তার আলো পৃথিবীতে পৌঁছতে চার বছর সময়ের প্রয়োজন হয়।

        এই ছায়াপথই গোটা সৃষ্টিজগৎ নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীগণ যে অনুমান করেছেন, তাহলো প্রায় বিশ লক্ষ নীহারিকাপুঞ্জের মধ্যে এই ছায়াপথও একটি এবং ঐ বিশ লক্ষ নীহারিকাপুঞ্জের ভেতর থেকে সবচেয়ে কাছের নীহারিকা এত দূরে অবস্থিত যে, তার আলো আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছতে দশ লক্ষ বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। বর্তমান বিজ্ঞানীগণ যে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দূরের যে নীহারিকাটি দেখেছেন, তার আলো পৃথিবীতে পৌঁছতে দশকোটি বছর সময়ের প্রয়োজন হয়। তারা বলছেন, এটাই শেষ নয়-এরপরও আরো অসংখ্য জগৎ রয়ে গিয়েছে, অসংখ্য নীহারিকা রয়ে গিয়েছে, যেগুলো বিজ্ঞানীদের দূরবীক্ষণ যন্ত্রে এখনো ধরা পড়েনি। ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করা সম্ভব হলে, তার সাহায্যে অনেক কিছুই দেখা যেতে পারে। সুতরাং এ যাবৎ বিজ্ঞানীগণ আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের যে নমুনা দেখেছে, তার তুলনা করা যেতে পারে, গোটা পৃথিবীর সমস্ত বালুকণার মধ্যে মাত্র একটি বালুকণার সাথে। আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির তুলনা যদি পৃথিবীর সমস্ত বালুকণার সাথে করা হয়, তাহলে বলা যেতে পারে, বিজ্ঞানীগণ মাত্র একটি বালুকণার সমান অংশের সন্ধান পেয়েছেন।

        আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীগণ যে পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, এই ক্ষুদ্র পৃথিবী যেসব উপাদানে গঠিত হয়েছে এবং যে নিয়মের অধীন, গোটা সৃষ্টি জগতসমূহ সেই একই উপাদানে গঠিত হয়েছে এবং সেই একই নিয়মের অধীন। পার্থক্য রয়েছে শুধু পরিবেশের। পৃথিবী সৃষ্টির উপাদান ও অন্যান্য জগৎ সৃষ্টির উপাদান যদি একই না হতো, তাহলে এই পৃথিবীতে অবস্থান করে মানুষ যে অতি দূরবর্তী জগতসমূহ পর্যবেক্ষণ করছে, দূরত্ব পরিমাপ করছে এবং তাদের গতির হিসাব বের করছে, এসব করা কখনো সম্ভব হতো না। সমস্ত সৃষ্টি জগতে একই ধরনের উপাদান ও নিয়ম কার্যকর রয়েছে বলেই বিজ্ঞানীদের পক্ষে এসব করা সম্ভব হচ্ছে। সমস্ত জগতে যে নিয়ম-শৃংখলা, প্রজ্ঞা-দক্ষতা, কলাকৌশল, শিল্পকারিতা, সৃষ্টির নিপুণতা, নান্দনিক সৌন্দর্য, উন্নত রুচির প্রকাশ, নিখুত শিল্পকর্ম, একটির সাথে আরেকটির সম্পর্ক এবং অগণিত গ্যালাক্সী ও তাদের মধ্যে সঞ্চরণশীল শত শত কোটি গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে দেখা যায়, এসব দেখে কি কোন জ্ঞান-বিবেক, বুদ্ধিমান মানুষ এ কথা কল্পনা করতে পারে যে, এসব স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এসব নিয়ম-শৃংখলার পেছনে কোন ব্যবস্থাপক, কোন কৌশলী শিল্পী, কোন মহাবিজ্ঞানী এবং মহাপরিকল্পনাকারীর অস্তিত্ব অনুপস্থিত?

        বিজ্ঞানীদের এসব আবিষ্কার ও কার্যাবলীই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, সৃষ্টি জগতসমূহের স্রষ্টা আছেন এবং তিনি একজন। একচ্ছত্র সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন মাত্র একটি সত্তাই সমস্ত সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন-আর তিনিই হলেন রাব্বুল আলামীন-সৃষ্টি জগতসমূহের রব্ব-প্রতিপালক।

Post a Comment

0 Comments