পবিত্র কুরআনের বিস্ময়কর মু'জিযা

        হযরত উমার (রা:) এর মতো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মানুষও কুরআনের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কুরআনের প্রভাব তাঁকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। আল্লাহর রাসূলকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে একদিন রাতে তিনি রাসূলকে অনুসরণ করছিলেন। গভীর রাতে আল্লাহ তা'য়ালার নবী কা'বাঘরে নামাজে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। হযরত উমার (রা:) তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি অন্ধকারে অদূরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নবীর পবিত্র জবান মুবারক থেকে কুরআন শুনছিলেন। কুরআনের বাণীর অপূর্ব সামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করে তাঁর মনে এ কথার উদয় হলো, 'মুহাম্মাদ (সা:) সম্ভবত উচ্চমানের কবি হয়েছেন'। তিনি মনে মনে এ কথাগুলো বলছিলেন আর সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাসূলের মুখ থেকে উচ্চারিত করালেন-

وَمَا هُوَ بِقَوْل شَاعر ط قَليْلاً مَّا تُؤْمِنُوْنَ لا

        এটা কোনো কবির কাব্যকথা নয়, যদিও তোমরা খুব কমই বিশ্বাস করো। (সূরা হাক্কাহ-৪১)

        বিস্ময়ের ধাক্কায় স্তব্ধ অনড় হয়ে গেলেন হযরত উমার (রা:)। অবাক দৃষ্টিতে তিনি তাকিয়ে রইলেন আল্লাহর রাসূল (সা:) এর দিকে। বিস্ময়ের ঘোর কেটে যেতেই তিনি মনে মনে বললেন, 'এই লোকটি শুধু উচ্চমানের কবিই হননি, সেই সাথে একজন উচ্চ পর্যায়ের গণৎকারও হয়েছেন। তা না হলে তিনি আমার মনের কথা জানলেন কেমন করে?' তাঁর মনে এ কথা উদিত হবার সাথে সাথে আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর হাবীবের মুখ থেকে সূরা হাক্কাহ্-এর পরবর্তী আয়াত উচ্চারিত করালেন-

وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنِ طَ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ طَ

        এটা কোনো গণক বা জ্যোতিষির কথাও নয়; যদিও তোমরা খুব কমই বিবেক বিবেচনা করে চলো। (সূরা হাক্কাহ্-৪২)

        হযরত উমার (রা:) বিস্ময়ের দ্বিতীয় ধাক্কা খেলেন। তিনি মনে মনে যা বলছেন, আর তার জবাব রাসূল দিচ্ছেন। বিষয়টি তাঁকে সত্য গ্রহণের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল। তাঁর মনে পুনরায় প্রশ্ন জাগলো, 'মুহাম্মাদ (সা:) যা পাঠ করছেন, তা কবির বা গণৎকারের কথা নয়। তাহলে তিনি এ কালাম কোথা থেকে লাভ করলেন?' তাঁর মনের এ প্রশ্নের উত্তরও রাসূল (সা:) এর মুখ থেকে শোনা গেল। তিনি সূরা হাক্কাহ্ এর পরবর্তী আয়াত তিলাওয়াত করলেন-

تَنْزِيلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِينَ

        (মূলত) এ কিতাব বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহ তা'য়ালার কাছ থেকেই (তাঁর রাসুলের ওপর) অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আল-হাক্কাহ্-৪৩)

        অবশেষে কুরআন এমন প্রভাব হযরত উমার (রা:)-এর ওপর বিস্তার করেছিলো যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কুরআনের পূর্বে যেসব কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তা যথাযথ বৈজ্ঞানিক পন্থায় সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা না থাকায় মূল কিতাব বিকৃত হয়েছিল। পক্ষান্তরে কুরআন অবতীর্ণ হবার সাথে সাথে আল্লাহর নির্দেশে নবী করীম (সা:) তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এ জন্য কুরআনের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার কোনো অবকাশ নেই। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে প্রচার মাধ্যমে কোনো একজন কুরআন তিলাওয়াত করছে, যদি সে কোথাও সামান্য একটু ভুল করে তাহলে পৃথিবীর অপর প্রান্তে বসে শ্রবণরত হাফেজে কুরআন তা শোনার সাথে সাথে বুঝতে পারবে তিলাওয়াতকারী অমক স্থানে ভুল উচ্চারণ করেছে। পরক্ষণেই সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাফেজে কুরআনগণ সেই তিলাওয়াতকারীকে জানিয়ে দেবে, অমুক আয়াতে সে ভুল উচ্চারণ করেছে বা তিলাওয়াতের সময় অমুক শব্দ বাদ পড়েছে। এভাবে পবিত্র কুরআন অবিকৃত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

        আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকেই তাঁর কিতাব পাঠ করার একটি নিয়ম চিরপ্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হয়েছে। সে নিয়মটি হলো, কুরআন যে ভাষায় যে ভঙ্গীতে অবতীর্ণ হয়েছে, ঐ ভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় এই কিতাব তিলাওয়াত করা যাবে না। এ কিতাব যে কোনো ভাষায় অনুবাদ করা যেতে পারে, যে কোনো ভাষার মাধ্যমে তা অনুধাবন করা যেতে পারে এবং তা অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে কুরআনের অবিকৃত আরবী ভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় তা তিলাওয়াত করার অনুমতি দেয়া হয়নি। এই সুযোগ যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে করে দেয়া হতো, তাহলে এ কিতাবে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করার সুযোগ থাকতো। যে কোনো ধরনের বিকৃতি থেকে হেফাজত করার লক্ষ্যেই আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে রাসূল (সা:) এর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন--

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ

        আমিই উপদেশ (সম্বলিত কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষণকারী।
(সূরা হিজর-৯)

Post a Comment

0 Comments