দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করা ব্যতীত মহান আল্লাহ তা'য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয় এবং এই কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার অর্থই হলো, সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীতে আল্লাহদ্রোহীতার যে প্লাবন বয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের এই পথ মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ নয়- এই পথ কণ্টকাকীর্ণ। এই কাজ যেমন মর্যাদপূর্ণ তেমনি বিপদসঙ্কুল খেদমতের কাজ। এই পথে অগ্রসর হবার সাথে সাথে অবশ্যম্ভাবীরূপে বিবিধ প্রকার বিপদ-মুসীবত অবতীর্ণ হবে, কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে, নানা প্রকার ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। কিন্তু ধৈর্য, দৃঢ়তা, তিতীক্ষা, সঙ্কল্প, উচ্চাকাঙ্খা ও অবিচল ভূমিকার মাধ্যমে এসব কঠিন বিপদের মোকাবেলা করে আল্লাহর পথে দুর্বার গতিতে অগ্রসর হতে হবে আর তখনই তাদের ওপরে মহান আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ বৃষ্টির মতোই বর্ষিত হতে থাকবে।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই মহান কাজ করার জন্য যে শক্তি-সামর্থ প্রয়োজন, তা দুটো জিনিসের মাধ্যমে লাভ করা যেতে পারে। প্রথম হলো 'সবর' বা ধৈর্য ও যাবতীয় গুণ-বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে বিকশিত করা। (সবরের বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য তাফসীরে সাঈদী-সূরা আসরের তাফসীর দেখুন।)
দ্বিতীয় হলো নামায। নামাযের মাধ্যমে নিজেদেরকে অত্যন্ত দৃঢ় ও শক্তিশালী করে তোলা। এ জন্যই আল্লাহ তা'য়ালা দ্বীন প্রতিষ্ঠাকামী লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন-
يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلوة
হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাযের সাহায্য প্রার্থনা করো, আল্লাহ ধৈর্যশীল লোকদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা-১৫৩)
দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এই পথে মানুষকে অবর্ণনীয় অত্যাচার, নির্যাতন, নিষ্পেষন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা ইত্যাদি সহ্য করতে হয়। আর এসব বিপদ-মুসিবতের মোকাবেলায় মনকে সুদৃঢ় রাখার একমাত্র মাধ্যম হলো নামায। এ কারণেই উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে, 'ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।' ইসলামের বিপরীত মতবাদ-মতাদর্শের লোকজন দ্বীন প্রতিষ্ঠাকামী লোকদেরকে এমন এমন ভিত্তিহীন কথা বলবে, যা শুনলে মন-মানসিকতা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়, উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে। এই অবস্থা যেনো কোনো মুমিনের মধ্যে সৃষ্টি না হয়, এ জন্যই আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর সাথে মুমিনের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে নবীকে লক্ষ্য করে মুমিনদেরকে বলেছেন-
وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُنْ مِّنَ السَّجِدِينَ وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
আমি জানি, এরা তোমার সম্পর্কে যেসব কথা বানিয়ে বলে তাতে তুমি মনে ভীষণ ব্যথা পাও। এর প্রতিকার এই যে, তুমি নিজের রব-এর প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে থাকো, তাঁরই সকাশে সিজদাবনত হও এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রব-এর দাসত্ব করে যেতে থাকো। (সূরা হিজর-৯৭-৯৯)
এই নামাযই যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মনকে প্রশান্তিতে ভরে তুলবে। নামায যাবতীয় যন্ত্রণার উপশম, মানুষের ভেতরে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার জন্ম দেয়। আল্লাহর সৈনিকের সাহস ও হিম্মত বৃদ্ধি করে এবং ঐ যোগ্যতা ভেতরে সৃষ্টি করে দেয়, দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অটল-অবিচল থাকার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন। একদিকে ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠী তাকে গালিগালাজ করছে, তার বিরুদ্ধে অন্যায় অপবাদ ছড়াচ্ছে, তার পথে প্রতিরোধের দেয়াল তুলে দিচ্ছে, অন্য দিকে সে এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে সম্মুখের দিকে দুর্বার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে- এই যোগ্যতা নামাযই সৃষ্টি করে দেয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের ওপরে পাহাড়-পর্বত সমান বিপদ-মুসিবত এসেছে, এ সময় আল্লাহ তা'য়ালা তাঁদেরকে নামাযের প্রতি দৃঢ়তা প্রদর্শনের আদেশ দিয়েছেন। কারণ এই নামাযই যাবতীয় বিপদ-মুসিবতকে অগ্রাহ্য করার মতো মনোবল সৃষ্টি করে দেয়।
অভাব যখন ঘিরে ধরেছে, দিনের পর দিন অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে, এক বস্ত্রে দিনের পর দিন অতিবাহিত করতে হয়েছে, চোখের সামনে দেখা গিয়েছে ইসলাম বিরোধী শক্তির শান-শওকত আর জাঁকজমক পূর্ণ অবস্থা, সন্তান-সন্ততি ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার করেছে, এই অবস্থাতেই একমাত্র নামাজই মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তির প্রলেপ দিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلوةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْئَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوى
নিজের পরিবার পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও নিয়মিত পালন করতে থাকো। আমি তোমার কাছে কোনো রিযিক চাই না, রিযিক তো আমিই তোমাকে দিচ্ছি এবং শুভ পরিণাম তাকওয়ার জন্যই। (সূরা ত্বা-হা-১৩২)
এই আয়াতে পারিবারিক একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্ম নিয়োগ করেছো তারা ঐ লোকগুলোর তুলনায় অস্বচ্ছল- যারা আমার বিধানের বিরোধিতা করছে এবং পৃথিবীতে পাপের প্রস্ববণ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তাদের অন্যায় ভোগ-বিলাসিতা দেখে তোমাদের সন্তান-সন্ততি নিজেদের অভাব-অনটন ও দুরাবস্থার কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে না পড়ে- এ জন্য তাদেরকে নামায আদায়ের আদেশ দাও। তাহলে নামাযই তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাবে এবং তাদের মূল্যবোধ পরিবর্তিত করে দেবে। তাদের আগ্রহ ও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু পরিবর্তন হয়ে যাবে। তারা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রিযিকের ওপর সবর করবে এবং তাতেই পরিতুষ্ট হবে।
ঈমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে যে কল্যাণ অর্জিত হয় সেই কল্যাণকে তারা এমন ভোগের ওপর প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেবে, যা অন্যায় ও অসৎ এবং পার্থিব লোভ-লালসার পথে অর্জিত হয়েছে। আর আমার কোনো লাভের জন্যও নামায আদায় করতে বলছি না, বরং এতে তোমাদের নিজেদেরই লাভ নিহিত রয়েছে। সেই লাভ হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হবে আর একমাত্র তাকওয়াই হলো পৃথিবী ও আখিরাতে, উভয় স্থানে স্থায়ী এবং কল্যাণের প্রতীক ও মাধ্যম।
হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে মসজিদে নিয়মিত জামাআতে নামায আদায় করতে দেখবে, তখন তাকে মুসলমান বলে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (তিরমিযী)
আমরা ইতোপূর্বেও উল্লেখ করেছি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্গত কোনো ব্যক্তি নামায আদায় করে না- এ কথা কল্পনা করার কোনো অবকাশই ছিলো না। এমনকি জামাআতে নামায আদায় না করলে তাকে মুসলিম সমাজের একজন বলে তাকে কেউ স্বীকৃতিই দিতো না।
মুনাফিক যারা ছিলো, তারাও মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতে নামায আদায় করতে বাধ্য হতো। নামায ছেড়ে দেয়ার কেনো অবকাশ সে সমাজে ছিলো না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে, বর্তমান মুসলিম সমাজের একটি বড় অংশ নামায তো আদায় করেই না- বরং ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সাথে বিরোধিতার ক্ষেত্রে কুফুরী শক্তির তুলনায় অধিক যোগ্যতার সাথে বিরোধিতা করে, ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, তারপরও নিজেদেরকে মুসলমান হিসাবে দাবি। এই শ্রেণীর লোকদের পরিচয় আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন-
مُّذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لا إِلى هَؤُلَاءِ وَلَا إِلَى هُؤُلاءِ
এরা কুফরী ও ঈমানের মাঝখানে দোদুল্যমান হয়ে রয়েছে, না পূর্ণভাবে এদিকে না পূর্ণভাবে ওদিকে। (সূরা নিসা-১৪৩)
নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবি করে এমন সভ্যতা-সংস্কৃতি ও মতবাদ-মতাদর্শ অনুসরণ করে এবং তা সমাজ ও দেশের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিকভাবে চেষ্টা-সাধনা করে, যে সভ্যতা-সংস্কৃতি ও মতবাদ-মতাদর্শ ইসলামী জীবন বিধানের সম্পূর্ণ বিপরীত। ঐসব আদর্শ সমাজ ও দেশে প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাভাবিকভাবেই ইসলামী মূল্যবোধের শেষ চিহ্নটুকু বিদায় গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। এসব কুফুরী মতবাদ-মতাদর্শ অনুসরণ করে ও সমাজ-দেশের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাজনৈতিকভাবে চেষ্টা-সাধনা করেও নিজেদেরকে মুসলমান হিসাবে দাবি করে। আর তাদের দাবির অনুকূলে সাড়া দিয়ে একশ্রেণীর আলেম নামধারী লোকজন ফতোয়াও দিয়ে থাকে।
তাদের বিয়ে, মৃত্যুর পরে জানাযা, কুলখানি ও চল্লিশায় নিজেরা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানহীন সমাজের সাধারণ মুসলমানদের কাছে এ কথাই প্রমাণ করে যে, লোকটি মুসলমান ছিলো। অথচ রাসূলের যুগে মুসলিম হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে হলে তাকে অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাযের জামাআতে উপস্থিত হতে হতো এবং ইসলাম ও কুফরের সংঘাতের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও ইসলামের পক্ষে তৎপরতা প্রদর্শন করতে হতো।
পৃথিবীর প্রতিটি মানবীয় দল বা সংগঠনের যেমন তার কেনো সদস্য বা কর্মীকে দল কর্তৃক আহুত বৈঠকসমূহে কোনো কারণ ব্যতীত অনুপস্থিত হতে দেখলে নিঃসন্দেহে এটাই ধরে নেয়া হয় যে, দলের অথবা দলের কর্মতৎপরতার প্রতি তার আগ্রহ-উৎসাহ বর্তমান নেই এবং দল কর্তৃক আহুত ক্রমাগত কয়েকটি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল করে দেয়। অনুরূপভাবে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জামাআতের সাথে নামায আদায় থেকে অনুপস্থিত থাকলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে স্পষ্ট ধারণা করা হতো যে, ইসলামের প্রতি লোকটির মনে কেনোই আগ্রহ-উৎসাহ আর অবশিষ্ট নেই।
আর যদি কেউ পর পর কয়েকদিন নামাযের জামাআতে অনুপস্থিত থাকতো তাহলে এ কথা অকাট্যরূপে প্রমাণ হয়ে যেতো যে, ঐ লোকটি আর মুসলিম মিল্লাতে নেই- সে মুসলমান নয়। এ কারণেই সে যুগের পরিচিত ও বিখ্যাত এবং কট্টর মুনাফিকদেরকেও যথাসময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করার জন্য মসজিদে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত হতে হতো।
কারণ, জামাআতে নামায আদায় ব্যতীত তারা মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্গত থাকতে পারতো না এবং মুসলিম সমাজ সংগঠনের একজন হিসাবে গণ্য করা হবে না- এ কথা তাদের চেতনায় শাণিত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে জামাআতে নামায আদায় করা অথবা বাড়িতে একাকী নামায আদায় করা কোনোটিই নয়- নামায আদায় না করলেও মুসলমান থাকা যাবে। এই চিন্তা ও বিশ্বাস মানুষের ভেতরে বদ্ধমূল করে দেয়া হয়েছে। কারণ নামায আদায় করে না এবং সার্বিক আচার-আচরণ দিয়ে এ কথা প্রমাণও করে যে, সে ইসলামী জীবন বিধান পছন্দ করে না। এসব কিছু করেও উক্ত ব্যক্তি যখন দেখছে, তার যখনই প্রয়োজন হচ্ছে তখনই একশ্রেণীর আলেম তার প্রয়োজনে উৎসাহভরে সাড়া দিচ্ছে- সুতরাং সে নামায আদায় না করে এবং ইসলামী জীবন বিধানের বিপরীত আদর্শ অনুসরণ করেও মুসলমানই আছে। সে যে মুসলমান তার প্রমাণ তো এটাই যে, কোরআন-সুন্নাহয় অভিজ্ঞ আলেমগণ তার ডাকে সাড়া দেয়, তাকে সহযোগিতা করে।
এভাবে করে পাশ্চাত্যের নাস্তিক্যবাদী সভ্যতা-সংস্কৃতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন একশ্রেণীর মুসলমানদের মনে এই ধারণা সৃষ্টি করে দিয়েছে যে, নামায আদায় না করে ও ইসলামী জীবন বিধানের সাথে বিরোধিতা করেও মুসলমান থাকা যায়, অনুরূপভাবে তাদের অনুকূলে একশ্রেণীর আলেম নামধারী লোকদের আচরণও পাশ্চাত্যের সৃষ্টি করা ভ্রান্ত ধারণাকে দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত করেছে যে, নামায আদায় না করেও মুসলমান থাকা যায়।
কারণ ইসলামের বিপরীত মতবাদ-মতাদর্শে বিশ্বাস নামধারী মুসলিম লোকগুলো যখন দেখছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যারা গালি দিচ্ছে, ইসলামকে বিদ্রুপ করে কবিতা-সাহিত্য রচনা করছে, আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করছে, রাজনৈতিক ময়দানে ইসলামের বিপরীত মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাণপাত করছে, সুযোগ পেলেই হক্কানী আলেম-ওলামাদের ধরে দলে দলে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করছে, তাদের ওপরে নির্যাতন করছে, মসজিদে নামায আদায়ে বাধা সৃষ্টি করছে, মাদ্রাসা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে, মুসলিম নারীদেরকে পর্দাহীন হতে বাধ্য করছে।
এত কিছুর পরও ঐ লোক যখন তাদের প্রয়োজনে আলেমদেরকে ডাকছে, তখন একশ্রেণীর আলেম তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে, দলে দলে দাড়ি-টুপিওয়ালাদেরকে তাদের মিছিল-মিটিংয়ে উপস্থিত করাচ্ছে, এসবই তো তাদের মুসলমান থাকার পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ। তারা যদি মুসলমান না হতো, তাহলে তাদের ধারে কাছে কেনো আলেম ঘেষতো না, কেনো টুপিওয়ালাকে তাদের মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যেতো না। কেনো পীর সাহেবও তাদের তৎপরতার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতো না।
অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিজেকে কেনো ব্যক্তি ইসলামের কেনো একটি ক্ষুদ্র বিধানের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করার পরও নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবি করবে- এ কথা সে সমাজে কল্পনাও করা যেতো না। সে যুগে একজন মুসলমানের সাথে একজন ইয়াহুদীর একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিবাদ দেখা দিলো। বিষয়টি আল্লাহর রাসূলের কাছে উত্থাপন করা হলে তিনি সার্বিক অবস্থা জেনে ইয়াহুদীর পক্ষে রায় দিলেন।
আল্লাহর রাসূলের দেয়া রায়ে মুসলিম ব্যক্তিটি সন্তুষ্ট হতে না পেরে সে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর দ্বারস্থ হয়ে জানালো, 'আমি একজন মুসলমান, নামায আদায় করি, জিহাদেও যোগ দেই, রায়টা তো আমার পক্ষে আসা উচিত ছিলো। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদীর পক্ষে রায় দিয়েছেন। সুতরাং আপনি বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করে দিন।' এ কথা শুনে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু রোষকষায়িত লোচনে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, 'আল্লাহর রাসূলের সিদ্ধান্তের সাথে যারা দ্বিমত পোষণ করে, তাদের বিচার হলো এই।' কথা শেষ করেই তিনি তরবারীর আঘাতে লোকটিকে হত্যা করেছিলেন।
হযরত ওমর একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন- এ কথা শোনার পরে চারদিকে একটি গুঞ্জন উঠেছিলো। আল্লাহর রাসূলও বিব্রতবোধ করছিলেন। এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ওমরের কাজের পক্ষে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিলো। বলা হলো, 'আপনার প্রভুর শপথ! আপনার সিদ্ধান্তের সাথে যারা দ্বিমত পোষণ করে তারা মুমিন নয়।'
সুতরাং হযরত ওমর যে কাজ করেছেন, সঠিক কাজ করেছেন। অথচ বর্তমানে কাফিরদের পক্ষ থেকে নয়- নামধারী মুসলমানদের পক্ষ থেকে স্বদন্তে ঘোষণা করা হচ্ছে, 'কোরআন সুন্নাহর আইন-কানুন দেশের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না।' এ কথা যিনি বলছেন, তিনিও অবলীলাক্রমে নিজেকে মুসলমান হিসাবেই মুসলিম সমাজের একজন ভাবছেন। একশ্রেণীর আলেম নামের লোকজন তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধার পরাকাষ্ঠাও প্রদর্শন করছে।
দুর্ভাগ্যক্রমে ১৯৯৬ সনের পরে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলো। সে সময় আমিও জাতীয় সংসদের একজন সদস্য ছিলাম। সংসদে আমি মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ বিল উত্থাপন করেছিলাম। মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করা যায় কিনা, তা যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলো। কমিটি সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাছে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলো। তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখিয়ে মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ বিলের বিপক্ষে মতামত পেশ করলো।
যেদিন কমিটির মিটিং হলো, সেই কমিটিতে তদানীন্তন সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেয়া ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক-যার নামের পূর্বে 'মাওলানা' উপাধি ছিলো- তিনিও উপস্থিত ছিলেন। আমি ধারণা করেছিলাম, সবাই যখন এই মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ বিলের বিরুদ্ধে কথা বলছে, মাওলানা সাহেব অন্তত এই বিলের পক্ষে কথা বলবেন। কিন্তু আমি অবাক বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম, উক্ত মাওলানা সাহেব আল্লাহর গোলামী করেন না- গোলামী করেন ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের। তিনি মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ বিলের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখলেন, শুধু তাই নয়- বাংলাদেশের সংবিধানে 'আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থার কথা বলা হয়েছে' উক্ত মাওলানা সাহেব সংবিধানে উল্লেখিত এই কথাটি বাদ দেয়ার পক্ষেও জোরালো কন্ঠে বক্তব্য রাখলেন।
আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেও এসব লোকজন নিজেদেরকে মুসলমান হিসাবে দাবি করে এবং তাদের দাবির অনুকূলে বর্তমান মুসলিম সমাজের একশ্রেণীর লোকদের কাছ থেকে সাড়াও পায়। অথচ সে যুগে আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে কোনো শব্দ উচ্চারণ করার দূরে থাক- মুনাফিকরা মসজিদে এসে জামাআতে নামায আদায় করতে বাধ্য হতো। ঈমানদারদের নামাযে উপস্থিত হওয়া আর মুনাফিকদের নামাযে আসার মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য পরিলক্ষিত হতো। ঈমানদাররা বিশেষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সাথে মসজিদে উপস্থিত হতো বা সময়ের পূর্বেই মসজিদে আসতো। নামায আদায় শেষ করেও তারা মসজিদে অবস্থান করতো। অর্থাৎ তাঁদের প্রক্যেতটি পদক্ষেপে এ কথা প্রমাণ হতো যে, তাঁরা নামাষের প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহশীল।
কিন্তু মুনাফিকদের অবস্থা ছিলো ঈমানদারদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আযান শোনা মাত্র তাদের শরীরে যেনো এলার্জি সৃষ্টি হতো। তাদের চেহারা ও আচরণে এক মহাবিরক্তি যেনো ঝরে পড়তো। একান্ত অনিচ্ছাভরে তারা মসজিদে উপস্থিত হতো, পা দুটো যেনো মসজিদের দিকে আসতে চায় না, এমন উৎসাহহীন ভঙ্গিতে হেঁটে আসতো। নামাযের জামাআত শেষ হবার সাথে সাথে তারা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠ লোকের মতো ছিকে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতো। এভাবে মুনাফিকদের প্রত্যেকটি আচার-আচরণ থেকে এ কথাই প্রমাণিত হতো যে, আল্লাহ তা'য়ালাকে স্মরণ করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম- নামাযের ব্যাপারে তারা মোটেও আগ্রহী নয়। অর্থাৎ তারা আল্লাহর গোলামী করতে ইচ্ছুক নয়। এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন-
وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصلوة قَامُوا كُسَالى يُرَاءُونَ النَّاسِ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ الأَقَليلاً
এরা যখন নামাযের জন্য চলতে শুরু করে তখন শুধু লোক দেখানোর জন্য চোখ-মুখ কাচুমাচু করে চলতে থাকে এবং আল্লাহকে তারা খুব কমই স্মরণ করে। (সূরা নিসা-১৪২)
সে যুগের মুনাফিকদের আরেকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনে এভাবে অঙ্কন করেছেন-
وَلَا يَأْتُونَ الصَّلوةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَى وَلَا يُنْفِقُوْنَ إِلَّا وَهُمْ كرهون
তারা নামাযের জন্য আসে বটে, কিন্তু আসে একান্ত অবসাদগ্রস্ত অবস্থায়। আর আল্লাহর পথে তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করে বটে; কিন্তু করে অসন্তোষ ও অনিচ্ছা সহকারে। (সূরা তওবা-৫৪)
পক্ষান্তরে বর্তমান কালের মুসলিম নামধারী বেনামাযীদের লোকদের আচরণ সে যুগের মুনাফিকদের তুলনায় অধিক বিস্ময়কর। সে যুগে আযান শোনার সাথে সাথে মুনাফিকদের গোটা অবয়বে বিরক্তির ভাব ফুটে উঠতো এবং তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মসজিদে উপস্থিত হতো। বর্তমান কালের একশ্রেণীর মুসলমানদের মধ্যে আযান শোনার পরে কোনোই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না। তারা বিরক্তিও প্রকাশ করে না অথবা নামাযেও উপস্থিত হয় না। অর্থাৎ এ ব্যাপারে তাদের কোনো চেতনাই নেই।
একটি পশু অথবা কাফির ব্যক্তি আযান শোনার পরে পূর্বে যে কাজ করছিলো তাই যেমন করতে থাকে, এ যুগের ঐ লোকগুলোও তাই করতে থাকে- যারা নামায আদায় না করেও নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করে। কাফির ব্যক্তির কানে আযান প্রবেশ করার পরে তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না এটাই স্বাভাবিক। সে যে কাজে ব্যস্ত ছিলো সেই কাজেই মগ্ন থাকবে। একটি পশু যা করছিলো, আযান শোনার পরেও তাই করতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেকে যে ব্যক্তি মুসলমান বলে দাবি করে, আযান শোনার পরে তার মধ্যে যদি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না যায়, তাহলে ঐ ব্যক্তির সাথে কাফির আর পশুর কি পার্থক্য রইলো?
নামাযই হলো মুসলমানদের প্রাণশক্তি, মুসলমানদের সকল কাজে এই নামাযই তাকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সেঅন্য কারো নয়- একমাত্র মহান আল্লাহর গোলাম এবং সেই আল্লাহ তা'য়ালা তার প্রত্যেকটি গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করছেন, সে যার উদ্দেশ্যে নামায আদায় করছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি নামায আদায়ের মাধ্যমেই এ কথার প্রমাণ পেশ করে যে, সে নিজে যেমন আল্লাহ তা'য়ালার গোলামী করতে আগ্রহী অনুরূপভাবে অন্য সকলেও যেনো শয়তানের গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে আল্লাহর গোলামী করার মাধ্যমে মুক্তি ও সফলতার দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়, এ কারণেই সে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করছে।
হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিনে সর্বপ্রথম হিসাব গ্রহণ করা হবে নামাযের। বান্দাহ্ যদি সন্তোষজনকভাবে নামাযের হিসাব দিতে পারে তাহলে সে অন্যান্য আমলেও কামিয়াব হয়ে যাবে। আর সে যদি নামাযের হিসাব সন্তোষজনকভাবে দিতে না পারে তাহলে তার অন্যান্য আমলও খারাপ হবে। (তাবরাণী)
ইমাম তিরমিযী কিতাবুল ঈমানে সহীহ সনদ সহকারে হাদীসটি এভাবে উদ্ধৃত করেছেন- হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে থেকে যে আমলটির হিসাব সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে সেটি হলো নামায।
যদি এই হিসাবটি নির্ভুল পাওয়া যায় তাহলে সে সফলকাম হবে ও নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। আর যদি এই হিসাবটিতে গলদ দেখা যায় তাহলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তার ফরজগুলোর মধ্যে কিছুটা কম দেখা যায় তাহলে মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, দেখো আমার বান্দার কিছু নফলও আছে নাকি। তার সাহায্যে তার ফরজগুলোর কমতি পূরণ করে নাও। তারপর সমস্ত আমলের হিসাব এভাবেই করা হবে। (তিরমিযী)
নামায আদায় না করার অর্থই হলো, সেই ব্যক্তি তার আপন মনিব আল্লাহ তা'য়ালা ব্যতীত অন্য কারো গোলামী করছে। আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো গোলামী করার অর্থই হলো স্পষ্ট শির্ক করা এবং শিকারীর জন্য জান্নাত হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। শিককে ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ্ বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং আখিরাতের ময়দানে যার আমলনামায় সামান্যতম শিক্ক দেখা যাবে, তার আমলনামা ঘৃণাভরে ধূলার মতোই উড়িয়ে দেয়া হবে।
এ জন্যই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মানুষের এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায ত্যাগ করা। (বোখারী-মুসলিম)
হাদীসে নামায ত্যাগ করাকে কুফরী বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরাম নামায ব্যতীত তাঁদের আমলের মধ্যে থেকে অন্য কিছু ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন না। আখিরাতের ময়দানে জাহান্নামীদেরকে যখন প্রশ্ন করা হবে-
فِي جَنَّتِ يَتَسَاءَ لُوْنَ عَنِ الْمُجْرِمِينَ مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ
কোন্ জিনিসটি তোমাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে গিয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামায আদায়কারী লোকদের মধ্যে শামিল ছিলাম না। (সূরা মুদাস্স্সির-৪২-৪৩) উল্লেখিত আয়াতের স্পষ্ট অর্থ হলো, যেসব লোক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর নাজিল করা কিতাবের যাবতীয় বিধান মেনে নিয়েছে, তাদের প্রধান কর্তব্যই হলো নামায আদায় করা। এ জন্যই জাহান্নামীরা বলবে যে, আমরা নামায আদায়কারী লোকদের মধ্যে শামিল ছিলাম না। অর্থাৎ আল্লাহর গোলামী করবো, এ কথার স্বীকৃতিই হলো নামায আদায় করা। সুতরাং আমরা নামায আদায় করিনি তথা আল্লাহর বিধান অনুসারে পৃথিবীতে জীবন পরিচালনায় ইচ্ছুক ছিলাম না।
এখানে এ কথা স্পষ্ট মনে রাখা প্রয়োজন যে, ঈমান গ্রহণ না করে কোনো ব্যক্তিই যথারীতি নামায আদায় করতে পারে না। নামায আদায় করার জন্য প্রথম ও পূর্ব শর্ত হলো ঈমান। এ কারণে নামায আদায়কারীদের মধ্যে শামিল হওয়ার অনিবার্য পরিণতি ঈমানদারদের দলে শামিল হওয়া তথা এক সমাজ-সংগঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকা, সমাজ ও দেশের বুকে নামাযের শিক্ষা তথা আল্লাহর বিধান ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে চেষ্টা-সাধনা করা।
0 Comments