আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন এবং এই জ্ঞান দুই প্রকার। একটি ওহীর জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালা নবীদের মাধ্যমে দিয়েছেন। আরেকটি হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্ক দিয়ে অর্জিত জ্ঞান। চিন্তা-চেতনা, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান। আমাদের কাছে যে জ্ঞান আছে এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
وَمَا أُوتِيتُمْ مِّنَ الْعِلْمِ الْأَقَلِيلًا
(হে মানব জাতি!) তোমাদেরকে সামান্যতম জ্ঞান দান করা হয়েছে।
গোটা পৃথিবীর মানুষের যত জ্ঞান আছে, মানুষ সৃষ্টির প্রথম দিন হতে আজ পর্যন্ত এবং এখন হতে কিয়ামত পর্যন্ত যত জ্ঞান আসবে, সমস্ত জ্ঞান এক জায়গায় করলেও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'য়ালার অনন্ত-অসীম জ্ঞানের মহাসমুদ্রের এক বিন্দু জ্ঞানের সমপরিমাণও হবে না। আমি অবাক হয়ে যাই যখন মহান আল্লাহর এ মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের আয়াত পাঠ করি। মহান আল্লাহ বলছেন, মানুষকে সামান্যতম জ্ঞান দেয়া হয়েছে। আজ আমরা সে সামান্যতম জ্ঞানের কারণে কোথা হতে কোথায় চলে গিয়েছি। গরুর গাড়ি হতে রকেট, টেলিগ্রাফ হতে ফ্যাক্স পর্যন্ত চলে গেছি। এ ফ্যাক্স মেশিনে কথাগুলো ঢুকিয়ে দিয়ে কোড বাটনে চাপ দিলে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে সে দেশের পত্রিকায় পূর্ণ ছবি এবং খবর ছাপা হবে।
আরও আশ্চর্য হওয়ার মত বিষয় হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট ছেড়ে দেয়া হয়েছে মহাশূন্যের ভেতরে। এ স্যাটেলাইট চালক ব্যতীত বছরের পর বছর ঘুরছেই। পৃথিবীর মাটি হতে প্রায় চারশত মাইল ওপর দিয়ে পৃথিবীর ছবি ও অন্যান্য তথ্য জানতে পারছে সি, এন, এন। ঐ স্যাটেলাইটের যান্ত্রিক কোন গোলযোগ দেখা দিলে পৃথিবীর মাটিতে বসে বিজ্ঞানীরা কম্পিউটারের মাধ্যমে মনিটরিং করে চারশ' মাইল ওপরের মেশিন মেরামত করছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলছেন, তোমাদেরকে সামান্যতম জ্ঞান প্রদান করেছি। এ যদি হয় সামান্যতম জ্ঞান, তাহলে আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান কত গুণ বেশী হবে! (সুবহানাল্লাহ)। সে মহামহিয়ান আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে-
قَدْ جَاءَكُمْ مِّنَ اللَّهِ نُورُ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য এসেছে আলো ও স্পষ্ট কিতাব।
এই আলো হল আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর কিতাব হচ্ছে পবিত্র কোরআন মাজীদ। এ কিতাবের নাম রেখেছেন মহান আল্লাহ নিজে। এ কিতাবের নাম শুধু কোরআন নয়। এর আরও অনেক নাম রয়েছে। যেমন- 'ফুরকান', 'হুদা', 'শিফা', 'তানযিল' ইত্যাদি অনেকগুলো নাম আল্লাহ তায়ালা নিজেই রেখেছেন।
কোরআন শব্দের অর্থ হলো বহুল পঠিত। কোরআনের মত এত বেশী পড়া হয়েছে বা হয় এমন আরেকটি বই বা কিতাব পৃথিবীতে নেই। মহান আল্লাহ বলেন-
الركتُبُ أَنْزَلْتُهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسِ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
আলিফ লাম রা। ঐশী কিতাব যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানবজাতিকে অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনতে পারেন। (সুরা ইবরাহীম)
সারা পৃথিবীর মানুষের মুখে মহান আল্লাহ তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মানুষকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, যারা বহুভাষাবিদ তারা বলুক -
عسق - يس - المر - طه - ن - ق - الم - ص
ইত্যাদি শব্দের অর্থ কি? এর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তায়ালা এবং যার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে তিনি ব্যতীত আর কেউ জানে না। এই কোরআন যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অবতীর্ণ হলো এবং তিনি তিলাওয়াত করলেন, তখন ইসলামের দুশমনরা বলতে লাগলো এই লোকটি পাগল হয়ে গিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ্)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন পাগল বলা হলো তখন তিনি তাদের কথার কোন উত্তর দিলেন না। উত্তর এলো আল্লাহর পক্ষ থেকে وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُونٍ তোমাদের সাথী পাগল নন।
আল্লাহর রাসূলের কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করতে করতে মানুষ তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়তে লাগলো। কোরআনের এমন আকর্ষণ যে, মানুষ যত পাঠ করে তত বেশী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কোরআন তিলাওয়াতে মানুষের বিরক্তি আসে না। অথচ আপনার সবচেয়ে প্রিয় একটি গান বা কবিতা বার বার পাঠ করুন। একবার দুবার দশ বারের পর তা আর ভাল লাগবে না। কিন্তু এ পবিত্র কোরআন যত বেশী পাঠ করবেন ততই ভাল লাগবে। পৃথিবীতে এমন একজন লোক খুঁজে পাবেন না যে, সে বলবে, সূরা ফাতিহা দিয়ে আর নামায পড়বো না, এটা আর ভাল লাগে না, এবার সূরা ইখলাস দিয়ে শুরু করবো।
এ বিশ্বে যত কিতাব বা বই আছে তার কোনটি পড়তে পড়তে জীবন শেষ করে ফেললেও একটি নেক আসল হবে এ ধরনের কথা আল্লাহ তায়ালা কোথাও লিখে দেননি। কিন্তু কোরআন মানুষ যত পাঠ করবে, বুঝে পাঠ করুক আর না বুঝে পাঠ করুক, দেখে পাঠ করুক আর না দেখে পাঠ করুক, প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি করে নেকী আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় লিখে দিবেন। কারণ এটা হলো আল্লাহর কালাম। পুরো ত্রিশ পারা কোরআন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি একসাথে অবতীর্ণ হয়নি। একটু একটু করে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তেইশ বছরে অবতীর্ণ হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যখন বোরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল তখন তিনি তা মুখস্থ করতেন। মুখস্থ করতে গিয়ে আল্লাহর নবী তাড়াহুড়া করতেন, মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা কিয়ামাহয় শুনিয়ে দিলেন-
لا تحرك بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ فَإِذَا قَرَأَنَّهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ
হে নবী! এই ওহীকে খুব দ্রুত মুখস্থ করে নেয়ার জন্য তোমার জিহ্বা নেড়ো না। এটা মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও পড়িয়ে দেয়া আমার দায়িত্ব। সুতরাং (আমার পক্ষ থেকে জিবরাঈল) যখন তা পড়তে থাকে, তখন তুমি তার পাঠকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকো। এরপর এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দেয়াও আমারই দায়িত্ব।
0 Comments