আল্লাহর যাবতীয় সৃষ্টিতেই রয়েছে সুন্দরের ছোঁয়া

 

        মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদেরকে অসুন্দর দেখতে চান না। তিনি যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুর ভেতরেই সৌন্দর্য বিদ্যমান। আল্লাহর সৃষ্টি এই বিশ্বলোকে কোথাও একঘেয়েমি ও বৈচিত্রহীনতা নেই। সর্বত্রই বৈচিত্র দেখা যায়। একই মাটি ও একই পানি থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হচ্ছে। একই গাছের দুটো ফলের বর্ণ, বাহ্যিক কাঠামো ও স্বাদ এক নয়। পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যাবে তার ভেতরে নানা রংয়ের সমাহার। পাহাড়ের বিভিন্ন অংশের বস্তুগত গঠনপ্রণালীতে অদ্ভুত ধরনের পার্থক্য বিরাজমান। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে একই জনক-জননীর দুটো সন্তানও একই ধরনের হয় না। পৃথিবীতে শতকোটি মানুষ, একজনের সাথে আরেকজনের চেহারার কোন মিল নেই। স্বভাবগত ও গুণগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। সৃষ্টির এই বৈচিত্র ও বিরোধই স্পষ্ট করে আঙ্গুলি সংকেত করছে, এ সৃষ্টিজগতকে কোন মহাপরাক্রমশালী বিজ্ঞানী বহুবিধ জ্ঞান ও বিজ্ঞতা সহকারে সৃষ্টি করেছেন এবং এর নির্মাতা একজন দৃষ্টান্তহীন স্রষ্টা ও তুলনাবিহীন নির্মাণ কৌশলী।

        সে অতুলনীয় নির্মাণ কৌশলী একই জিনিসের শুধুমাত্র একটি নমুনা জ্ঞানের জগতে ধারণ করে সৃষ্টি কাজ সম্পাদনে আদেশ দেননি। বরং তাঁর জ্ঞানের দর্পণে প্রতিটি জিনিসের জন্য একের পর এক এবং অসংখ্য ও সীমাহীন নমুনা, প্রতিচ্ছবি প্রতিবিম্বিত রয়েছে। বিশেষ করে মানবিক স্বভাব, প্রকৃতি ও বুদ্ধি-বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করলে যে কোন ব্যক্তি এ কথা অনুভব করতে সক্ষম যে, সৃষ্টির এই নিপুণতা কোন আকস্মিক ঘটনা নয় বরং প্রকৃতপক্ষে অতুলনীয় সৃষ্টি জ্ঞান-কুশলতার প্রকাশ্য নিদর্শন। যদি জন্মগতভাবে সমস্ত মানুষকে তাদের নিজেদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, মানসিক প্রবৃত্তি ও কামনা, আবেগ-অনুভূতি, ঝোঁক-প্রবণতা এবং চিন্তা-চেতনার দিক দিয়ে এক করে দেয়া হতো, কোন প্রকার বৈষম্য-বিভিন্নতার কোন পার্থক্য রাখা না হতো, তাহলে পৃথিবীতে মানুষের মতো একটি নতুন ধরনের সৃষ্টি প্রতিষ্ঠিত করা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতো।

        মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন এ পৃথিবীতে একটি কর্তব্য পরায়ণ-দায়িত্বশীল ও স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী ও ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন সৃষ্টিকে অস্তিত্বশীল করার সিদ্ধান্ত করেছেন, তখন মানুষের সৃষ্টিগত কাঠামোর ভেতরে সব ধরনের বিচিত্রতা ও বিভিন্নতার অবকাশ রাখা ছিল সে সিদ্ধান্তের অনিবার্য দাবী। মানুষ যে কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা ও পরিকল্পনাহীনতার ফসল নয় বরং একটা মহান বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার ফলশ্রুতি, তা মানুষের স্বভাবগত বিচিত্রতা ও বিভিন্নতাই প্রমাণ বহন করে। এখানে এ কথাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যেখানেই বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা দৃষ্টিগোচর হবে, সেখানেই অনিবার্যভাবে সে পরিকল্পনার পশ্চাতে এক বিজ্ঞানময় প্রতিষ্ঠিত সত্তার সক্রিয় সংযোগ লক্ষ্য করা যাবে। বিজ্ঞানী ব্যতীত যেমন বিজ্ঞানের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিকল্পনা ভিত্তিক সৃষ্টির পেছনে পরিকল্পনাকারীর অস্তিত্বও অস্বীকার করা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সৃষ্টি বৈচিত্র ও নিপুণতার দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন- 

أَلَمْ تَرَآنَّ اللهَ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ ثَمَرتِ مُخْتَلِفًا الْوَنُهَا وَمِنَ الْجِبَالِ جُدد بيض وحُمْرٌ مُخْتَلِفُ الْوَنُهَا وَغَرَابِيبُ سُودٌ وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَابِ وَالْأَنْعَامِ مُخْتَلِفُ الْوَنُهُ كَذَالِكَ 

        তুমি কি দেখো না আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তারপর তার মাধ্যমে আমি নানা ধরনের বিচিত্র বর্ণের ফল বের করে আনি? পাহাড়ের মধ্যেও রয়েছে বিচিত্র বর্ণের-সাদা, লাল ও নিকষকালো রেখা। আর এভাবে মানুষ, জীব-জানোয়ার ও গৃহপালিত জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের রয়েছে। 

(সূরা ফাতির-২৭-২৮)

আকাশ একটি ছাদ বিশেষ

        মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে মানুষকে যেখানে প্রেরণ করবেন, সে পৃথিবীকে নানাভাবে সজ্জিত করেছেন। পৃথিবীর ছাদ হিসাবে আকাশ সৃষ্টি করেছেন। যমীনকে গালিচার মতো বিছিয়ে দিয়েছেন। তারপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا لسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مَنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ

         সেই আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে গালিচা হিসাবে বিছিয়ে দিয়েছেন, আকাশকে ছাদ হিসাবে নির্মাণ করেছেন, তারপর সে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে তার সাহায্যে নানা ধরনের ফল উৎপন্ন করে তোমাদের জন্য রিষ্কের ব্যবস্থা করেছেন। (সূরা বাকারা-২২)

পৃথিবীর স্থলভাগকে শুধু শুষ্ক মাটি আর বালির মরুভূমি বানিয়ে তিনি শ্রীহীন করেননি। সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমিতে পরিণত করেছেন। আল্লাহ বলেন-

 وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَتًا كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا تُخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا متَرَكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِنْ طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةً وجَنَّت مِّنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهَا وغَيْرَ مُتَشَابِهِ أَنْظُرُوا إِلَى ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ 

        তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তার সাহায্যে সব ধরনের উদ্ভিত উৎপাদন করেছেন এবং তার দ্বারা শস্য-শ্যামল ক্ষেত-খামার ও বৃক্ষ-তরু-লতার সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে বিভিন্ন কোষসম্পন্ন দানা বের করেছেন, খেজুরের মোচা থেকে ফলের থোকা বানিয়েছেন, যা বোঝার ভারে নূয়ে পড়ে। আর সজ্জিত করেছেন আঙ্গুর, যয়তুন ও ডালিমের বাগান সাজিয়ে দিয়েছেন, সেখানে ফলসমূহ পরস্পর স্বদৃশ, অথচ প্রত্যেকটির বৈশিষ্ট্য আবার ভিন্ন ভিন্ন। এই গাছগুলো যখন ফল ধারণ করে, তখন এদের ফল বের হওয়া ও তা পেকে যাওয়ার অবস্থাটা একটু সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখো।
 (সূরা আল আন'আম-৯৯)

Post a Comment

0 Comments