কোরআন শ্রবণে সতর্কতা অবলম্বন

        এ কোরআন যখন পাঠ করা হবে, তখন শ্রোতারা কিভাবে কোরআনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, এ সম্পর্কে আল্লাহর কোরআনে বলা হয়েছে-

وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَانْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ 

        যখন কোরআন তোমাদের সামনে পাঠ করা হয়, তখন তা খুবই মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো এবং নীরব থাকো, সম্ভবত তোমাদের প্রতিও রহমত অবতীর্ণ হবে। (আ'রাফ-২০৪) 

        মানব জাতির জন্য কোরআনের মোকাবেলায় শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর দ্বিতীয়টি নেই। এই কোরআন যারা অধ্যয়ন করে বুঝে অনুসরণ করবে, তারা পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। মুসলমানগণ নামাজে প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সত্য সহজ সরল পথ কামনা করে। আর মানুষের এ কামনার জবাবে আল্লাহ তা'য়ালা পরিপূর্ণ কোরআন তার সামনে পেশ করেন। সূরা ইয়াছিনে বলা হয়েছে-

وأَنِ اعْبُدُونِي - هذا صِرَاطٌ مُسْتَقيم

        আল্লাহর দাসত্ব করবে, এটাই সহজ সরল পথ। (সূরা ইয়াছিন)

        মুক্তির সোপানে পৌছে দেয় এই কোরআন। আল্লাহর কোরআন যেন মানুষ উপলব্ধি করতে সক্ষম না হয়, এ জন্য শয়তান তার মুরীদদের সাথে নিয়ে কোরআন শোনার পরিবেশ বিঘ্নিত করে। আল্লাহর কিতাব যাতে মানুষের কানে পৌঁছতে না পারে, শয়তান সে ব্যবস্থা করতে থাকে। এ গ্রন্থেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, শয়তান শুধু ইবলিসই নয়-মানুষের নফছু এক শয়তান, জ্বিন শয়তান ও মানুষের ভেতরেও শয়তান রয়েছে। এই চার ধরনের শয়তান একযোগে প্রচেষ্টা চালায় যেন কোরআন কোন মানুষ শুনতে না পারে। আল্লাহর এ কিতাব শোনা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে এসব শয়তান এক শ্রেণীর মানুষকে এভাবে ধোকা দিয়ে থাকে যে, 'কোরআন হলো আল্লাহর বাণী। আর আল্লাহর বাণী বড়ই জটিল, এটা বুঝতে হলে যে জ্ঞান ও যোগ্যতা প্রয়োজন-তা আমাদের নেই। অতএব সামান্য জ্ঞানের অধিকারী হয়ে কোরআন বুঝা যাবে না। অতএব কোরআনের কোন তাফসীর পড়াও যাবে না-করাও যাবেনা।'

        এভাবে শয়তান এক শ্রেণীর নামাজী লোকদেরকে কোরআন বুঝা থেকে দূরে রাখে। আরেক শ্রেণীর মানুষকে শয়তান এভাবে ধোকা দিয়ে থাকে, 'কোরআন হলো আরবী ভাষায় অবতীর্ণ একটি গ্রন্থ। এ গ্রন্থ অন্য কোন ভাষায় অনুবাদ করলেও এর সঠিক মর্মার্থ অপ্রকাশিতই থেকে যায়। সুতরাং পরিবর্তিত ভাষায় কোরআন অধ্যয়ন করে কোন লাভ নেই। আরবীতে তেলাওয়াত করলেই প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণ করার সাথে সাথে আমলনামায় দশ দশটি করে সওয়াব লেখা হতে থাকবে। অতএব আরবী ভাষার কোরআন আরবীতেই তেলাওয়াত করে সওয়াব অর্জন করতে হবে, অন্য ভাষায় তা পড়ার কোন প্রয়োজন নেই।' এভাবে শয়তান সওয়াবের লোভ দেখিয়ে মানুষকে দূরে রাখার চেষ্টা করে।

        শয়তান আবার এভাবে ধোকা দেয় যে, 'কোরআন হলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এ গ্রন্থ সুমধুর সুরে পাঠ করলে সওয়াব অর্জন করা যায়। শুনলেও সওয়াব হয়। নামাজে তা পাঠ করতে হবে। প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ আদায় করে তেলাওয়াত করলে সওয়াবে আমলনামা পরিপূর্ণ হবে। কিন্তু এ গ্রন্থ যে শিক্ষাদর্শ মানুষের সামনে পেশ করেছে, তা ঐ যুগে শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য ছিল, যখন তা অবতীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের যুগে পৃথিবীর সার্বিক অবস্থা বড়ই জটিল। এখানে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা অবস্থান করছে। কোরআনের বিধান এ অবস্থায় প্রয়োগ করতে গেলেই সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি হবে। ফলে পৃথিবীতে হানহানি সৃষ্টি হবে। সুতরাং, বর্তমানের এই জটিল অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করতে হলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অনুসারে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত করতে হবে। কোনক্রমেই রাজনীতির অপবিত্রতার অঙ্গনে কোরআনের ন্যায় পবিত্র গ্রন্থকে টেনে এনে অপবিত্র করতে দেয়া হবে না।'

        এভাবে শয়তান কোরআনে থেকে হেদায়াত লাভ করা থেকে মানুষকে বিরত রাখে। কোরআনের মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে অসংখ্য মানুষ তা শুনতে যায়। এ মাহফিল যেন অনুষ্ঠিত হতে না পারে, এ জন্য শয়তান তার অনুগতদের দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আবার শয়তান কোরআনের মাহফিলে মানুষ যেন যেতে না পারে, সে পথেও নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করে। যারা বাধাতিক্রম করে মাহফিলে যায়, তারাও যেন মনোযোগের সাথে কোরআন শুনতে না পারে, এমন অবস্থা তাদের ভেতরে সৃষ্টি করে দেয়।

        এ জন্য আল্লাহ তা'য়ালা সূরা আ'রাফে বলেছেন, আমার কোরআন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। যিনি তোমাদেরকে কোরআন শোনাচ্ছেন, তোমার পূর্ণ চেতনা একমাত্র তাঁর দিকেই নিবিষ্ট করে কোরআন শোনো। যখন আমার কিতাব থেকে তোমাদেরকে শোনানো হয়, তখন এমন পরিবেশের সৃষ্টি করো না, যাতে আমার বাণী অনুধাবন করতে কোন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। কোরআন অনুধাবন করে যারা সত্য পথ লাভ করেছে, আমার রহমত তাদের ওপরে বর্ষিত হচ্ছে। তুমিও কোরআন শুনে সত্য পথ লাভ করে আমার রহমতের অংশ নিতে পারো।

Post a Comment

0 Comments