কোরআন অধ্যয়নে সতর্কতা অবলম্বন

        এ কিতাব যিনি পাঠ করছেন, তিনি তা থেকে হেদায়াত লাভ করতে পারেন। সেই সাথে এর শ্রোতাদেরকেও বলা হচ্ছে, তোমরা তা শ্রদ্ধাভরে নীরবে শুনে তা থেকে হেদায়াত লাভ করার চেষ্টা করো। হেদায়াত লাভ করা আল্লাহর রহমত ব্যতীত সম্ভব নয়। সুতরাং নীরবে কোরআন শুনে আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত লাভ করার জন্য দোয়া করতে থাকো। এ কিতাব যিনি পাঠ করবেন তার ওপরে আদেশ দেয়া হচ্ছে-

وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلاً

        আর কোরআন থেমে থেমে পাঠ করো। (সূরা মুযজাম্মিল-৪)

         আল্লাহর কিতাবের অতি উচ্চ মর্যাদার কারণে তা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তেলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। ধীর গতিতে প্রতিটি শব্দ মুখে উচ্চারণ করতে হবে এবং বিরতি দেয়ার স্থানে বিরতি দিতে হবে। যেন এ কোরআনের অর্থ ও তাৎপর্য পরিপূর্ণভাবে তেলাওয়াতকারী অনুভব করতে পারে। তার বিষয়বস্তু হৃদয়পটে অঙ্কিত হয় এবং তা অনুসরণে উৎসাহ সৃষ্টি হয়। কোরআন তেলাওয়াতের সময় যেন শয়তান কোনভাবেই প্রতারণা করতে না পারে, সেদিকেও তেলাওয়াতকারী বান্দার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন-

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ 

        তারপর যখন তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করবে, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে। (সূরা আন্ নাহল-৯৮)

        কোরআন তেলাওয়াতের শুরুতেই আয়ুযুবিল্লাহিমিনাশ শাইতানির রাজিম মুখে উচ্চারণ করলেই হবে না, মনের মধ্যে কোরআন বুঝার ইচ্ছা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে, শয়তান যেন প্রতারণা করতে সক্ষম না হয়, কোরআনের ভুল অর্থ গ্রহণ করা না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এ কিতাবের প্রতিটি কথাকে কিতাবেরই আলোকে দেখতে হবে এবং নিজের মনগড়া মতবাদ বা অন্য কারো কাছ থেকে ধার করা চিন্তার মিশ্রণে কোরআনের শব্দাবলীর এমন কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা, যা আল্লাহর বক্তব্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পরিপন্থী। সেই সাথে তেলাওয়াতকারীর মনে এ চেতনা এবং উপলব্ধিও জাগ্রত রাখতে হবে যে, সে যেন কোরআন থেকে হেদায়াত লাভ করতে পারে এবং কোরআনের ভুল অর্থ গ্রহণ না করে, কেননা এ ব্যাপারে শয়তান তার পেছনে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছে।

        কোরআন যেন আল্লাহ প্রদত্ত অর্থে তেলাওয়াতকারী বুঝতে না পারে, এ জন্য শয়তান সবচেয়ে বেশী তৎপর। এ কারণে মানুষ যখনই এ কিতাবের দিকে ফিরে আসে তখনই শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করার এবং কোরআন থেকে পথনির্দেশনা লাভ থেকে বাধা দেয়ার এবং তাকে ভুল চিন্তার পথে পরিচালিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এ কারণে আল্লাহর কোরআন অধ্যয়নের সময় অধ্যয়নকারীকে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, যেন শয়তানের প্ররোচনা ও সুক্ষ্ম অনুপ্রবেশের কারণে সে হেদায়াতের উৎস কোরআনের কল্যাণকারিতা থেকে বঞ্চিত না হয়ে পড়ে। কারণ যে মানুষ আল্লাহর কিতাব থেকে সঠিক সত্য পথের সন্ধান লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে, সে পৃথিবীর কোন উৎস থেকেই আর সত্য পথের সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হবে না। শয়তানের প্রতারণার কারণে কোন ব্যক্তি যদি কোরআন অধ্যয়নের সময় বিভ্রান্ত হয়ে ভ্রষ্টতা ও প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে পড়ে, তাহলে পৃথিবীতে এমন কোন জ্ঞান নেই, যে জ্ঞান তাকে বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। 

        আল্লাহর এই কোরআন যে রূপে অবতীর্ণ হয়েছে, যে অর্থ প্রকাশ করেছে, যেদিকে মানুষকে নিতে চেয়েছে, এসব দিকে কেউ যদি যেতে আগ্রহী হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই শয়তানের প্রতারণা থেকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই কোরআন অবতীণ করেছেন এবং এর সংরক্ষণের দায়িত্বও তিনি স্বয়ং গ্রহণ করেছেন-এ কথা শয়তান জানার পরে সে এটা অনুভব করেছে, এই কোরআনকে কোনক্রমেই ধ্বংস করা যাবে না। অতএব কোরআন যখন ধ্বংস করা যাবে না তখন যারা কোরআন বুঝার চেষ্টা করবে তাদেরকে প্রতারিত করতে হবে। কোরআনের স্পষ্ট বক্তব্য যেন মানুষ অনুধাবন করতে সক্ষম না হয়, বিভ্রান্তির গোলক ধাঁধাঁয় যেন নিমজ্জিত হয়, এ ব্যাপারে শয়তান কোরআন অধ্যয়নকারীর প্রতি তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এ জন্য কোরআন বুঝার ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তে শয়তানের প্রতারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং সে পদ্ধতিও আল্লাহ তা'য়ালা অনুগ্রহ করে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। সূরা নাহলের ৯৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, শয়তানের প্রতারণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে এবং যে কথা বলে বান্দা আশ্রয় প্রার্থনা করবে সে কথাটি হলো-

أعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّحِيمِ

        অভিশপ্ত শয়তানের প্রতারণা থেকে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করছি।

Post a Comment

0 Comments