বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপরে যখন কোরআন অবতীর্ণ করা হয় তখন অবিশ্বাসীরা কোরআনের সত্যতার ব্যাপারে যতগুলো যুক্তি প্রদর্শন করতো, তার ভেতরে এই যুক্তিটি ছিল অত্যন্ত প্রবল যে, তুমি বলছো মানুষকে হেদায়াত করার জন্য অস্নাহ তোমার কাছে কোরআন অবতীর্ণ করে থাকেন। মানুষকে হেদায়াত করার আল্লাহর যদি এতই প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে তিনি কেন কোরআনকে পরিপূর্ণ আকারে একটি গ্রন্থের ন্যায় গ্রন্থবদ্ধ করে পাঠিয়ে দিচ্ছেন না? এভাবে বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে কেন অবতীর্ণ করছেন? তাহলে আল্লাহকে কি মানুষের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সময় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়? অথবা বিরোধিদেরকে যা শুনানো হবে এ সম্পর্কে চিন্তা করে কথা বলতে হয়?
আসলে তুমি যা বলছো, এসব আল্লাহর বাণী মোটেও নয়। যদি এটা আল্লাহর বাণীই হতো,, তাহলে তিনি পরিপূর্ণ একটি গ্রন্থ প্রেরণ করতেন। তুমি যেভাবেই সক্ষম হয়ে থাকো না কেন, সময় নিয়ে সাধনা করে স্বয়ং তুমি অথবা তোমার কোন অদৃশ্য সহযোগী এ কোরআন রচনা করে আমাদেরকে শুনাচ্ছো। অবিশ্বাসীদের এসব অবান্তর কথার জবাব এবং সন্দেহ-সংশয়ের অবসান ঘটানোর জন্য সূরা বনী ইসরাঈলের ১০৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন-
وَقُرْأْنًا فَرَقْنَهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَى مُكْثٍ وَنَزَّلْنَهُ تَنْزِيلاً
আর কোরআনকে আমি সামান্য সামান্য করে অবতীর্ণ করেছি। যেন তুমি বিরতি দিয়ে তা মানুষদেরকে শুনিয়ে দাও এবং তাকে আমি (বিভিন্ন সময়) পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ করেছি। ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠী আল্লাহর রাসূলকে অভিযুক্ত করতো যে, স্বয়ং তিনি এ কোরআন রচনা করেছেন। তাদের এ ভিত্তিহীন কথার জবাবও আল্লাহ তা'য়ালা সূরা আদ দাহারের ২৩ আয়াতে এভাবে দিয়েছেন-
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ تَنْزِيلاً
হে নবী! আমিই তোমার প্রতি এ কোরআন অল্প অল্প করে অবতীর্ণ করেছি।
কোরআনের সত্যতার ব্যাপারে তারা প্রশ্ন তুলে বলতো, যদি এটা আল্লাহর কিতাবই হয়ে থাকে, তাহলে সমগ্র কিতাবটি একই সময়ে কেন অবতীর্ণ হচ্ছে না? নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি চিন্তা-গবেষণা করে অথবা অন্য কারো কাছ থেকে জেনে নিয়ে এবং নানা ধরনের গ্রন্থ থেকে নকল করে এনে আমাদেরকে তা শুনাচ্ছে। আল্লাহ মানুষকে বর্তমান ও ভবিষ্যতে কি বলবেন, তা তো তিনি অবগত আছেন। এটা যদি আল্লাহর বাণী হতো, তাহলে তিনি তা একত্রে অবতীর্ণ করতেন। এই যে চিন্তা-ভাবনা করে বিরতি দিয়ে নতুন নতুন বিষয় আমাদের সামনে পরিবেশন করা হচ্ছে-এটাই হলো বড় প্রমাণ যে এটা আল্লাহর বাণী নয়। তাঁর ওপরে কোন ওহী আসছে না। তিনি স্বয়ং রচনা করছেন অথবা কেউ তাকে সরবরাহ করছে। মূর্খতা ও অজ্ঞতাপ্রসূত এসব কথার জবাবে আল্লাহ বলেন-
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَولا نُزِلَ عَلَيْهِ الْقُرْآنُ جُمْلَةً وَاحِدَةٌ كَذَالِكَ لِنُقَبتَ بِهِ فُؤَادَكَ وَرَتِّلْتُهُ تَرْتِيلا
অস্বীকারকারীরা বলে, 'এ ব্যক্তির কাছে সমগ্র কোরআন একত্রে কেন অবতীর্ণ করা হলো না?' হ্যাঁ, এমন করা হয়েছে এ জন্য যে, যেন আমি একে ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে দিতে থাকি এবং (এ লক্ষ্যে) একে একটি বিশেষ ক্রমধারানুযায়ী পৃথক পৃথক অংশে সজ্জিত করেছি।
(সূরা আল ফুরকান-৩২)
এ কথা মনে রাখতে হবে, নবী ছিলেন স্বয়ং নিরক্ষর। যাদের ভেতরে কোরআন অবতীর্ণ হলো তারাও ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন জনগোষ্ঠী। নিরক্ষর এই জনগোষ্ঠীকে দিয়েই আল্লাহ পৃথিবীর ইতিহাসে অতুলনীয় বিরাট একটি আদর্শিক বিপ্লব ঘটিয়ে ছিলেন যে বিপ্লবের প্রভাব কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। এই নিরক্ষর মানুষগুলোই পৃথিবীর পরিবেশ পরিবর্তন করে দিয়েছিল এবং নেতৃত্ব ছিল তাঁদেরই হাতে। আর কোরআন দিয়ে তাঁরা তা সম্ভব করেছিলেন। সুতরাং নিরক্ষর সেই মানুষগুলোর মাধ্যমে নিকট ভবিষ্যতে যে কিতাব দিয়ে বিপ্লব ঘটানো হবে, সেই কিতাব একত্রে তাঁদের কাছে প্রেরণ করা হলে, তাঁরা তা স্মৃতির কোষাগারে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হতেন না। স্মৃতির ভান্ডারে আল্লাহর কোরআন যেন হুবহু সংরক্ষিত হয়, এ জন্য তা বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ করা হয়েছে।
বর্তমান যুগের ন্যায় সে যুগে প্রচার, প্রসার ও সংরক্ষণের কোন আধুনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল না। বর্তমানের কোন আন্দোলনের দিক নির্দেশনা আন্দোলনের কর্মীদের কাছে লিখিত আকারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সে যুগে কোন নির্দেশ পৌঁছানো হতো মৌখিক আকারে। যে লোকগুলোকে বাছাই করে সর্বাত্মক বিপ্লব ঘটানোর উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছিলো, তাদের সামনে একত্রে আদর্শ পেশ করা কোন ক্রমেই যুক্তিযুক্ত ছিল না। এ জন্য পূর্বে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তা অন্তরে ধারণ ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করিয়ে এবং আন্দোলনের কর্মীদের তা পালনের অভ্যাসে পরিণত করিয়ে পরবর্তী নির্দেশনামা অবতীর্ণ করা হচ্ছিলো। এ পদ্ধতিকেই বর্তমানে বলা হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং তখন তাই অবলম্বন করা হয়েছিল।
যে কোন আদর্শের ওপরে কোন ব্যক্তি অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করলে তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন হয়। রাতারাতি কোন ব্যক্তির চরিত্রে আমূল পরিবর্তন যেমন ঘটানো যায় না এবং তা কোনক্রমে সম্ভবও নয়। যাঁদেরকে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে কোরআন দিয়ে গড়া হচ্ছিলো এবং সমগ্র মানব জাতির সর্বকালের শিক্ষক হিসাবে যাদেরকে নির্বাচিত করা হয়েছিল, সেই সাহাবায়ে কেরামও মানুষ ছিলেন। তাঁরা কোন সমাজের ছিলেন এবং সে সমাজ কোন স্তরে অবস্থান করছিল, ইতিহাসের পাঠক মাত্রই তা অবগত রয়েছেন। সেই মানুষগুলোকে পরিপূর্ণভাবে গড়া একদিনে সম্ভব ছিল না একং তাঁরা যেন কোরআনের শিক্ষাসমূহ ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হন, এ জন্য অল্প অল্প করে কোরআন অবতীর্ণ করে তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিলো।
আল্লাহর কোরআন মানুষের রচনা করা শোষণমূলক কোন আদর্শের মতো মানব জাতির ওপরে সমগ্র শক্তিতে একই সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে না। এ কোরআন সর্বপ্রথমে মানুষের চিন্তার জগতে সর্বাত্মক বিপ্লব সংঘটিত করে। আর এ বিপ্লবও একদিনে সংঘটিত হয় না। তা পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে হতে থাকে। কেননা মানুষের চিন্তা-চেতনা নামক জগতের গঠন প্রণালী অত্যন্ত জটিল এবং বিচিত্র ধরনের। শক্তি প্রয়োগ করে মানুষের চিন্তাধারা ও বিশ্বাসবোধের পরির্তন সাধন করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। এ জন্য কোরআন যে জীবন পদ্ধতি পেশ করে, তার ওপরে মানুষের মন স্থির করার প্রয়োজন ছিল। এ জন্য নির্দেশ ও বিধানসমূহ পর্যায়ক্রমে অবর্তীর্ণ করাটাই ছিল বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতি। কোরআন সে পদ্ধতিতেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ পদ্ধতি অবলম্বন না করে যদি সমস্ত আইন-কানুন এবং গোটা জীবন ব্যবস্থা একত্রে মানুষের সামনে পেশ করে তা প্রতিষ্ঠিত করার ও অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হতো, তাহলে মানুষের ভেতরে যেমন বিদ্রোহের প্রবণতা দেখা দিত তেমনি তার চেতনার জগতে বিরাজ করতো এক মহাবিশৃংখলা।
আইন অনুসরণকারীদের জন্য সমস্ত বিধান তার ধারা-উপধারাসহ একত্রে পেশ করলে তা অনুসরণের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা দেবেই। এ জন্য প্রতিটি আইন উপযুক্ত পরিবেশে ও যথাসময়ে জারি করা প্রয়োজন। এভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয় এবং আইনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা অত্যন্ত সহজ হয় এবং এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্যই পবিত্র কোরআন দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে নানা পর্যায়ে অবতীর্ণ করা হয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন কোন ফুল শয্যার নাম নয়, এ পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়-কণ্টকাকীর্ণ। এ আন্দোলন 'সফল হওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় সীমাও নেই। এই আন্দোলনে যাঁরা জড়িত থাকেন, তাঁদেরকে অসীম ত্যাগ-তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়, অকল্পনীয় কোরবানী দিতে হয়। বিরোধী শক্তির সাথে তাঁদেরকে প্রতি পদক্ষেপে দ্বন্দু-সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ দান করতে হয়। আন্দোলন সফল হওয়ার সময়কাল পর্যন্ত এসব পরিস্থিতি শুধুমাত্র একবারই যদি সৃষ্টি হতো, তাহলে নেতা-কর্মীদের মনে সাহস সঞ্চার করার মতো উপদেশ, দৃষ্টান্ত, উৎসাহ-উদ্দীপনামূলক একটি কিতাব তাদের কাছে পেশ করলেই চলতো। পক্ষান্তরে, এই আন্দোলন করতে গিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যে ধরনের পরিস্থিতি পরিবেশের মোকাবেলা করতে হবে, তা সবই রাসূলের সেই তেইশ বছরে প্রকাশিত হয়েছিল-যে তেইশ বছর তিনি আন্দোলন করেছিলেন। এ জন্য দীর্ঘ তেইশ বছরব্যাপী এ কোরআন আল্লাহর নবীর ওপরে অবতীর্ণ হয়েছে।
আন্দোলনের কর্মীগণ যখন বিরোধী পক্ষের সাথে সংঘাতে জড়িত থাকে, তখন তাদের মনে সাহস সঞ্চার করা হয় আন্দোলনের পরিচালকদের পক্ষ থেকে। প্রথম অবস্থায় কর্মীগণ মনে করে সে প্রবল এক অপ্রতিদ্বন্দী শক্তির মোকাবেলা করছে। এ অবস্থায় যদি তাদের কাছে মাঝে মাঝে পথনির্দেশ আসতে থাকে তখন তাদের মনে এ ধারণা জাগ্রত থাকে যে, যাঁর নির্দেশে এবং সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করছে, তিনি নীরবে বসে না থেকে তাদের ওপরে সতর্ক দৃষ্টি রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা যে প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করছেন এবং তাদের সমস্যা ও সংকটে পথ প্রদর্শন করছেন। এ কাজে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে বলে বার বার ঘোষণা দান করছেন এবং তাদের সাথে অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক স্থাপন করবেন বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মনে বিপুল সাহস ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় এবং সংখ্যায় অতি অল্প হলেও তাঁদের শক্তি হয় অপ্রতিরোধ্য। তাঁরা তখন তাঁদের অভিধান থেকে 'পরাজয়' শব্দটি মুছে ফেলে।
রাসূলের সময়ও ঠিক একই ব্যাপার ঘটেছিল। সাহাবাগণ ময়দানে প্রতিটি মুহূর্তে জিহাদে লিপ্ত থেকেছেন, অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং অবশেষে নিজের প্রাণ পর্যন্ত দান করেছেন। এ সময়ে তাঁদের মন-মানসিকতা যেসব কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছে, আল্লাহ তা'য়ালা প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ওহীর মাধ্যমে তাই শুনিয়েছেন। আল্লাহ তা'য়ালা সূরা ফোরকানে বলেছেন, 'কোরআনকে একটি বিশেষ ক্রমধারানুযায়ী পৃথক পৃথক অংশে সজ্জিত করেছি।' কেন এমন করেছেন, সে জবাবও আল্লাহ দিয়েছেন-
وَلَا يَأْتُونَكَ بِمَثَلِ الأَجِئْتُكَ بِالْحَقِّ وَأَحْسَنَ تَفْسِيرًا -
আর (এর মধ্যে এ কল্যাণকর উদ্দেশ্যেও রয়েছে যে) যখনই তারা তোমার সামনে কোন অভিনব কথা (অথবা অদ্ভূত ধরনের প্রশ্ন) নিয়ে এসেছে তার সঠিক জবাব যথাসময়ে আমি তোমাকে দিয়েছি এবং সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছি। (সূরা ফোরকান-৩৩) কোরআন কেন পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ হয়েছে, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে উল্লেখিত আয়াতে বর্ণিত আরেকটি কারণ স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। এ কিতাব অবতীর্ণ করার কারণ এটা নয় যে, মানব জাতির জন্য জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ রচনা করবেন এবং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে গ্রন্থ প্রচারের লক্ষ্যে পৃথিবীতে নির্বাচিত করেছেন। প্রকৃত পক্ষে বিষয় যদি সেটাই হতো, তাহলে সম্পূর্ণ গ্রন্থটি প্রণয়ন শেষ করেই তা নবীর হাতে উঠিয়ে দেয়ার দাবী যুক্তিযুক্ত হতো। আসলে বিষয়টি সেটা নয়। প্রকৃত বিষয় হলো, আল্লাহ তা'য়ালা শিরক, কুফর, মূর্খতা, অজ্ঞতা, অন্যায়, অসত্য ইত্যাদির মোকাবেলায় ঈমান, ইসলাম, আনুগত্য ও আল্লাহভীতির একটি আন্দোলন পরিচালনা করতে চান এবং এ লক্ষ্যেই তিনি মানুষের ভেতর থেকে একজন সর্বোৎকৃষ্ট মানুষকে নির্বাচিত করে তাঁকে নবুয়্যত দিয়ে আন্দোলনের আহ্বায়ক ও নেতা হিসাবে মানুষের সামনে প্রকাশ করেছেন।
আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামী আন্দোলনের নেতা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা নিজের দায়িত্বে গ্রহণ করেছেন এবং আন্দোলন বিরোধিরা যখনই কোন আপত্তি বা সন্দেহ অথবা জটিলতা সৃষ্টি করবে তখনই তিনি তা দূরীভূত করে দেবেন এবং শত্রুপক্ষ কোন কথার ভুল অর্থ করবে তখনই আল্লাহ তার সঠিক ব্যাখ্যা জানিয়ে দেবেন। নবীর দীর্ঘ তেইশ বছরের আন্দোলনের জীবনে এ ধরনের অসংখ্য বিচিত্র পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে আর এসব অবস্থার মোকাবেলার জন্য যেসব ভাষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর সমষ্টির নামই হলো আল কোরআন। কোরআন একটি বৈপ্লবিক আন্দোলনের কিতাবের নাম। আর কোরআন প্রতিষ্ঠায় পদ্ধতিও কোরআনের স্বভাব ও প্রকৃতিতে বিদ্যমান। আর সে স্বভাব হলো, কোরআনের আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকে তার সূচনা করতে হবে। এ আন্দোলন সমাপ্তি পর্যন্ত যেভাবে অগ্রসর হতে থাকবে কোরআনও সাথে সাথে প্রয়োজন অনুসারে দিক নির্দেশনা দিতে থাকবে।
0 Comments