হজ্জ্ব আদায়ের তিনটি রীতি:
(১) এফরাদ হজ্জ: এ রীতিই সর্বোত্তম। এটা এরূপ যে, শুধু হজ্জ্বের নিয়তে এহরাম বেঁধে আবশ্যকীয় কাজগুলো সমাধা করে হরমের বাইরে গিয়ে পুনঃ ওমরাহর জন্য এহরাম বাঁধতে হয়। ওমরাহর এহরাম বাঁধার জন্য সর্বোত্তম মীকাত হল, জায়ারানাহ, তারপর তানয়ীম, তারপর হোদায়বিয়াহ। এভাবে এফরাদ হজ্জ্বকারীদের প্রতি কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে নফল কুরবানী করতে পারে।
(২) কেরান হজ্জ্ব : হজ্জ্ব এবং ওমরাহর এহরাম একসাথে বাঁধলে তাকে কেরান হজ্জ্ব বলা হয়। এরূপ ব্যক্তির হজ্জ্বের ক্রিয়া কর্ম দ্বারাই ওমরাহর কাজকর্মও আদায় হয়ে যায়। যেমন গোসলের দ্বারা অজুও আদায় হয়। গোসল করার পর আর অজু না করলেও চলে। তবে যদি তাওয়াফ এবং সায়ী আরাফাতে অবস্থানের পূর্বে করা হয়, তাহলে সায়ী তো হজ্জ্ব ও ওমরাহ দুটোরই হয়ে যাবে কিন্তু তাওয়াফ হজ্জ্বেরটা আদায় হবে না। কেননা হজ্জ্বের মধ্যে তাওয়াফের জন্য শর্ত হল অকুফে আরফার পরে আদায় করা। কেরান হজ্জ্ব আদায়কারীর জন্য একটি বকরী কুরবানী করা ওয়াজিব। তবে হজ্জ্ব আদায়কারী মক্কাবাসী হলে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। কারণ সে মীকাত অতিক্রম করেনি, তার মীকাত মক্কা মুয়ায্যম।।
(৩) তামাতু' হজ্ব: এ হজ্জ্বের রীতি হল, প্রথম মীকাত থেকে ওমরাহর এহরাম বাঁধতে হয়। তারপর মক্কায় এসে এহরাম বাঁধতে হয়। তারপর মক্কায় এসে এহরাম ভেঙ্গে হজ্জ্বের পূর্ব পর্যন্ত এহরামে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো সে ভোগ করবার অধিকারী হয়ে যাবে। তারপর আবার সে হজ্জ্বের জন্য এহরাম বাঁধবে।
তামাতু' হজ্জ্বের জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। যথাঃ (১) তামাত্তু'কারীর বাসস্থান এবং মসজিদে হারামের মধ্যে শরীয়ত সম্মত সফরের দূরত্ব না থাকা (২) হজ্জ্বের পূর্বে ওমরাহ করা (৩) হজ্জ্বের মাস সমূহের মধ্যেই ওমরাহ করা (৪) হজ্জ্বের এহরাম বাঁধার জন্য মীকাত পরিমাণ দূরে ফিরে না যাওয়া (৫) একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ ও ওমরাহ হওয়া। তামাকু' হজ্ব আদায়কারীর পক্ষ থেকে একটি বকরী কুরবানী করা ওয়াজিব। এতে কোন কারণ বশতঃ মাথুর হলে দশই যিলহজ্জ্বের পূর্ব পর্যন্ত সে তিনটি রোযা রাখবে। হজ্জ্বের সময়ে ঐ রোযাত্রয় না রাখলে দেশে ফিরে এসে লাগাতর ভাবে বা পৃথক পৃথকভাবে দশটি রোযা রাখবে।উল্লিখিত তিন প্রকার হজ্জ্বের মধ্যে সর্বোত্তম এফরাদ, তারপর তামাতু' তারপর কেরান।
হজ্জ্ব ও ওমরায় ছয়টি নিষিদ্ধ বিষয়ঃ (১) জামা, পায়জামা মোজা ও পাগড়ী পরিধান করা। তবে সিলাই না করা লুঙ্গি, চাদর এবং কাষ্ঠের পাদুকা পরিধানে বাধা নেই। লুঙ্গির অভাবে পায়জামা পরা যায়। মাথা আবৃত করবে না। (টুপী ব্যবহার করাও এর মধ্যে শামিল) কেননা পুরুষের এহরাম মাথার অন্তর্ভুক্ত। স্ত্রীলোকেরা সিলাই করা কাপড় পরতে পারে কিন্তু মুখ খোলা রাখবে। কেননা স্ত্রীলোকের এহরাম তার মুখের অন্তর্গত।
(২) সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা। সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করলে এবং কাল পোশাক পরলে একটি বকরী কুরবানী করতে হবে।
(৩) চুল মুত্তন করা, কর্তন করা ও নখ কর্তন করা। এগুলো করলেও একটি বকরী কুরবানী করতে হবে। অবশ্য সুর্মা ব্যবহার করা, চুলে চিরনী করা বা সিঙ্গা লওয়াতে কোন বাধা নেই।
(৪) স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা। এটা মাথা মুণ্ডন এবং কুরবানীর আগে করলে হজ্জ্ব বাতিল হয়ে যাবে এবং উষ্ট্র, গরু অথবা সাতটি বকরী যবেহ করা অত্যাবশ্যক হবে। তবে কুরবানী ও মাথা মুণ্ডনের পরে করলে হজ্ব বাতিল হবে না কিন্তু কুরবানী ওয়াজিব হবে।
(৫) স্বামী-স্ত্রী চুম্বন, আলিঙ্গন এবং এমনি ভাবের স্পর্শন যে, মজি নির্গত হয়ে যায়, তা' নিষিদ্ধ। এতে একটি বকরী কুরবানী করা আবশ্যক হবে। (৬) যে কোন স্থলচর হালাল জন্তু, যার গোশত খাওয়া যায়, তা' শিকার করা। এটা নিষিদ্ধ।
তা' শিকার করলে অনুরূপ কোন চতুষ্পদ জন্তু কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। তবে জলচর কোন জন্তু শিকার করলে কুরবানী করা প্রয়োজন হবে না।
0 Comments