হজ্জ্বের শর্তাবলী কি কি

        হজ্জ্বের শর্তাবলী

উল্লেখ্য যে, হজ্জ্ব শুদ্ধ ও জায়েয হওয়ার শর্ত দুটো। একটি হলো, হজ্জ্বের ওয়াক্ত হওয়া আর দ্বিতীয়টি হলো মুসলমান হওয়া; সুতরাং কোন শিশু হজ্জ্ব করলে তা' শুদ্ধ ও জায়েয হবে যদি সে ভাল-মন্দ কিছু বুঝতে পারে, তবে নিজের এহরাম নিজেই বাঁধবে। আর যদি তা' না বুঝতে পারে, তবে তার পক্ষ থেকে অলী তার এহরাম বাঁধবে এবং হজ্জ্বের সমস্ত কাজ-কর্মগুলো যেমন তাওয়াফ, সায়ী প্রভৃতি সব করিয়ে দেবে। হজ্জ্বের সময় শাওয়াল মাস থেকে শুরু করে যিলহজ্ব মাসের দশম তারিখের রাত্রি অর্থাৎ কুরবানীর দিনের ছোবহে ছাদিক পর্যন্ত। অতএব যদি কেউ এ সময় ব্যতীত অন্য যে কোন সময় এহরাম বাঁধে তবে তার হজ্জ্ব আদায় হবে না, অবশ্য ওমরাহ আদায় হবে। জেনে রাখবে, ওমরাহর সময় সারা বছর।

        হজ্জ্বের শর্ত পাঁচটিঃ (১) মুসলমান হওয়া, (২) আযাদ হওয়া, (৩) বালেগ হওয়া, (৪) জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান হওয়া এবং (৫) হজ্ব করার সামর্থ্য থাকা। সুতরাং যদি কোন নাবালেগ বালেগ হয়ে যায় ও গোলাম এহরাম বাঁধে এবং আরফার দিনে নাবালেগ বালেগ হয়ে যায় ও গোলাম মুক্ত হয়ে যায় অথবা মুযদালেফায় এরূপ হয় আর ছোবহে ছাদেকের পূর্বে আরাফাতে চলে যায় তবে তাদের সেই হজ্জ্ব দ্বারাই ফরজ হজ্জ্ব আদায় হয়ে যাবে। এর কারণ হল, আরাফাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করাই প্রকৃতপক্ষে হজ্জ্ব আর সেটা বালেগ এবং মুক্ত অবস্থায়ই আদায় হয়েছে। হজ্জ্ব নফল হওয়ার জন্য যে কোন বালেগ ব্যক্তির ঐ হজ্জ্বের পূর্বে ফরজ হজ্জ্ব আদায় করা শর্ত। কেননা, সর্বাগ্রে হল ফরজ হজ্ব। তারপর কোন কারণ বশতঃ হজ্জ্বের কাজা প্রয়োজন হলে কাজা হজ্ব। তারপর মানত করা হলে মানতের হজ্ব। তারপর অপরের পক্ষ থেকে নায়েবী হজ্জ্ব এবং সর্বশেষে নফল হজ্জ। এ হলো হজ্জ্বের স্তর পরিচিতি। এই ক্রম বা স্তরের প্রতি লক্ষ্য রাখা বিশেষ জরুরী। এই ক্রম-পর্যায়ের বিপরীত নিয়ত করলেও এই ক্রমানুসারেই হজ্জ্ব আদায় হবে। অর্থাৎ কারও উপর হজ্জ্ব ফরজ থাকাকালে যদি সে মানতের নিয়তে অথবা কারো পক্ষ থেকে হজ্জ্বের নাযেব হয়ে হজ্জ্বের নিয়ত বাঁধে, তবে তা' ধর্তব্য হবে না; বরং তার নিজের ফরজ হজ্জ্ব আদায় হয়ে যাবে।

        হজ্জের সামর্থ্য থাকার অর্থ হল, প্রথমঃ হজ্জ আদায়কারীকে সুস্থ ও নীরোগ হতে হবে। দ্বিতীয়ঃ পথিমধ্যে যে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস সংগে থাকা চাই তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া জলপথে, আকাশপথে বা শূণ্যপথে কোনরূপ আশঙ্কা বা ভয়-ভীতি না থাকতে হবে। তৃতীয়ঃহজ্জে গমন করা ও হজ্জ সমাধা করে দেশে প্রত্যাবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মৌজুদ থাকতে হবে। তাছাড়া সে যাদের ভরন-পোষনের যিম্মাদার তাদের খবর-পত্রও তার ফিরে সময় পর্যন পর্যন্ত মৌজুদ রাখতে হতে হবে আসার সম বে। কোন বিকলাঙ্গ ব্যক্তির জন্য সামর্থ্যের অর্থ, এই পরিমাণ অর্থ থাক কা যদ্বারা সে নিজের পক্ষ থেকে থকে অন্য কোন ব্যক্তিকে হজ্জ করতে পাঠাতে পারে। তবে যাকে পাঠাবে সে প্রথমে তার নিজের জর ফরজ হজ্জ আদায় করবে। তার পর বছর সে বিকলাঙ্গের পক্ষ থে থেকে হজ্জ করতে যাবে। উল্লিখিত শর্তানুযায়ী যার হজ্জের সামর্থ্য উপস্থিত হয়ে যায়, সাথে সাথে তার উপর হজ্জ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। অবশ্য বিলম্বেও হজ্জ করা জায়েয হবে। কিন্তু তাতে হজ্জ আদায় করতে না পারার আশঙ্কা বর্তমান। (কেননা, মৃত্যু বা অন্য যে কোন রকমের ওজর আপত্তি বা আলস্য অবহেলার সম্ভাবনা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই রয়েছে) হজ্জ ফরজ হয়ে গেলে জীবনের শেষ মুহূর্তেও যদি হজ্জ আদায় করে তবে তার হজ্জ আদায় হবে। যদি হজ্জ ফরজ হওয়ার পর আদায়ের পূর্বে কারও মৃত্যু হয়ে যায়, তবে সে হজ্জের যিম্মা মাথায় নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে। তার ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে হজ্জ করানো প্রয়োজন হবে। যদিও সে, এজন্য কাউকে অছীয়ত না করে যায়। মানুষের কর্জ বা ঋণের অবস্থাটাও ঠিক একই রূপ। মৃত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের জন্য কাউকে অছীয়ত করুক বা না করুক তার ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে প্রথমেই তার ঋণ আদায় করতে হবে। যদি কারও উপর কোনবছর সমস্ত শর্তাদির দৃষ্টিতে হজ্জ ফরজ হয়ে যায় কিন্তু সে সে বছর হজ্জ আদায় না করে, তারপর হজ্জের সময় আসার পূর্বেই যদি তার ধন-সম্পদ হাত থেকে চলে যায় এবং অন্যান্য শর্তাদিও বর্তমান না থাকে, আর এমনি অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তবে তাকে হজ্জ্বের জন্য পাকড়াও হতে হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি হজ্জের যাবতীয় শর্তাদি বলবৎ এবং আর্থিক সামর্থ্য বজায় থাকা সত্ত্বেও হজ্ব আদায় না করে মারা যায় সে ব্যক্তি গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হবে।

        হযরত ওমর (রাঃ) বলেছিলেন যে, আমি প্রত্যেক শহরে এইরূপ এলান করে দিতে চাই যে, যে ব্যক্তি হজ্জ্বের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ আদায় করে না আমি তার উপর জিখিয়া কর চাপিয়ে দেব। সাঈদ ইবনে জোবায়ের, ইব্রাহীম নাখয়ী, মুজাহিদ এবং তাউস (রহঃ) প্রমুখ ব্যক্তিদের থেকে বর্ণিত আছে, তারা বলেছিলেন, আমরা যদি জানতে পারি যে, কোন ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ ছিল কিন্তু সে হজ্জ করার পূর্বেই মারা গেছে তবে আমরা তার জানাযার নামায আদায় করব না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি যাকাত না দিয়ে এবং হজ্জ আদায় না করে মৃত্যুবরণ করে, সে আবার দুনিয়ায় ফিরে আসার জন্য আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করতে থাকে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই কথা বলে পবিত্র কুরআনের অত্র আয়াত পাঠ করলেন:

        রাব্বিরজিউনী লাআল্লী আ'মালা আমালান ছালিহান ফী মা তারাকতু। 

        অর্থাৎ হে মাবুদ। তুমি আমাকে দুনিয়ায় আবার পাঠিয়ে দাও যাতে আমি নেক আমলসমূহ । অত্র আয়াতে নেক আমল দ্বারা হজ্জ্বের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

        সম্পাদন করতে পারি হজ্জ্বের আরকান পাঁচটি: এ আরকানগুলো ব্যতীত হজ্জ্ব শুদ্ধ হয় না। এগুলো হচ্ছে, (১) এহরাম ধাঁধা (২) তাওয়াফ করা (৩) ছাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ে সায়ী (দৌড়াদৌড়ি) করা (৪) আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা আর (অন্য এক বর্ণনানুযায়ী) (৫) কেশ মুণ্ডন করা(পুরুষের জন্য)। ওমরাহর আরকানও এগুলোই, তবে ওমরাহর মধ্যে আরাফাতে অবস্থান করতে হয় না। হজ্জ্বের ওয়াজিব সমূহ: হজ্জ্বের মধ্যে ছয়টি ওয়াজিব রয়েছে। এগুলোর কোনটা বাকী থেকেগেলে কুরবানী করে তার কাফফারাহ (ক্ষতিপূরণ করতে হয়। ওয়াজিবগুলো এইঃ (১) মীকাত (এহরামের জন্য নির্দিষ্ট স্থান) থেকে এহরাম বাঁধা। যদি কেউ এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে, তবে তার জন্য একটি বকরী যবেহ করা প্রয়োজন হবে। (২) কংকর নিক্ষেপ করা। এটা বাকী থাকলে সব রেওয়ায়েত মুতাবেক কুরবানী করা অপরিহার্য হবে। (৩) সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা (৪) রাত্রে মুজদালেফায় যাওয়া (৫) রাত্রে মিনায় অবস্থান করা এবং (৬) বিদায়কালে খানায় কা'বা তাওয়াফ করা। শেষোক্ত চারটি কাজ না করলে বকরী কুরবানী করা ওয়াজিব হবে না বরং সুন্নত হবে।

Post a Comment

0 Comments