মদীনা মুনাওয়ারাহর ফজীলত কেমন ?


মদীনা মুনাওয়ারাহর ফজীলতঃ 

        মক্কার পরে দুনিয়ায় আর কোন শহরই হুযুরে পাকের (দঃ) শহর মদীনা মুনাওয়ারাহ থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। এখানেও নেক আমল ও বদ আমল দুটোই দ্বিগুণ হর। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, আমার এই মসজিদে এক নামায হারাম ব্যতীত দুনিয়ার অন্য যে কোন মসাজদে এক হাজার নামায অপেক্ষাও মক্কার মসজিদে উত্তম। অনুরূপ কারে মদীনায় প্রত্যেকটি নেক আমল অন্যত্র হাজার নেক আমল সমতুল্য। মর্তবায় মদীনার পরবর্তী স্থান বায়তুল মুকাদ্দাস। সে মসজিদে এক নামায পাঁচশ নামাযের সমতুল তুল্য। আমলের ব্যাপারও ঠিক একইরূপ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, মদীনার মসজিদে এক নামায দশ হাজার নামাযের তুল্য। আর বায়তুল মুকাদ্দাসে এক হাজার নামায তুল্য। হুযুরে পাক (দঃ) আরও বলেন যে, যে ব্যক্তি মদীনার কষ্টবরণ করে নেবে, রোজ কিয়ামতে আমি তার সুপারিশকারী হয়ে যাব। আরও এরশাদ হয়েছে, কেউ মদীনায় যদি মৃত্যুবরণ করতে পারে তবে তা' তার জন্য নেক নছীবের কথা হবে। কেননা, মদীনায় মৃত্যুবরণকারীর জন্য আমি সুপারিশ করব। উল্লিখিত তিনটি স্থান ব্যতীত একমাত্র জিহাদের ব্যুহ ছাড়া অন্য যে কোন স্থানের মর্যাদা সমান। এ কারণেই হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন, সফর করা অবান্তর শুধু তিন মসজিদ ব্যতীত। সে তিন মসজিদ হল, মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থাৎ মসজিদুল আকছা। কোন কোন আলিম এই হাদীসের প্রেক্ষিতেই যে কোন পবিত্র স্থান ও বুষর্গ অলী-আল্লাহদের রওজা যিয়ারাতের লক্ষ্যে সফর করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে, এই দলীলটি ঠিক নয়। কেননা, কবর যিয়ারাতের অনুমতি রয়েছে। হুযুরে পাক (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারাত করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন তা' করতে পার। মূলতঃ উপরোক্ত হাদীস মসজিদের মর্তবা সম্পর্কেই বর্ণিত হয়েছিল, মাযার সম্পর্কে নয়।কেননা, হাদীসের মর্মেই জানা গেল যে, উল্লিখিত তিনটি মসজিদ ছাড়া সব মসজিদেরই মর্তবা সমান। আর এমন কোন শহরই নেই যেখানে কোন মসজিদ পাওয়া যাবে না। অতএব স্থানীয় শহরের মসজিদ ছেড়ে অন্য কোন শহরের মসজিদে নামায পড়তে গমন করা নিরর্থক বৈ নয়। পক্ষান্তরে মাযারগুলো সব একই পর্যায়ের নয়। আল্লাহর দরবারে অলী-আল্লাহদের মর্তবা যেমন বিভিন্ন, ঠিক তদ্রূপ তাদের একেকজনের মাযার যিয়ারাতের বরকতও পৃথক পৃথক হবে। হাঁ তবে যদি কেউ এমন গ্রামে বা শহরে বাস করে যেখানে কোন মসজিদের অস্তিত্ব নেই, তবে তার জন্য মসজিদ আছে এমন গ্রামে বা শহরে সফর করা নিষিদ্ধ নয়। তারপর আমার জানা নেই যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এর মাযার যিয়ারাতে যাওয়া নিষেধ কিনা? মনে হয় তা' নিষিদ্ধ নয় এবং কেউই তাঁদের মাযার যিয়ারাত করতে যেতে বারণ করবে না। সুতরাং যখন তাদের মাযার যিয়ারাত করতে যাওয়া নিষিদ্ধ হবে না তখন বুযর্গ ও অলী-আল্লাহদের মাযার যিয়ারাত করতে যাওয়া নিষিদ্ধ বা নাজায়েয হবে।

        এত গেল সফরের কথা। এখন অবস্থানের কথা কিছু বলা হচ্ছে। সফরের উদ্দেশ্য যদি ইলম হাছিল করা না হয় তাহলে বান্দার জন্য গৃহে অবস্থান করাই শ্রেয়। তবে শর্ত এই যে, যদি তার হাল বা অবস্থা ঠিক থাকে। আর যদি অবস্থা নিরাপদ না থাকে তবে তখন জায়গা অন্বেষণ করবে, যেখানে সে তেমন পরিচিত নয় এবং তার ধর্মেরও নিরাপত্তা থাকবে, যেখানে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করা যায় এমন জায়গাই বান্দার জন্য সর্বোত্তম। এক হাদীসে এরশাদ হয়েছে, সব শহরই আল্লাহ তায়ালার এবং মানুষ সবই তাঁরই বান্দা। এমতাবস্থায় যে জায়গাটি তার জন্য সব দিক থেকে নিরাপদ মনে হবে সেখানেই তার অবস্থান করা চাই। আর সেখানে থেকে সেই নিরাপদ জায়গার জন্য সর্বদা আল্লাহর দরবারে শোকর করবে। আবু সাঈদ বলেন, আমি একদা হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) কে দেখলাম, তিনি পাথেয়ের থলেটি কাঁধে তুলে নিয়ে আর পানির সোৱাহিটি হাতে নিয়ে যেন কোথায় চলেছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে সুফিয়ান। কোথায় যেতে ইচ্ছে করেছেন? তিনি জবাব দিলেন, যাচ্ছি এমন জায়গায়, যেখানে এক দেরহাম দিয়ে আমার এ থলেটি ভর্তি করা যাবে। অন্য বর্ণনায় আছে যে. আমি এক গ্রামের কথা শুনেছি যেখানে সব দ্রব্য-সামগ্রী অত্যন্ত সুলভে পাওয়া যায়। তাই ভাবলাম সেখানেই গিয়ে অবস্থান করব। তোমাকেও বলছি, তুমিও সুলভ মূল্যে দ্রব্য কেনা যায় এমন। কোন স্থানের কথা শুনলে সেখানে চলে দাও। যাতে তোমার দ্বীনও দুরস্ত থাকবে এবং চিন্তা-ভাবনা থেকেও রেহাই পাবে। হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলতেন, এ যমানা বড়ই খারাপ। এখন অখ্যাত অপরিচিত ব্যক্তিরাও নিরাপত্তার আশা করতে পারে না। যারা বিখ্যাত ও সুপরিচিত তাদের ত কথাই নেই। এ যুগে মানুষ তার দ্বীনকে ফেতনার কবল থেকে বাঁচাবার জন্য হিজরত করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেছেন, সত্যি বলতে কি কোথায় যে অবস্থান করা নিরাপদ হবে তা' ভেবে উঠতে পারছি না। এরূপ কথা তিনি বললে লোকগণ তাঁকে বলল, হুযুর। আপনি খোরাসানেই থাকুন। তিনি বললেন, সেখানে নানা মাযহাব এবং মতবাদ প্রচলিত হয়ে গেছে। লোকগণ বলল, তবে সিরিয়ায় থাকুন না কেন? তিনি বললেন, সেখানে অল্পেই সুখ্যাতি হয়ে যায়। লোকগণ বলল, তবে ইরাকে থাকুন। তিনি বললেন, ইরাকযে জালিমের দেশ। তারপর লোকগণ বলল, তবে আপনি মক্কায় থাকুন। তিনি বললেন, না। তাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, মক্কায় মন ও শরীর জীর্ণ ও শীর্ণ হয়ে পড়ে। একবার জনৈক মুসাফির হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) কে বলল, হুযুর। আমি মক্কায় থাকতে চাই, আপনি আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন। তিনি বললেন, তবে শুন। (১) প্রথম কাতারে নামায পড়ো না। (২) কুরায়েশদের সংসর্গ এড়িয়ে চলো। আর (৩) প্রকাশ্যে দান-খয়রাত করো না। প্রথম কাতারে নামায পড়তে নিষেধ করার কারণ হল, এতে মানুষ খুব তাড়াতাড়িই পরিচিত এবং খ্যাত হয়ে যায়। সে যদি কোনদিন জামাতে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাকে তালাশ করা হয়। ফলে আসল জিনিসের সাথে নকল মিশে যাওয়ারই সম্ভাবনা হয়ে পড়ে।

Post a Comment

0 Comments