সুরা ফাতিহা তফসির ( Sura-fatiha-tafseer)

        

সুরার সানেনুজুল 

👉এই সুরাটির নাম সুরা আল ফাতিহা। কোন কিছু আরম্ভ করার নাম উদঘাটিকা করা কে ফাতিহা বলা হয়। কুরআন মাজীদে এই সুরা প্রথম লিখিত হয়েছে বলে একে সুরা আল ফাতিহা বলা হয়। তা ছাড়া নামাজের মধ্যে এর দ্বারা কিরাত আরম্ভ করা হয় বলে একে এই নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই সুরার আয়াত ৭ টি শব্দ ২৫ টি অক্ষর ১১৩ টি এটি মক্কা শরীফে নাযিল হয়েছিল।

সুরা আল-ফাতিহা অনন্য নাম সমূহ ঃ

ফাতিহাতুল: ফাতিহা অর্থ ভূমিকা বা শুরু। যেহেতু ইহার মাধ্যমে নামাজ শুরু করা হয় এবং যেহেতু কুরআন মযীদেরও শুরুতে ইহা লিখিত হয়েছে, তাই নবী (সা.) এটিকে ফাতিহাতুল কিতাব হিসেবে নামকরণ করেছেন।

উম্মুল কুরআন / উম্মুল কিতাব: সুরা ফাতিহা শুধুমাত্র একটি নাম নয় এই সুরা ২২ টি নাম আছে তফসিরে রূহুল মায়ানীতে এই সুরার ৪০ টি নাম আছে। এই সুরার অনেক ফজিলত বর্ণনা হয়েছে। কোরআনে একে উম্মুল কুরআন বলা হয়। উম্মুল মানে হল মা। পবিত্র কুরআনে পবিত্র মক্কা কে বলা হয় উম্মু কোরা বা গ্ৰাম সমূহের মা। সমস্ত পৃথিবীর বিভিন্ন গ্ৰাম থেকে মানুষ এখানে এসে জমা হয় তাই একে আরবীতে উম্মু বলা হয়। 

অনুরূপ ভাবে গোটা কুরআনের যা বর্ণনা করা হয়েছে তা সুরা ফাতিহা সাতটি আয়াতে কেন্দভূত করা হয়েছে এই কারণে সুরা ফাতিহা কে উম্মুল কেতাব বলা হয়। সমস্ত কুরআনে যা পাওয়া যায় সুরা ফাতিহা বিশ্লেষণ করলে তাই পাওয়া যায়। এই সুরার মানুষ আল্লাহর কাছে সহজ সরল পথ চাই। আল্লাহ তাআলা তার জন্য সমস্ত কুরআন সামনে দিয়েছেন। সত্য পথ চাও, কুরআন কে অনুসরণ কর।

সুরাতুল-রাসঃ 

এই সুরা আর এক নাম সুরা রাস আরবীতে রাস শব্দের অর্থ হল মগজ । মগজ হল মাথার কেন্দস্থল আর সমগ্র কুরআনের মগজ হল সুরা ফাতিহা। তাই এই সুরা কে সুরা-রাস বলা হয়।

সুরাতুল কানজঃ-

নিত্য বারবার পঠিত এই সুরার আর এক নাম সুরাতুল কানজ। কানজ অর্থ হল খনি। সুরা ফাতিহা কে কেন খনি বলা হল? খনি বলা হয় কারণ এই সুরায় আল্লাহ তাআলা ঞ্চান বিজ্ঞান দ্ধারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। মানুষ যদি কোন রকম ঞ্চান বিজ্ঞান জানতে আগ্রহী হন এই সুরার দিয়ে অঞ্জন করতে সক্ষম হবে। 

সুরা ওয়াফিয়াঃ-

এই সুরার আর এক নাম ওয়াফিয়া  । এর অর্থ পূর্ণাঙ্গ এটি খন্ডিত করে পাঠ করার কোন অবকাশ নেই। নামাজে অন্য সুরা খন্ডন করে পড়া যাই। কিন্তু এই সুরা পুণংগ ছাড়া পড়া যাই না ।

সুরাতুল হামদঃএই সুরার আর এক নাম সুরাতুল হামদ।অর্থ হল প্রসংসা । এই সুরায় আল্লাহ তাআলা প্রসংসা সব ছএে করা হয়। 

সুরাতুল দোওয়াঃ

এই সুরার নাম সুরাতুল দোওয়া। এই সুরায় আল্লাহ তাআলা কাছে বার বার দোওয়া করা হয় সহজ সরল পথে অগ্রসর হবার জন্য। 

এই সুরার আর এক নাম সুরাতুল সিফয়া।

আয়াতসমূহ ও অর্থ

আল-কুরআনুল আযীম: রাসূল (সা.) বলেন, এটি হচ্ছে বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত এব
আয়াতসমূহ ও অর্থঃ
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝‎
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।

  1. ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ ۝
    আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন।
    সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে।
  2. ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ۝
    আর রহমা-নির রহীম।
    অনন্ত দয়াময়, অতীব দয়ালু।
  3. مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ ۝
    মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।
    প্রতিফল দিবসের মালিক।
  4. إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ۝
    ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাছতা’ঈন।
    আমরা শুধু আপনারই দাসত্ব করি এবং শুধু আপনারই নিকট সাহায্য কামনা করি।
  5. ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ ۝
    ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।
    আমাদের সরল পথনির্দেশ দান করুন।
  6. صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ ۝
    সিরা-তাল্লাযীনা আন’আম তা’আলাইহিম।
    তাদের পথে, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন।
  7. غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص۝
    গাইরিল মাগদূ বি’আলাইহীম ওয়ালাদ্দাল্লীন। (আমিন )
    এবং তাদের পথে নয় যারা আপনার ক্রোধের শিকার ও পথভ্রষ্ট । ( কবুল করুন )

    সংক্মিপ্ত তফসিরঃ

সূরা ‘ফাতিহা’ ক্বুরআন মাজীদের সর্ব প্রথম সূরা। হাদীসসমূহে এই সূরার অনেক ফযীলতের কথা এসেছে। ‘ফাতিহা’র অর্থ শুরু ও আরম্ভ। এই জন্যেই এই সূরাকে ‘ফাতিহা’ অর্থাৎ ক্বুরআন গ্রন্থের ভূমিকা বলা হয়। এই সূরার আরো অনেক নাম হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, ‘উম্মুল ক্বুরআন’ (ক্বুরআনের মূল), ‘আস্সাবউল মাসানী’ (সাত আয়াতবিশিষ্ট বারবার পঠনীয় সূরা), ‘আল-ক্বুরআনুল আযীম’ (মহাক্বুরআন), ‘আশ্শিফা’ (রোগের প্রতিকার) এবং ‘রুক্ব্য়াহ’ (ঝাড়-ফুঁকের মন্ত্র) ইত্যাদি। ‘আস্স্বালাত’ (নামায)ও এই সূরার একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। যেমন হাদীসে ক্বুদসীতে এসেছে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘‘আমি ‘স্বালাত’ (নামায)-কে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছি।’’ (সহীহ মুসলিম-কিতাবুস্স্বালাত) এখানে ‘স্বালাত’ বলতে সূরা ‘ফাতিহা’কে বুঝানো হয়েছে। যার প্রথম ভাগে মহান আল্লাহর প্রশংসা-গুণগান, রহমত, প্রতিপালকত্ব এবং তাঁর সুবিচার ও সার্বভৌমত্বের মালিকানার কথা বর্ণিত হয়েছে। আর শেষভাগে রয়েছে দুআ ও মুনাজাত, যা বান্দা আল্লাহর নিকট করে থাকে। এই হাদীসে সূরা ফাতিহাকে ‘নামায’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, নামাযে তা (সূরা ফাতিহা) পড়া অত্যাবশ্যক।



আস্ সাবউল মাছানী: ফাতিহাতুল:যেহেতু নামাজের প্রতিটি রাকআতে এই সূরাটি বারবার পাঠ করা হয়, তাই এটিকে সাবউল মাছানী বলা হয়। উম্মুল কিতাব: উম্মুল কথার অর্থ মা ।যেহেতু এই সুরাই সমগ্র কুরআনের সারাংশ বিদ্যমান সমগ্র কুরআনে যা পাওয়া যায় তাই সুরা আল-ফাতিহা বিশ্লেস্ন করলে পাওয়া যায় রাসূল (সা.) এটিকে উম্মুল কিতাব হিসেবে নামকরণ করেছেন। উম্মুল কুরআন আর উম্মুল কিতাবের একই অর্থ।আল-কুরআনুল আযীম: রাসূল (সা.) বলেন, এটি হচ্ছে বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং
আল-কুরআনুল আযীম। সমস্ত কুরআনের মর্মার্থ যেহেতু সংক্ষেপে এতে বিদ্যমান রয়েছে, তাই এটিকে মহান কুরআন বলা হয়েছে।আল ওয়াফিয়া: সমস্ত কুরআনের অর্থ যেহেতু ইহাতে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তাই এটাকে ওয়াফিয়া বলা হয়েছে। সুফইয়ান বিন উয়াইনা এই নামে নামকরণ করেছেন।আল-কাফিয়া: নামাযে যেহেতু শুধু সূরা ফাতিহা পড়লে যথেষ্ট হয় আর এটা ছাড়া অন্য সূরা দিয়ে যেহেতু নামাজ পূর্ণ হয় না তাই এটাকে কাফিয়া বলা হয়।আল-আসাস: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীছে এই নামটি বর্ণিত হয়েছে।আল কাসাস মানে মূল।আশ্ শাফিয়া বা আশ্ শিফা: কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন, সূরা ফাতিহাতে রয়েছে প্রতিটি বিষাক্ত সাঁপ-বিচ্ছুর কামড়ের শিফা বা আরোগ্য।সূরাতুল হামদ্: যেহেতু এই সূরার প্রথমেই আলহামদ শব্দটি এসেছে,আর সমগ্র সুরাই আল্লাহর প্রসংসা ক্রা হয় তাই একে সূরাতুল হামদ বলা হয়।আস্ সালাহ: হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজকে বান্দা এবং আমার মাঝে দুইভাগে বিভক্ত করেছি। এখানে নামাজ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সূরা ফাতিহা।আর্ রুকইয়াহ: যেহেতু এই সূরা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়, তাই রাসূল (সা.) একে এই নামে নামকরণ করেছেন।সূরাতুস শুকর: কেননা এতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।দুআর সূরা: কেননা এতে রয়েছে আল্লাহর কাছে দুআ।সূরাতুস সুওয়াল: যেহেতু এই সূরায় বান্দার প্রার্থনা বিদ্যমান, তাই এই সূরাকে প্রার্থনার সূরা বলাপ্রার্থনার শিক্ষার কৌশল শিক্ষার সূরা: ইমাম সুয়ুতী বলেন, এতে প্রার্থনা করার আদব বর্ণিত হয়েছে।সূরাতুল মুনাজাত: কেননা বান্দা এতে আল্লাহর সাথে মুনাজাত করে থাকে।সূরাতু রাস: রাস শব্দের অথ মগজ।এই সুরাকে ৩০ পারার মগজ বলা হয়।এছাড়া সুরা ফাতিহা সূরাতুন নূর ও সূরাতুল কানজ নামেও পরিচিত।

Post a Comment

0 Comments